Views Bangladesh Logo

মন দুয়ারী- এক মিষ্টি প্রেমের গল্প

র্তমানে বাংলাদেশের নির্মাতারা অনেক ধরনের নাটক-সিনেমা বা ওটিটি কনটেন্ট বানাচ্ছেন; কিন্তু বেশিরভাগের গল্পই এক হলে কমেডি নয়তো থ্রিলার আঙ্গিকে তৈরি। অর্থাৎ জটিল-কঠিন গল্পে নাটক-সিনেমা বা ওটিটি কনটেন্টগুলো তৈরি হয়। যা বুঝতে অনেকটাই মাথা খাটাতে হয়। আর সবসময় মানুষের মন বা মস্তিষ্ক জটিল-কঠিন বিষয় নিতে চায় না বা পারে না। বিনোদন অর্থাৎ নাটক-সিনেমা দেখে যেহেতু মানুষ তার সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে চায় তাই সেগুলো হওয়া উচিত সহজ-সরল।

এমনই এক সহজ-সরল প্রেম, পরিবারিক বন্ধন আর হৃদয়স্পর্শী গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে জিয়াউল ফারুক অপূর্ব-নাজনীন নাহার নিহা অভিনীত নাটক ‘মন দুয়ারী’। নাটকটি নির্মাণ করেছেন জাকারিয়া শৌখিন। এমন সহজ-সরল গল্প পর্দায় এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যা দেখে যে কোনো দর্শক মুগ্ধ হবেন।

নাটকের গল্প শুরু হয় অমিতের (অপূর্ব) নিউইয়র্ক থেকে দেশে আসার মাধ্যমে। যে কিনা তার দাদিকে (দিলারা জামান) নিউইয়র্ক নিয়ে যেতে চায়; কিন্তু তাতে বাদ সাধে নন্দিনী (নিহা)। সে কিছুতেই দিলারা জামানকে বিদেশ যেতে দিবে না। বলে রাখা ভালো নাটকে অপূর্ব ও নিহা একে অপরের দূর সম্পর্কের ভাই-বোন। তো দিলারা জামানের এই বিদেশ যাওয়া নিয়েই অমিত এবং নন্দিনীর মাঝে চলতে থাকে খুনসুটি। কখনো অমিতকে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়া বা মঞ্জুলিকা সেজে ভূতের ভয় দেখানোর মাধ্যমে চলতে থাকে নন্দিনীর নানা দুষ্টমি। এর মধ্যেই আবার একদিন অমিতের তার বাবাকে নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় দিলারা জামানের সঙ্গে।


অমিতের বাবা অমিত ছোট থাকতেই তার পরিবারের সবাইকে গ্রামের বাড়িতে রেখে বিদেশে চলে যায় এবং আর কখনো দেশে ফেরত আসে না। যার কারণে দিলারা জামান ছেলের প্রতি অভিমান পুষে রাখে এবং ছেলেও সেই অভিমান এসে কখনো ভাঙায় না। তো এই কথা কাটাকাটির ফলে অমিত বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যায়; কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বাড়ি ফিরে এসে তার দাদির অভিমান ভাঙায়। এভাবেই নাটকের গল্প এগিয়ে যেতে থাকে।

অমিতকে দেশে রাখার জন্য দিলারা জামান মনে মনে নন্দিনীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে। এরপরই শুরু হয় নাটকের আসল গল্প। একদিন অমিতকে নিয়ে নন্দিনী তাদের গ্রাম রূপাদীঘি দেখতে বের হয়। পুরো গ্রাম তারা ঘুরে বেড়ায়। এর মধ্যেই তাদের মাঝে মনের আদান-প্রদান হয় যা তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না। একদিন নন্দিনী অমিতকে তার মনের এক গোপন ইচ্ছের কথা প্রকাশ করে। যদি কেউ তাকে এক বয়াম জোনাকিপোকা দিয়ে বলে তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি তাহলে নন্দিনী সারাজীবনের জন্য তার হয়ে যাবে। এই কথাটা নন্দিনী অমিতকে উদ্দেশ্য করেই বলে; কিন্তু অমিত বুঝতে পারে না। উল্টো সে তার মনের ইচ্ছে যেন পূরণ হয় তার জন্য দোয়া করে। কিছুদিন পর অমিত বুঝতে পারে সেও ধীরে ধীরে নন্দিনীর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই নিয়ে সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ নিউইয়র্কে সে তার প্রেমিকা রেখে এসেছে। যদিও তার সঙ্গে রোজ নিয়ম করে ঝগড়া হয়।


তবু অমিত সিদ্ধান্ত নেয় সে নিউইয়র্ক ফিরে যাবে। এই কথা যখন নন্দিনীকে জানায় তখন সে অনেক ভেঙে পড়ে এবং অভিমান করে নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে ফেলে। অমিত চলে যাওয়ার দিন তার দাদির কাছে বিদায় নিতে যায়। অনেকটা টিপিক্যাল বাংলা সিনেমার মতো ছিল বিদায় নেয়ার দৃশ্যটা। যদিও দেখতে খারাপ লাগেনি। কারণ কেউ টিপিক্যাল বাংলা সিনেমার মতো অতিরঞ্জিত অভিনয় করেনি। বিদায় নেয়ার সময়ও নন্দিনী অমিতের সঙ্গে দেখা করতে আসে না। মন খারাপ করে অশ্রুভেজা চোখে অমিতও গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে; কিন্তু একটু পরেই নন্দিনীকে রাস্তায় তার জন্য অপেক্ষা করতে দেখে। একজন অপরজনের থেকে অনেকটা কষ্ট নিয়েই বিদায় নেয়।

কিন্তু ভালোবাসার মানুষের থেকে কী আর এত সহজে বিদায় নেয়া যায়! অমিত ঠিকই এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে আসে। আর নন্দিনীর বলা ইচ্ছেমতো এক বয়াম জোনাকিপোকা তার জানালার পাশে রেখে দেয় এবং তার দুই হাত ধরে নন্দিনীর স্বপ্নের রাজকুমারের মতো করে বলে ভালোবাসি খুব তোমাকে! এরপর পরিবারের সবার মান-অভিমান ভুলে একসঙ্গে মিলিত হওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় মিষ্টি এই প্রেমের গল্প।

এই নাটকে আমাদের চিরায়ত গ্রামবাংলার সৌন্দর্য অনেক সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যা বহুদিন অনেক নাটকে দেখা যায়নি। ক্ষেতের পাশ দিয়ে অমিত আর নন্দিনীর বাচ্চাদের মতো ছুটে যাওয়া দেখলে যে কেউ তার নিজের শৈশবে ফিরে যাবে। গ্রামের দৃশ্যগুলো অনেক সুন্দর করে নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ক্যামেরার কাজ ছিল অসাধারণ। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই যারা গ্রামের সৌন্দর্য দেখেনি, তারা এই নাটক দেখে সহজেই বুঝতে পারবে আমাদের গ্রামগুলো আসলেই ছবির মতো সুন্দর। আর নাটকে যৌথ পরিবারের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তাও অনেক ভালো করে দেখানো হয়েছে।

নাটকে দুটি গান ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি গানের কথাই সুন্দর। আর অপূর্ব তো রোমান্টিক অভিনয় করার ক্ষেত্রে সবসময়ই সেরা। এই নাটকেও তার ব্যতিক্রম নয়। কথা বলা, স্টাইল, শরীরের নানা অভিব্যক্তি এবং সর্বোপরি অভিনয় সবকিছুর ক্ষেত্রেই অপূর্ব নিজের সেরাটা দিয়েছেন। এক কথায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন। আর নিহা প্রথমবারের মতো অপূর্বের সঙ্গে অভিনয় করলেও তার অভিনয় ছিল চোখে পড়ার মতো। অপূর্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছে। তথাকথিত কোনো নায়িকার মতো ন্যাকামি করেনি অভিনয় করার ক্ষেত্রে। গ্রামীণ এক উচ্ছল, প্রাণবন্ত মেয়ের চরিত্রটি খুব সুন্দরভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলছে।

নাটক দেখার সময় দর্শকের কাছে নাটকের গল্প অনুমেয় হলেও তা দেখতে খারাপ লাগবে না। তার কারণ হলো অপূর্ব-নিহার অভিনয় আর ক্যামেরার অসাধারণ কাজ। নাটকের নামটিও যথার্থ হয়েছে। নিহা যেমন অপূর্বের মনের সব বন্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছে ঠিক তেমনি এই নাটক দর্শকদের মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছে।

তাই অবসর সময়ে বা অনেক ব্যস্ত সময় পার করার পর যে কেউ এই নাটক দেখে তার মন ভালো করতে পারেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ