সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড
সংকীর্ণ প্রবেশপথ ও কাঠের ইন্টেরিয়রই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে
বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন ১০ ঘণ্টা পর পুরোপুরি নিভেছে। তবে আগুন লাগার কারণ ও নিয়ন্ত্রণে দেরি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, সচিবালয়ের সরু প্রবেশপথ এবং ভবনের ভেতরের রুমগুলোতে কাঠের ইন্টেরিয়র ও তালাবদ্ধ থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নেভাতে বিলম্ব হয়।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ২টায় লাগা আগুন নেভাতে ১৯ ইউনিটের এত সময় কেন লেগেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেছেন, ‘জায়গাটা কনফাইনড (আবদ্ধ)।’
তিনি বলেন, ‘সব রুম আটকানো থাকায় গ্লাস বা দরজা ভেঙে পানি দিতে হয়েছে। এতে সময় লেগেছে। ভবনজুড়ে বিদ্যুতের তারের সংযোগের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় নেভাতে বেগ পেতে হয়।’
এ ছাড়া রুমগুলোতে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে ডিউটিরত ফায়ার সার্ভিসের একাধিক সদস্য জানান, আগুন নেভাতে গিয়ে তাদের পদে-পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। সচিবালয়ের ফটক দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে ঢোকাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এ ছাড়া আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের মাত্র দুটি টার্নটেবল লেডার (টিটিএল) ভেতরে ঢুকতে পেরেছে। তাছাড়া আগুন নেভানোর কাজ শেষে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সচিবালয় থেকে বের করতেও বেশ সমস্যা হয়েছে।
জানা গেছে, সচিবালয়ে ঢোকার মোট ফটক পাঁচটি। তবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার ফটক আছে মাত্র দুটি। এই দুই ফটক দিয়েও ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, সচিবালয়ের ৪ নম্বর ফটক দিয়ে ঢুকতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িও ভেঙে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে আগুন লাগা ভবনের চারপাশে সরেজমিন দেখা যায়, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে জানালার ভাঙা গ্লাস। আগুনে ভবনের ছয় থেকে আটতলা প্রায় পুরাটাই পুড়ে গেছে। ভবনের ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সরেজমিন জানা যায়, ৭ নম্বর ভবনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। আগুনে মূলত ছয়, সাত ও আটতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে পুরো ভবনের চারপাশ ঘুরে দেখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদসহ অন্যরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন ও শৃঙ্খলা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইমরান হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে, এ ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে বুধবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ১টা ৫৪ মিনিট থেকে একে একে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এ ঘটনায় এক ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীও নিহত হন।
সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সচিবালয়ের এ আগুনে পুড়ে যেতে পারে বিভিন্ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে