Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশি পর্যটকে নজর নেপালের

Md Mizanur Rahman Himadri

মো. মিজানুর রহমান হিমাদ্রী

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত ১০ বছরে টেকসই প্রবৃদ্ধির ধারাতে রয়েছে। ফলে নিজেদের পর্যটন খাতকে চাঙা করতে বাংলাদেশি পর্যটক টানায় নজর দিয়েছে নেপাল। ২০২২ সালে ২৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি পর্যটক নেপাল ভ্রমণ করেছে। যা করোনা মহামারি শুরুর আগের স্তরের প্রায় কাছাকাছি। 

বাংলাদেশে নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি ভিউজ বাংলাদেশকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, "অনন্য ও বৈচিত্র্যময় পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশ-নেপাল পরস্পরের পরিপূরক হতে পারে। ২০২২ সালে ২৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি পর্যটক নেপালে গিয়েছিলেন, যা প্রাক-মহামারিী স্তরের কাছাকাছি। তবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী পর্যটকের সংখ্যা বিবেচনায় এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।"

বাংলাদেশের সঙ্গে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে নেপাল সহযোগিতাপূর্ণ অবস্থানে থাকতে পারে উল্লেখ করে এই রাষ্ট্রদূত বলেন, "ভ্রমণ সংক্রান্ত সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে আমাদের পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন বিষয় প্রচার করতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করতে হবে৷ আকাশ পথ থেকে শুরু করে স্থল সংযোগের মাধ্যমে আমাদের দেশগুলোর মধ্যে মসৃণ এবং ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম, মেডিক্যাল ট্যুরিজম এবং ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্পগুলোতে সহযোগিতার সুযোগগুলো খুঁজে দেখতে পারি। এসব বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেও প্রস্তুত আছি।”

করোনা মহামারি পূর্বের তুলনায় নেপালের পর্যটন খাত ৯৭ শতাংশ পুনরুদ্ধার করেছে উল্লেখ করে দেশটির ট্যুরিজম বোর্ডের (এনটিবি) গবেষণা, পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ বিভাগের প্রধান মণি রাজ লামিছনে বলেন, "নেপালের পর্যটন খাত প্রাক-মহামারিী স্তরের তুলনায় প্রায় ৯৭ শতাংশ পুনরুদ্ধার করেছে। ২০১৯ সাল কোভিড-১৯ মহামারির ঠিক আগের বছর ছিল নেপালের পর্যটন খাতের সেরা বছরগুলোর মধ্যে একটি। সেই বছর স্থল ও আকাশ পথে মোট ১১ লাখ ৯৭ হাজার ১৯১ জন বিদেশি পর্যটক নেপালে প্রবেশ করেছিল। এটি দেশটিতে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর মানে হলো, ওই বছর গড়ে প্রতি মাসে ৯৯ হাজার ৭৬৫  জন পর্যটক নেপালে আসেন।"

তবে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে পর্যটক আসার ধারা নিম্নমুখী রয়েছে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, "২০২০  সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হলে নেপালে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৮৫ জনে নেমে আসে। ২০২১ সালে এটি এটি আরও কমে ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৬২ জনে  দাঁড়িয়েছিল। যদিও এর পরের বছর ২০২২ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৬ লাখ ১৪ হাজার ৮৬৯ জনে উন্নীত হয়।"

 

নেপাল ২০২৩ থেকে ২০৩৩ সালকে পর্যটন দশক হিসেবে উদযাপন করবে উল্লেখ করে মণি রাজ লামিছনে বলেন, "দেশের পর্যটন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে নেপাল সরকার তার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষণা করেছে। যেখানে ২০২৩  থেকে ২০৩৩  সাল পর্যন্ত ১০  বছরকে পর্যটন দশক হিসাবে উদযাপন করবে। যেখানে তারা প্রতি বছর দেশটিতে ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক আনার চেষ্টা করবে।" 

গত বছর দর্শনার্থী টানার এ লক্ষ্যমাত্রা প্রকাশ করে এনটিবি। এদিকে ২০২৩  সালের জুলাইয়ে নেপালে আগত মোট পর্যটকদের ৫০ শতাংশ এসেছিল সার্কভুক্ত দেশ থেকে। যার মধ্যে ভারতের ২১ হাজার ৩৫৭ জন, বাংলাদেশের ২৬ হাজার ০৯৬, ভুটানের ৮০৭, শ্রীলঙ্কার ৪৮৪ জন এবং পাকিস্তানের ৩৭২ জন।

চীন ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছিল ১৩,০৭৫ জন দর্শনার্থী। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে থেকে সর্বাধিক সংখ্যক পর্যটক ৩,৬৩০ জন এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। তা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া থেকে ১,১০২ এবং কানাডা থেকে ৬৫৩ জন।

বাংলাদেশ নেপাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির (বিএনএফএস) সভাপতি মশিউর আহমেদ এই প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে বলেন, "নেপাল বাংলাদেশিদের কাছে একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ভ্রমণ খরচ এ অঞ্চলের বাকি দেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় কম।"

বাংলাদেশিরা সহজেই নেপালের ভিসা পান উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "আগে নেপাল বাংলাদেশকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দিত। যাই হোক, বাংলাদেশিদের এখন নেপালে যাওয়ার আগে ভিসা প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশিরা সহজেই নেপালের ভিসা পেতে পারেন।"

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (টোয়াব) এর একজন সদস্য বলেছেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০২৩ এর আগে ভারতীয় ভিসা পাওয়া এখন জটিল হয়ে উঠছে। নেপালে ডজন খানেক নাটকের শুটিং হয় বলে শোবিজ সেক্টরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা নেপালের সুন্দর গন্তব্য পছন্দ করেন। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের জনপ্রিয় নাট্যকর্মী জাহিদ হাসানকে ঢাকায় নেপাল দূতাবাস দ্বারা নেপালের রাষ্ট্রদূত করেছিল। কারণ তিনি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে নেপাল সফর করেছিলেন।

নেপাল যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর পর্যটক আগমনের লক্ষ্যমাত্রা সংখ্যা ১০ লাখ নির্ধারণ করেছে সেখানে এ বছরে প্রথম ৭ মাসের পরিসংখ্যান দেখায়, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এখন থেকে প্রতি মাসে দেশটিতে ১ লাখের বেশি পর্যটক আসতে হবে।

চলতি বছরের আগস্টে মোট ৬৭,১৫৩ জন আন্তর্জাতিক পর্যটক নেপালে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ভারত থেকে ২৬ হাজার ৬৬৫ জন, চীন ৫ হাজার ২৭, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪ হাজার ৬২৯, শ্রীলঙ্কা  ৩ হাজার ৮৫৮,  বাংলাদেশ ৩ হাজার ১৯০,  যুক্তরাজ্য ২ হাজার ৭১১ ও  জাপান থেকে ১ হাজার ৫৮৫ এসেছেন। একই জায়গায় ইতালি থেকে ১ হাজার ৪৯৬, অস্ট্রেলিয়া থেকে ১ হাজার ৩৪৭ জন ইত্যাদি।

চলতি বছরের গত সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) মোট ৫ লাখ ৩৪ হাজার ২০৭ জন পর্যটক নেপালে এসেছে। শুধু জুলাই মাসেই এসেছে ৫৭ হাজার ৭২৬ জন। তবে পর্যটক আগমনের সংখ্যা এ খাতের পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

পর্যটন বোর্ডের পরিচালকের তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নেপালে ৫৮ হাজার ৮১১ জন  পর্যটক ভ্রমণ করেছিলেন। পরবর্তী বছরগুলোতে কোভিড মহামারির কারণে এখাতে  নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

পর্যটন উদ্যোক্তাদের মতে, চীনা পর্যটকরা দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি অ্যাডভেঞ্চার এবং আউটডোর কার্যকলাপে আগ্রহী। তাই তারা নেপালকে একটি "আল্পস-সদৃশ" গন্তব্য হিসাবে বিবেচনা করে।

নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মোট ৫৭ হাজার ৭২৬  জন পর্যটক নেপালে এসেছিলেন। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৫৭ জন ভারতীয়। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীনা নাগরিকরা। তাদের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৯৩ জন। বোর্ডের মতে, আমেরিকান পর্যটকের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৬১জন।

এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির মধ্যে চীনের পরে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১ হাজার ৩৭৫ জন পর্যটক এসেছেন। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ থেকে ৩ হাজার ৬৩০ জন ব্রিটিশ পর্যটক নেপালে এসেছেন। তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া থেকে নেপালে ১ হাজার ১০২ জন এবং কানাডা থেকে এসেছেন ৬৫৩ জন পর্যটক।

গত মাসে প্রথম বাণিজ্যিক চার্টার্ড ফ্লাইট চীনের চেংডু থেকে পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। তবে পোখরায় এখনো নিয়মিত ফ্লাইট চালু হয়নি। বর্তমানে কাঠমান্ডু বিমান ভ্রমণের মাধ্যমে ভারতীয় শহরের চেয়ে চীনা শহরের সাথে বেশি সংযুক্ত। এটি চীনা পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা হিসাবে দেখা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।    

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ