Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

পাহাড়খেকোদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

পাহাড় প্রাকৃতিক সম্পদ, সরকারি সম্পদ, জনগণের সম্পদ। বাংলাদেশে সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে নিয়মিতই চুরি করে পাহাড় কাটা হয়। মাঝে মাঝেই পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়। কিছুদিন বন্ধ থাকলেও তা আবার শুরু হয়। এভাবে নির্বিচারে পাহাড়ি বন ধ্বংসের কারণে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ, তেমনিই বনের নানান প্রাণী বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

এবার পাহাড় কাটা বন্ধ করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন এক বন কর্মকর্তা। বন কর্মকর্তার নাম সাজ্জাদুজ্জামান (৩০)। সাজ্জাদুজ্জামান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় বন রক্ষায় অভিযান চালাতে গিয়ে শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে মাটি পাচারকারীদের ডাম্পারের (মিনি ট্রাক) চাপায় খুন হয়েছেন তিনি। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। বনকর্মীরা জানান, ডাম্পারটি হরিণমারা এলাকার ছৈয়দ করিম নামে একজনের। বাপ্পি নামের এক যুবক ডাম্পারটি চালাচ্ছিলেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া বনরেঞ্জর এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গভীর রাতে হরিণমারা পাহাড় কেটে ডাম্পারে ভরে বালু পাচার হচ্ছিল। খবর পেয়ে সাজ্জাদুজ্জামান মোটরসাইকেলচালক মো. আলীকে (২৭) নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় বালু পাচারকারীরা ডাম্পার দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদুজ্জামান ও আলীকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে মাথা ফেটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাজ্জাদ। গুরুতর আহত অবস্থায় উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তার চালক মো. আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

ভাবতে অবাক লাগে, কতখানি সাহস থাকলে একজন বন কর্মকর্তার ওপর দিয়ে দুর্বৃত্তরা ডাম্পার চালিয়ে দিতে পারে! এই হত্যার বিচার না হলে এদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারোয়ার আলম খবর পেয়ে ভোরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, অবশ্যই খুনিদের বিচার করা হবে। ইতোমধ্যে ডাম্পারটি আটক করা হয়েছে। ডাম্পারের মালিক ও চালককে খুঁজছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, বন রক্ষা করতে গিয়ে সাজ্জাদ নিজের জীবন দিয়েছেন। তার নির্মম মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী বন কর্মকর্তাকে হারালাম। পাহাড়খেকোদের প্রতিরোধে এই মুহুর্তে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে ডিএফও বলেন, “না হয় অচিরেই বন ধ্বংস হয়ে পড়বে।”

নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড় করার কারণেই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘন ঘন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল ও গাছপালার অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে। পাহাড় কাটার কারণে সে বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পাহাড়ধসের পথ সুগম হয়। পরিণতিতে প্রতিবারই প্রাণ হারায় সাধারণ মানুষ। বস্তুত, কিছু মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের দরুন প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে।

পাহাড়ধসে প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। বড় ধরনের পাহাড়ধসের পর দেশব্যাপী আলোড়ন তৈরি হয়। একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সেসব কমিটির প্রতিবেদনে অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধ করাসহ অনেক সুপারিশ করা হয় কিন্তু বাস্তবে প্রায় কিছুই করা হয় না। কক্সবাজারের উখিয়ায় বেশ কিছু সিন্ডিকেট এক্সক্যাভেটর, ড্রাম ট্রাক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে অবাধে পাহাড় কেটে চলেছে।

১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, দেশে পাহাড় বা টিলা কাটা নিষিদ্ধ। ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করে আরও কঠোর করা হয়েছে; কিন্তু লাভ কী, যদি আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকে। এই পাহাড়খেকোরা কি রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি শক্তিশালী? তা না হলে সংশ্লিষ্ট আইন বাস্তবায়ন করা হয় না কেন? জানা যায়, অত্যন্ত প্রভাবশালী পাহাড়খেকো চক্রকে রীতিমতো ভয় করে চলেন বন বিভাগের স্থানীয় কর্মীরা। এই ক্ষেত্রে সাজ্জাদুজ্জামান জীবন পাহাড় রক্ষায় এক মহতী প্রাণ-উৎসর্গ।

আমরা আশা করি, পাহাড় রক্ষায় দেশের প্রচলিত আইন বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উখিয়ায় পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। পাহাড় কাটার অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর বিচারিক কার্যক্রম যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করাও প্রয়োজন। তাই পার্বত্য অঞ্চলের বনের গাছ ও পাহাড় কাটা রোধ করতে হলে এসব কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ