Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

যুবদল নেতার মৃত্যুর ১০ মাস পর শেখ হাসিনার নামে হত্যা মামলা

Masum   Hossain

মাসুম হোসেন

সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

যুবদল নেতা ফোরকান আলীর মৃত্যুর ঘটনায় ১০ মাস পর হত্যা মামলা হয়েছে বগুড়ার শাজাহানপুরে। আদালতে করা মামলায় বাদীর অভিযোগ, বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে গেলে ফোরকানকে গুলি করে হত্যা করেছেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনা ছাড়াও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে হত্যার নির্দেশদাতা বলা হয়েছে। দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীসহ ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে হঠাৎ রাস্তায় পড়ে মারা যান উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ফোরকান আলী (৪২)। ওই সময় অভিযোগ তোলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়ায় পালাতে গিয়ে ‘হৃদরোগে’ আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঘাষিরা সুফিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফোরকান।

গত ৩০ অক্টোবর খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস আলীর করা মামলায় বলা হয়েছে, ৩ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ৭টার দিকে তৎকালীন সরকারবিরোধী মিছিলটি বের করেন শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা উপজেলা শহরের ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের সাজাপুর ফটকি ব্রিজ এলাকা থেকে উপজেলা পরিষদের দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওই সময় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে গুলিসহ ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।

এরই একপর্যায়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামানের ছোড়া গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাদী ইউনুস আলীর পাশে থাকা ফোরকান। পরে তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে রোববার (৩ নভেম্বর) মামলার বাদী ইউনুস আলী বলেন, ঘটনার দিন ফোরকান গুলিবিদ্ধ হননি। ফোরকান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, সেভাবে মামলায় উল্লেখও করা হয়নি মনে হয়।

বিএনপির ওই বিক্ষোভ-মিছিলের দিনের ঘটনা সম্পর্কে একাধিক প্রতক্ষ্যদর্শী জানান, ওই দিন বিএনপির লোকজন বিক্ষোভ-মিছিল বের করতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া দেন। ওই সময় পালাতে গিয়ে ফোরকান অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তার মৃত্যু হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। হামলার কোনো ঘটনাও ঘটেনি ওই দিন।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াদুদ আলম জানান, যুবদল নেতা ফোরকান আলী হত্যা মামলা নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। মৃত্যুর পর ফোরকানের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। এখন আদালতের আদেশ পেলে মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন করা হবে। ফোরকানের মৃত্যুর পর তার ভাই ওমর ফারুকসহ স্বজনরা জানিয়েছিলেন, ফোরকান বিএনপির মিছিলে যাননি।

তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন ফোরকান। পরে তারা খবর পান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ফোরকানের মৃত্যু হয়েছে। তবে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফোরকান বিএনপির বিক্ষোভ-মিছিলেই ছিলেন। পুলিশি ঝামেলার ভয়ে স্বজনরা ফোরকানের মিছিলে অংশ নেয়ার বিষয়টি গোপন করেন। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার মরদেহ দাফন করা হয়।

দাফনের সময় ফোরকানের বাড়িতে উপস্থিত থাকা বগুড়া-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ফোরকান। এতে তার মৃত্যু হয়েছে। মিছিলে ফোরকানের সঙ্গে যারা ছিলেন, তারাই এ কথা বলেছেন। এসব শুনেই তারা ফোরকানের বাড়িতে এসেছেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ