Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ

প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তিই বেশি

Mahabur Rahman Mir

মাহাবুর রহমান মীর

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

রজায় কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগামী মাসের (জুন) শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসবে এই আসর। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় নামার আগে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে দলগুলো। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলেছে পাকিস্তান। বাবর আজমের দল বর্তমানে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই সিরিজ শেষ করে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে মূল আসরের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবে পাকিস্তান দল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলবে তিন ম্যাচের সিরিজ। ভারতীয় খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রস্তুত করছেন আইপিএল খেলে। তবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ বেঁচে নিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। উগান্ডার মতো দল বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলেও ব্যর্থ হয়েছে জিম্বাবুয়ে। এই খর্ব শক্তির দলের বিপক্ষেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়েছে টাইগাররা। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে ৪-১ ব্যবধানে। এই সিরিজের মধ্য দিয়েই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছে ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের। তার অবশ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে তামিম ইকবালের বিকল্প হিসেবে অনেকটা অপ্রস্তত অবস্থায় নেমে পড়তে হয়েছিল তানজিদের। তবে এবার তানজিদ অনেকটা পরিপক্ব। বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ১৩৬ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ৩৮৪ রান। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে একটি ম্যাচে খেলেছিলেন ৬৫ বলে ১১৬ রানের ইনিংস, যা এ বছরের বিপিএলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। তানজিদের দুর্দান্ত ফর্ম অব্যাহত ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও।

চট্টগ্রামে নিজের টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই ৪৭ বলে অপরাজিত ৬৭ রানেই ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। অর্ধশত হাঁকান চতুর্থ ম্যাচেও। শুধু তা-ই নয়, ৫ ম্যাচে ১৬০ রান করে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনিই। তাওহিদ হৃদয়ের দারুণ ব্যাটিংও ইতিবাচক দিক বাংলাদেশের জন্য। সিরিজে ১৪০ রান করে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। প্রাপ্তি খাতায় রাখা যায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিংকেও। যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, নিজেকে মেলে ধরেছেন এই বর্ষীয়ান।

ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও শীর্ষ দুটি স্থান বাংলাদেশের দখলে। তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৪টি করে ম্যাচ খেলেছেন, দুজনই শিকার করেছেন ৮টি করে উইকেট। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে স্পিন জাদু দেখিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। দুই ম্যাচে তার শিকার ৫ উইকেট। আইপিএল থেকে ফিরে বাংলাদেশের জার্সিতেও ম্যাচসেরা হয়েছেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান।

এই সিরিজে প্রাপ্তির চেয়ে অবশ্য অপ্রাপ্তিই বেশি। ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও প্রায় প্রতি ম্যাচেই হিমশিম খেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৯ রান তাড়া করতে নেমে বিপর্যয়ে পড়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। তবে এদিন তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহর নৈপুণ্যে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে যথাক্রমে ৯ ও ৫ রানের অল্প ব্যবধানে। তবে পঞ্চম ম্যাচে আর শেষ রক্ষা হয়নি, ৮ উইকেটের বড় হারের লজ্জা নিয়ে সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুর্দিনের বন্ধু হলো জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যখনই অফফর্মে থাকেন, তখনই বাংলাদেশকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। তবে এবার জিম্বাবুয়েও ফর্মে ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশের বেশ কজন তারকা ব্যাটারকে। এই তালিকায় সবার প্রথমে আসবে লিটন কুমার দাসের নাম। ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ হয়েছেন তিনি, শেষ পর্যন্ত জায়গা হারিয়েছেন একাদশ থেকেও। প্রথম তিন ম্যাচে মাত্র ৩৬ রান করেন এই স্টাইলিশ ব্যাটার। তানজিদ হাসান যদি হন সফলতার নাম, তবে ব্যর্থতার নাম লিটন।

ব্যাট হাতে সিরিজটা বাজে কেটেছে বাংলাদেশ অধিনায়কেরও। পাঁচ ম্যাচে মাত্র ৮১ রান করতে পেরেছেন শান্ত। বল হাতে সফল হলেও হাসেনি সাকিবের ব্যাট। দুই ম্যাচে করতে পেরেছেন মাত্র ২২ রান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা হলো স্ট্রাইকরেট নির্ভর খেলা। কত বল খেলে কত রান করেছে, সেটা বিবেচনাও বড় বিষয় এখানে। দ্রুতগতিতে রান তুলতে না পারলে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় না।

চলমান আইপিএলে ২০ ওভারের ম্যাচে প্রায়ই ২৫০ রানের স্কোর হচ্ছে। অনেক ব্যাটারই রান তুলছেন ২০০-২৫০ স্ট্রাইকরেটে। তবে হতাশার বিষয় এই যে, জিম্বাবুয়ের মতো খর্বশক্তির বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেও বাংলাদেশের ব্যাটারদের স্ট্রাইকরেট হতাশাজনক। এই সিরিজের অধিনায়ক শান্তর স্ট্রাইকরেট মাত্র ১০৩.৮৪। লিটন দাসেরটা আরও খারাপ, ৮৩.৭২। দুই ম্যাচ খেলা সৌম্য সরকারের স্ট্রাইকরেট ১১৭ দশমিক ০৭, সাকিবের ১১০ দশমিক ০০। সিরিজে ১৫০ স্ট্রাইকরেটও নেই কোনো বাংলাদেশি ব্যাটারের।

বড় টুর্নামেন্টের আগে প্রস্তুতি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো খেলোয়াড়দেরকে ইনজুরি থেকে রক্ষা করা। সিরিজ বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরও বিশ্রাম দেওয়া হয়নি পেস আক্রমণের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তাসকিন আহমেদকে। চতুর্থ ম্যাচে ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। তাই তাকে একাদশে রাখা হয়নি পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে তাসকিনকে ঘিরে।

রুবেল হোসেনের শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে সাকিব বলেছিলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হয় না। বিশ্বকাপ একেবারেই ভিন্ন জায়গা। ওখানে যত বেশি চাপ সামলাতে পারব, তত ভালো করার সম্ভাবনা।’ সাকিব মনে করেন, দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলে ভালো প্রস্তুতি হয় না। বিশ্বকাপের আগে আরও একটি প্রস্তুতিমূলক সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজের প্রতিপক্ষও দুর্বল, যুক্তরাষ্ট্র। এমন খর্বশক্তির দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বকাপে কতদূর যেতে পারে বাংলাদেশ- সেটিই এখন দেখার বিষয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ