অর্থমন্ত্রীর সবুজ সংকেত
বাতিল হতে পারে এমপিদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি
জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর শুল্ক ছাড়াই বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করতে পারেন সংসদ সদস্যরা। তবে এবার আইনপ্রণেতাদের এমন সুবিধা বাতিলের চিন্তা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুল্কমুক্ত ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রবিবার (১২ মে) এনবিআর ভবনে সকাল থেকে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাজেটের খুঁটিনাটি নিয়ে পর্যালোচনা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের উপস্থিতিতে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের বিষয়ে সবুজ সংকেত দেন অর্থমন্ত্রী।
এর আগে আইএমএফের সঙ্গে এনবিআর কর্মকর্তাদের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি সুবিধার বিপক্ষে ছিল আইএমএফ। এ কারণেই এই সুবিধা তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল এনবিআর।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, এমপিদের গাড়ি আমদানিতে কিছু শুল্ক আরোপ করলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। অল্প হলেও রাজস্ব আদায় হবে। জনপ্রতিনিধিরা যদি শুল্ক দেন তাহলে অন্য কেউ শুল্ক ছাড় চাইতে গেলেও চিন্তা করবে।
তবে এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি সুবিধা তুলে দেয়ার চিন্তা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করবে ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর। মূলত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আগামী (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে নতুন করে শুল্কারোপ করার প্রস্তাব করা হতে পারে। এক্ষেত্রে শুল্কহার হতে পারে ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। দেশে গাড়ি আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক হারের তুলনায় এটিও অনেক কম। বর্তমানে গাড়ি আমদানির জন্য সিসি ভেদে ৮৯ শতাংশ থেকে ৮৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। সেই হিসেবে একটি গাড়ির দাম ১ লাখ টাকা হলে সেটি আমদানির জন্য কমপক্ষে আরও ৮৯ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। আর সর্বোচ্চ হার ধরা হলে শুল্ক দাঁড়ায় ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সূত্র আরও জানায়, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুল্ক খাতে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বড় অংশ আসবে বকেয়া আদায় ও শুল্কহার পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের শুল্ক ছাড় চায় না আইএমএফ। বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহতি তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
এনবিআর সূত্র জানায়, ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩১৬টি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেছেন এমপিরা। এসব গাড়ির মূল্য ২৬০ কোটি টাকা। সর্বনিম্ন ৮৯ শতাংশ শুল্ক হিসাব করলে এতে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ২৩১ কোটি টাকা। অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৮৫০ শুল্ক হিসাব করলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ২ হাজার ২১০ কোটি টাকা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে