আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি তুলে দিতে আইএমএফ-এর চাপ
বর্তমানে দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত থেকে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে। এতে সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের পাশাপাশি আইটি খাতে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। স্টার্টআপ থেকে বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ৫ হাজার মিলিয়ন ডলার। সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতির সহায়তার কারণেই এ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের মধ্যে এ খাত থেকে কর অব্যাহতি তুলে নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চাপ দিচ্ছে ঋণদাতা সংস্থাটি।
রোববার (২৮ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে দিনব্যাপী রাজস্ব ভবনে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি উঠে এসেছে। সেখানে উপস্থিত নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফ মিশনের পক্ষ থেকে আগামী তিন বছরের মধ্য যাবতীয় কর অব্যাহতি তুলে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আইসিটি খাতের অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই খাতে আর অব্যাহতি না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
এ সময় এনবিআর কর্মকর্তারা আইসিটি খাতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। পাশাপাশি, কর অব্যাহতি থাকার ফলে এ খাতের ঊত্থান হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা অব্যাহত থাকা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে এ বিষয়ে একমত হয়নি আইএমএফ মিশন।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প থেকে ৪৫ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য। কর অব্যাহতি তুলে দিলে এ খাতের ক্রমবর্ধমান বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করে খাত সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি অনুধাবন করে এ খাতে কর অবকাশ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়াতে এনবিআর-কে চিঠি দিয়েছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
সে চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ইতিবাচক সত্ত্বেও, উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীরা এখনো বাবসা টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। টেকসই ব্যবসার জন্য বাজার সৃষ্টির বিষয়টি চলমান। তবে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও অন্যান্য কারণে তা নিশ্চিত নয়। করোনাভাইরাসের মতো বৈশ্বিক মহামারি ও তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাবের কারণেও ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে পড়েছে। বর্তমানে কর অব্যাহতির মেয়াদ মাত্র চলতি বছর পর্যন্ত থাকায় বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এসব বিবেবেচনায় কর অব্যাহতির সুবিধা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
আইএমএফ-এর পরামর্শের মধ্যে আরও ছিল, যেকোনও সেবার বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করা। পোশাক, ফুটওয়্যার, এলপিজি, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য খাত কর অবকাশ থেকে সরানো। পেট্রোবাংলার কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায়ে কীভাবে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা যায়, তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এছাড়া তিনটি অনুবিভাগে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কথাও বলেছে সংস্থাটি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে