Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

প্রাকৃতিক জিন ব্যাংক হালদা নদী দূষণমুক্ত রাখতে হবে

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪

খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদী কয়েকটি বিশেষ কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান বিশেষ কারণ প্রতিবছর হালদা নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মা মাছ প্রচুর পরিমাণে ডিম ছাড়ে। হালদা বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখান থেকে রুই ও কার্পজাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর আর কোনো জোয়ার-ভাটার নদী থেকে রুইজাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা যায় না।

হালদা নদী এবং নদীর পানির কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য এখানে মাছ ডিম ছাড়তে আসে যা বাংলাদেশের অন্যান্য নদী থেকে ভিন্নতর। বাংলাদেশে মৎস্য প্রজননক্ষেত্র অনেকগুলো আছে, কিন্তু মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয় এমন নদী একটিও নেই। হালদা হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক জিন ব্যাংক। তা ছাড়া, হালদা নদীকে চট্টগ্রামের ‘লাইফ লাইন’ বলা হয়। কারণ চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ বসবাস করে। তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে পানি সরবরাহ করে, তার মধ্যে প্রতিদিন ১৮ কোটি লিটার পানি এই হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়।

দেশের অর্থনীতিতেও হালদা নদী ব্যাপক অবদান রাখছে। হালদা থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়, তা থেকে উৎপাদিত রেণু, রেণু থেকে ধানি, ধানি থেকে আঙ্গুলি এবং আঙ্গুলি থেকে খাবারের জন্য মাছ সংগ্রহ করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে হালদা নদী বছরে ৮০০ কোটি টাকার অবদান রাখে।

আরো নানা কারণেই হালদা নদী গুরুত্বপূর্ণ। তাই ২০১৭ সাল থেকে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন হালদা নদীকে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসে। কিন্তু উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে, কারখানার বর্জ্য গিয়ে হালদায় পড়ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে মা মাছ। গতকাল বুধবার (১২ জুন) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রজনন মৌসুমেই দূষিত হচ্ছে এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদী। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পাঁচটি খালের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন কলকারখানা ও গৃহস্থালি বর্জ্য এসে হালদায় পড়ছে।

নগরের চান্দগাঁওয়ের বাহির সিগন্যাল এলাকায় জুতা ও প্যাকেজিং কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানকার বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন, চান্দগাঁও, কুলগাঁও এলাকার কারখানার বর্জ্য এবং আবাসিক এলাকার গৃহস্থালি বর্জ্যও পড়ছে নদীতে। দূষণ প্রতিরোধে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

হালদা নদীকে সরকার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অর্থাৎ এখানে কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলা দূরে থাক, নদীর পানি দূষিত হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো যাবে না। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে দূষণ প্রকট হলেও এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো উদ্যোগ নেই। এমন একটি জরুরি বিষয়ে সরকারকে নিরব থাকলে চলবে না। আমাদের দাবি, মা মাছ ও হালদা নদীর ‘লাইফ লাইন’ রক্ষার জন্য সরকারকে অতি শীঘ্রই কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ