আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুর ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের আজকের এই দিনে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে কাপুরুষোচিত ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে টানা ১৫ বছর দিনটি জাতীয়ভাবে পালন করা হলেও এবারই দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ও জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে না। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। এর পর গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করে।
নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ যারা সেদিন শহীদ হয়েছেন, আজ আমরা তাদের সবাইকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। মূলত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকেই বাংলাদেশে এক বিপরীত ধারার যাত্রা শুরু হয়। বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসনের অনাচারি ইতিহাস রচিত হতে থাকে। সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশ ও জাতিকে বিপথগামী করার অপচেষ্টা চালানো হয় পরবর্তীকালে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মুশতাক আহমদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন। খুনিদের পুরস্কৃত করা হয় লোভনীয় ও লাভজনক চাকরি দিয়ে।
পরে ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়। সেই অধ্যাদেশ বাতিলের পর দেরিতে হলেও বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, সরকার পতনের পর থেকে কার্যত জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করতে না পারলেও দিবসটি উপলক্ষে আজ দলীয়ভাবে কর্মসূচি দিয়েছে। সেই কর্মসূচির পোস্টারে বলা হয়েছে, ‘শোক থেকে শক্তি, ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বর (ধানমন্ডি) অভিমুখে যাত্রা’। সাধারণত যে কোনো পোস্টারের নিচে প্রচার সম্পাদকের নাম থাকলেও এ পোস্টারে তা ছিল না। নেই কর্মসূচির সময় উল্লেখও। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এ পোস্টার নিজ নিজ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
তাছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগ আজ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচিতে দিবসটি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতির খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল), উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ অনেক সংগঠন শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে