Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বহুমুখী চাপে দেশের অর্থনীতি

Md. Zahidul  Islam

মো. জাহিদুল ইসলাম

রবিবার, ১২ মে ২০২৪

রকারি জরিপে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। টাকার অবমূল্যায়নে মার্কিন ডলারের দর বেসামাল। গত তিন বছরের ব্যবধানে ৩০ টাকা বেড়েছে ডলারের দাম। প্রধান কয়েকটি খাতে রপ্তানি কমার পাশাপাশি অস্থিতিশীল প্রবাসী আয়ের ধারা, যার প্রভাব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এরই মাঝে বাড়ছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯ মাসেই ঋণের সুদ বাবদ খরচ ছাড়িয়েছে ১০০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, অন্যদিকে ক্রমাগত অর্থ পাচার। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। জিএফআইর তথ্য মতে, ২০০৯ সালে ৫১০ কোটি ডলার, ২০১০ সালে ৫৪০ কোটি, ২০১১ সালে ৫৯২ কোটি, ২০১২ সালে ৭২২ কোটি, ২০১৩ সালে ৯৬৬ কোটি, ২০১৪ সালে ৯১১ কোটি এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ১৫১ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।

এসব টাকার ৮০ শতাংশই সংঘটিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে বা আমদানি-রপ্তানির ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী আয়ের বেশিরভাগ টাকাই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচার হওয়া টাকার মূল গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর, ইউরোপের দেশগুলো, মালয়েশিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাত। এসবের সঙ্গে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। বিপুল রাজস্ব ঘাটতিতো আছেই। অবস্থা পর্যবেক্ষণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি বহুমুখী চাপের মধ্যে রয়েছে। অর্থনৈতিক সূচকগুলো নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন দেশের অর্থনীতি নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে। তিনি ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, অর্থনীতি চাপে থাকায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। উন্নত বাজার ব্যবস্থাপনা, সরকারি সেবামূলক খাতগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি, রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এখনই যথাযথ উদ্যোগ না নিলে বর্তমান অবস্থা থেকে বের হওয়া বেশ কঠিন হবে।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর দুই বছরের মধ্যে অনেক দেশই অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠেছে। ঠিকভাবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালনা করলে বাংলাদেশের পক্ষেও সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে আমাদের সমস্যা আরও গভীর হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমাদের বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচির বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে শিল্প খাতে, ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ শতাংশ।

এদিকে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংকও। সংস্থাটি বলছে, এ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও গত এপ্রিলে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। নানাবিধ চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করে প্রবৃদ্ধি হ্রাসের এবং মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার কথা বলছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। দুই সংস্থার পূর্বাভাসের ব্যবধান দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

দেশের অর্থনীতির এ মুহর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ক্রমেই বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। ১৩ মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য কমলেও দেশে এর প্রভাব দেখা যায় না। এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতা, নিত্যপণ্যের বেচাকেনা গুটিকয়েক ব্যবসায়ী কুক্ষিগত করে সিন্ডিকেট গঠন, বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতার অভাব, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, টাকার অবমূল্যায়ন, বিভিন্ন মহলের চাঁদাবাজি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে দ্রব্যমূল্য কমছে না।

এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে এনবিআরে শুল্ক কমানো, বেশিসংখ্যক ব্যবসায়ীদের আমদানির সুযোগ এবং টিসিবি কর্তৃক আমদানি করে ন্যায্য মূল্যে বিতরণ অব্যাহত রাখার পরামর্শ বাজার বিশ্লেষকদের। এ ছাড়া টিসিবি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ, ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশন প্রভৃতি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদার, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করে মূল্যহ্রাসের পাশাপাশি মজুদদারি, চোরাচালানি ও কার্টেলের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ তাদের।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমে ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদের তথ্য বলছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, ১৭ এপ্রিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৮ কোটি ডলারে। একই দিনে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার। গত বছরের এ সময়ে মোট রিজার্ভের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল (৩১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১১৮ কোটি ডলার)।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৩৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন। ২০২০-২১ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩১ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভে টানের মাঝেই চাপ বাড়ছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ খরচ বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮৯ কোটি ডলার। গত ৯ মাসে সব মিলিয়ে ২৫৭ কোটি ডলারের বেশি সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে। গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৭৩ কোটি ডলার। বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ এসেছে এমন এক সময়ে, যখন দেশে কয়েক মাস ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডলার সংকটের এ সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে রিজার্ভ ও বাজেটের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। চীন ও রাশিয়ার স্বল্প মেয়াদের ঋণের কারণে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ইতিমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের কিস্তিও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ঋণ পরিশোধও শিগগিরই শুরু হবে। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে অন্য মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হলে চাপ আরও বাড়বে।

চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতির চাপ, ডলার সংকট, শেয়ারবাজারে নিম্নগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, রপ্তানি আয়ের গতি বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়; কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করেও রাজস্ব আয় পূরণ করতে পারছে না এনবিআর। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি হয়েছে ২১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা।

অর্থবছরের ৯ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪২ দশমিক ৩০ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুলাই-মার্চ ৯ মাসে এডিপিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। ধীরগতির বিষয়ে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব বলেছেন, এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার অন্যতম কারণ ঠিকমতো অর্থছাড় না হওয়া। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থছাড় কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতির অন্যতম কারণ হলো সরকার ইচ্ছা করেই কম ব্যয় করছে। সরকারের মূল লক্ষ্য হলো বেশকিছু টাকা কাটছাঁট করা। এ জন্য সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও (আরএডিপি) বরাদ্দ কমানো হয়েছে। দেশে ব্যাংক খাতের অস্থিরতা চরমে। এ খাতের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে চুক্তি করেছে। এ ছাড়া কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএলের একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি বলছে, ব্যাংক একীভূত করায় সতর্ক থাকতে হবে। সম্পদের মান ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যাংক একীভূত করা উচিত। এ জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, ভালো ব্যাংক কখনো বাড়তি দায় নেয় না। তৈরি পোশাক ও কয়েকটি অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি কিছুটা প্রবৃদ্ধি হলেও অন্য ৪টি প্রধান খাতে রপ্তানি কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, দেশের হিমায়িত ও চিংড়ি মাছ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমেছে। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে হিমায়িত ও টাটকা মাছ রপ্তানি করে ২৯ কোটি ৯২ লাখ ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। এর মধ্যে চিংড়ি মাছ থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

অন্যদিকে গত ৯ মাসে হোম টেক্সটাইল থেকে মাত্র ৬৩ কোটি ৬৫ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ কম। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে আরও বেশি, ৩১ শতাংশ। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৬ এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার, বৈদেশিক মুদ্রার টালমাটাল অবস্থা-একটির সঙ্গে অন্যটি সন্দেহাতীতভাবে জড়িত। যদি মুষ্টিমেয় লুটেরা, অসৎ ব্যবসায়ী, নৈতিকতাবিবর্জিত সরকারি কর্মচারী ও রাজনীতিকের কারণে দেশ অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়, তাহলে এর কুফল দেশের সাধারণ জনগণকেই ভোগ করতে হবে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ