Views Bangladesh Logo

মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রের অনিয়ম বন্ধে তদারকি জরুরি

দেশে ধারাবাহিকভাবে মাদকের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে যত্রতত্র গড়ে উঠছে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুমোদন না নিয়ে গড়ে ওঠা এসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের নামে মাদকাসক্তদের নির্যাতনের অভিযোগ আছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক কেন্দ্রই গড়ে তুলেছেন মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা। এমনকি কিছু নিরাময় কেন্দ্র ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের ব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত। ফলে ওই সব কেন্দ্রে সেবা গ্রহণরত রোগীদের স্বজনরা বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করলেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে মাদকের বিষাক্ত ছোবলে শেষ হয়ে যাচ্ছে দেশের তরুণ সমাজের বড় একটি অংশের তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা। ফলে বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়, যা দেশের জন্য উদ্বেগজনক।

মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র যেহেতু সমাজের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান সেহেতু তাদের বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তাদের প্রধান দায়িত্ব রোগীদের মাদকাসক্তি দূর করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা। সে লক্ষ্যে তারা কাজও করছে কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতা, বিশৃঙ্খলা ও কিছু অসৎ পুনর্বাসন কেন্দ্রের জন্য তা ম্লাণ হয়ে যাচ্ছে। দেখা গেছে, অধিকাংশ নিরাময়কেন্দ্র প্রতি বছর সরকারের অনুদান নিয়েও সেবার মান বাড়ায় না। তার জন্য ভুক্তভোগীদের যে দুর্ভোগ সেটি থেকেই যায়, যা কাম্য হতে পারে না।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় লাইসেন্স পাওয়া যত বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র আছে তার অধিকাংশের অবস্থা খুব নাজুক। এসবের কোথাও চলে প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা ও সেবন। কোথাও চিকিৎসার নামে টর্চার সেলে রেখে চলে শারীরিক নির্যাতন। কোথাও আবার যৌনতার ফাঁদ পেতে রোগী ও পরিবারের সদস্যদের করা হয় জিম্মি। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রোগীকে পিটিয়ে হত্যা করার মতো অভিযোগও আছে। মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক ও তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তদন্তেই উঠে এসেছে এমন অনেক অভিযোগ।

দেশে বিপুল সংখ্যক মাদকসেবীর বেশির ভাগই কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে ৩৭০টি। এ কেন্দ্রগুলোতে মোট শয্যা সংখ্যা ৫ হাজার। এর মধ্যে সরকারি কেন্দ্রের সংখ্যা ৪টি। সেখানে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব ২০০ জনকে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তাই সরকারিভাবে নিরাময় কেন্দ্র আরও বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

মাদকাসক্তি একটি বহুমাত্রিক জটিল সমস্যা। বিশ্বের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মাদকের আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হচ্ছে, যার কারণে দেশে মাদক আমদানির জন্য বিরাট অঙ্কের অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার মাদক কারবারিরা এই অবৈধ অর্থ নিরাপদ রাখতে দেশের বাইরে পাচার করছে। ফলে দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে সরকারও দেশ থেকে মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই জিরো টলারেন্সের ফলাফল এখনো সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এমতাবস্থায় নানা অভিযোগের মুখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিরাময় কেন্দ্রগুলোকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। তাদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। সেইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, সরকারের একার পক্ষে এর নিরসন সম্ভব নয়। সুতরাং সমাজ থেকে মাদকদ্রব্য উৎখাত এবং মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক আন্দোলন। তাই দেশ থেকে মাদকব্যাধি দূর করতে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ