আমার ক্রিকেটকাব্য
১৯৬২ সালে এসএসসি (তখনকার মেট্রিক) পাস করে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে ক্রিকেট খেলা নিয়ে আমার তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। আমি ছিলাম ফুটবলার। ফুটবল খেলাই ছিল আমার নেশা। আমি খুব ভালো ফুটবলার ছিলাম না। তবে খুব খারাপও ছিলাম না। আমার স্কুলে ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থাও ছিল। আমি কিছুদিন ক্রিকেটও খেলেছি। তবে সবাই ব্যাট করতে চাইত বলে আমি ব্যাট করার সুযোগ খুব কম পেয়েছি। বাধ্য হয়ে বোলিংই করেছি বেশি। ফিল্ডিংও দিতে হয়েছে।
একবার প্যাড ও আর্মগার্ড ছাড়া খেলতে গিয়ে আমি হাঁটুতে বলের আঘাত পাই। আমার ভাগ্য ভালো যে, বলটি আর একটু উঁচুতে আঘাত হানেনি। তারপর থেকে আমার ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ক্রিকেটের প্রতি আমার আগ্রহ কমে যায়। আমি ফুটবলকেই বেছে নিই। আমার ছেলেবেলা বইটিতে ফুটবল নিয়ে আমার অন্তহীন আগ্রহ ও ভালোবাসার বর্ণনা আছে। আমি রেডিওতে ফুটবল খেলার ধারাভাষ্য শুনতাম। কলকাতার মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল এবং ঢাকার মোহমেডান ও ভিক্টোরিয়া আমার প্রিয় দল ছিল।
আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই আমি প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের রানিং কমেন্ট্রি শোনার সুযোগ পাই। আমাদের কলেজের ক্যাফেটেরিয়াতে একটি খুব বড় আকৃতির মারফি রেডিও ছিল। ওই রেডিও ঘিরে আমার কলেজের ক্রিকেটভক্তরা চেয়ারে বসে চা-শিঙাড়া-সিগারেট খেতেন এবং ক্রিকেটের ধারাভাষ্য শুনতেন। ছক্কা তখনো চালু হয়নি। বাউন্ডারি ছিল। বাউন্ডারি হলে ভাষ্যকাররাও উত্তেজিত ভাষায় কথা বলতেন, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রোতারাও হাততালি দিয়ে আনন্দে ফেটে পড়তেন। এদের আনন্দ ও উত্তেজনা দেখে একদিন আমিও একটি চেযার টেনে নিয়ে ওই দলে ভিড়ে যাই। তখন তো ওডিআই বা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছিল না। ক্রিকেট মানেই ছিল টেস্ট ক্রিকেট। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি টেস্ট ম্যাচ চলছিল। সম্ভবত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারবাডসে ওই টেস্ট ম্যাচটি চলছিল। ওই টেস্ট ম্যাচের ধারাভাষ্য শোনার মধ্য দিয়েই শুরু হয় আমার নতুন জীবন। ক্রিকেটজীবন। আমার খুব ভালো লেগে যায়। ক্রিকেটের নেশা আমাকে গ্রাস করে। বিশাল পাইথন যেমন ধীরে ধীরে গ্রাস করে তার শিকার করা প্রাণীটিকে।
১৯৬২ সালে সেই যে আমি ক্রিকেটের ধারাভাষ্য শুনতে বসেছিলাম, আজ পর্যন্ত আমি আর ওই চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারিনি। ১৯৬২-২০২৩, গত ৬১ বছর চলে গেছে, ক্রিকেটের নেশা আমার বেড়েছে বৈ কমেনি। এই সময়ের মধ্যে ক্রিকেটের রূপান্তরও ঘটেছে বিস্তর। ১৯৭১ সাল থেকে পাঁচ দিনের টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক দিনের সীমিত ওভারের ক্রিকেট (শুরুতে ৬০ ওভার ও পরে স্থির হয়েছে ৫০ ওভারে) এবং পরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।
একটু আগে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩ এর ফাইন্যাল ম্যাচ। ভারতের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস জিতে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম টস জিতলে ভারত ব্যাটিং করবে। টস জিতে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠাবে, আমি ভাবিনি। আমি মনে করি অস্ট্রেলিয়া ভুল করেছে। এই বিশ্বকাপের সেরা ব্যাটিং লাইন আপ হলো ভারতের। ভারতীর ব্যাটাররা বিশাল রানের পাহাড় গড়ে তুলবে বলেই আমার ধারণা। সেই বিশাল রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়া এবারের বিশ্বকাপ জিতবে, আমার তা মনে হয় না।
১৯ নভেম্বর ২০২৩ । দুপুর ২:৫৫ মিনিট
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে