Views Bangladesh Logo

২০২৬ সালের পাঠ্যপুস্তকের জন্য কাগজ সরবরাহের পরিকল্পনা এনসিটিবির

Kamrul  Hasan

কামরুল হাসান

২০২৬ সালের প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজে প্রয়োজনীয় কাগজ প্রেসে সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আগামী বছর সময়মতো মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা। এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, এর ফলে এ বছর পাঠ্যপুস্তক বিতরণে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

এছাড়াও পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের চাহিদা নির্ধারণে তারা একটি সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগও নিয়েছেন যাতে করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা জমা দিতে পারে। এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সফটওয়্যারটি একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

সিদ্ধান্তের কারণ


এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, খোলাবাজার থেকে সরকারি পাঠ্যপুস্তক উদ্ধারের সাম্প্রতিক ঘটনার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে সরকারের পক্ষ থেকে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করার কথা। এ বছর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চাহিদা অনুযায়ী সরকারি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, সেই বিনামূল্যে বিতরণ করার জন্য রাখা বই খোলাবাজারে অবৈধভাবে বিক্রির ঘটনা সামনে আসে। সম্প্রতি বাজার থেকে প্রায় ১৯,০০০ পাঠ্যপুস্তক উদ্ধারের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বোর্ডের উৎপাদন নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু নাসের টুকুর নেতৃত্বে তিন সদস্যের এনসিটিবি দল বিষয়টি তদন্ত করছে।

এ ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আবু নাসের টুকু ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘দুটি উপজেলা থেকে জব্দ করা পাঠ্যপুস্তকগুলো সরকার কর্তৃক মুদ্রিত ছিল। বইগুলো কীভাবে বাজারে সরবরাহ করা হয়েছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সেই রহস্য উদঘাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে।’

যোগাযোগ করা হলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘বিনামূল্যে বিতরণ করার জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক বাজারে বিক্রি করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপকর্মে জড়িতদের শনাক্ত করার জন্য এনসিটিবি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে। এই বইগুলো কীভাবে বাজারে সরবরাহ করা হয়েছিল তা তদন্ত করা হচ্ছে।’

‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা সন্দেহ করছি যে, কিছু ছাপাখানার মালিক এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা বাজারে এই বই সরবরাহের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। চলমান তদন্তে আসলে কী ঘটেছে তা বেরিয়ে আসবে’, তিনি আরও বলেন।

এনসিটিবি চেয়ারম্যানের মতে, যদি কোনো উপজেলা শিক্ষা অফিসার এই অপকর্মের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে শাস্তি দেবে এবং যদি কোনো প্রেস জড়িত থাকে তাহলে তাকে কালোতালিকাভুক্ত করে জরিমানা করা হবে।

এই বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়বদ্ধতার বিষয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেহেতু পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা এই অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আসে, তাই অবশ্যই তাদের দায় বহন করতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পরিচালক (প্রশাসন) না থাকায় ভিউজ বাংলাদেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নিতে পারেনি। অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিমের সঙ্গে একাধিক চেষ্টা করেও তার অফিসের নম্বরে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পাঠ্যপুস্তকের জন্য কাগজ সরবরাহের পরিকল্পনা


পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর জন্য ব্যবহৃত কাগজের মান প্রায় প্রতি বছরই সমালোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। ‘তাই, বোর্ড দেশের কাগজকল থেকে সংগ্রহ করে মুদ্রকদের কাছে কাগজ সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে’, বলেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান।

মানসম্মত কাগজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, এনসিটিবি এমনকি বইয়ের প্রচ্ছদ মুদ্রণের জন্য বাধ্যতামূলক উপকরণ আর্ট কার্ড আমদানিকারকদের সহায়তা প্রদান করতেও ইচ্ছুক।

উল্লেখ্য, এনসিটিবি এ বছর সারা দেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৪১টি বিভাগের অধীনে প্রায় ৪১ কোটি পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ