Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

নরসিংদী কারাগার থেকে জঙ্গিসহ কয়েদি পলায়ন কোনো বিছিন্ন ঘটনা নয়

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

দেশে জঙ্গিবাদের সূত্রপাত হয়েছিল গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আফগানফেরত মুজাহিদদের হাত ধরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের ফলে জঙ্গি তৎপরতা কমে গেলেও তা এখনো থেমে নেই। এখন জঙ্গিরা নানা কৌশলে নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তারই প্রমাণ কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় গত ১৯ জুলাই বিকেলে নরসিংদী কারাগারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করার ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনকারীরা কারাগারের ভেতরে ঢুকে সেলের তালা ভেঙে ফেলে‌‌। সেখান থেকে ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যান। কারাগারের অস্ত্রাগার ও কারারক্ষীদের কাছ থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও ৮ হাজার ১৫০টি গুলি লুট করা হয়। যদিও জেল পালানো ৯ জন জঙ্গির মধ্যে ইতোমধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এটা আশার কথা হলেও বাকি ৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত দেশের স্বস্তি নেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া কি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিষয়টি মোটেও তা নয়। কারণ এভাবে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের একটি পুরোনো কৌশল, যা আমরা আগে দুটি পৃথক ঘটনায় দেখেছি। দুই বছর আগে ঢাকার আদলত চত্বর থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল।

আবার ১০ বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে জেএমবির শীর্ষ তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। পুলিশ পাহারার মধ্য থেকে এভাবে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাটি দেশের জন্য উদ্বেগজনক। সাধারণত জঙ্গি বা দুর্ধর্ষ আসামিদের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুযায়ী বাড়তি এক ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আসামি জঙ্গি হলে সে ক্ষেত্রে কী করতে হবে বা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, সে সম্পর্কিত নির্দেশনাও আছে।

আবার জেলকোড নীতিমালা তো আছেই। তাহলে আন্দোলনের মুখে কেন নরসিংদী কারাগারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দায়িত্বরত পুলিশের চরম অপেশাদারি ও গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটতে পারে। কয়েক বছর ধরে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের ফলে জঙ্গিদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে।

বিভিন্ন মামলায় কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে। তাদের দল ছোট হয়ে আসছে। তাই সেখান থেকে তারা বের হয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চেষ্টা করছে। মনে রাখতে হবে, এ ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা কিন্তু তারা একদিনে করেনি। তারা দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে লক্ষ্য স্থির করেছে। নিরাপত্তায় কোথাও কোনো ঘাটতি আছে কি না, তা বিশ্লেষণ করে অতর্কিত এমন হামলা করে জঙ্গি ছিনিয়ে নিয়েছে।

পাশাপাশি কয়েদিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। এমতাবস্থায় অবহেলার কারণে যদি জঙ্গিরা পালিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে দেশের জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরও আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদ একটা আদর্শের বিষয়। জঙ্গিদের ধরে বিচার করে কিছু সময়ের জন্য হয়তো তাদের সক্ষমতা নষ্ট করা যায়; কিন্তু চিরতরে নির্মূল করা যায় না। তাই দেশের জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করে সব ঢেলে সাজাতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ