বাংলাদেশি কারুশিল্প ব্যবসার রূপান্তরকল্পে নতুন ই-বাজার
বাংলাদেশি কারুশিল্প ব্যবসার রূপান্তরকল্পে চলতি বছরে বিহাইভ নামের একটি নতুন ই-বাজার যাত্রা শুরু করেছে। দেশীয় শিল্পশৈলীর বাজারজাতকরণের উদ্ভাবনী সমাধানের অনন্য মিশ্রণে অন্তর্জালে কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে একদল উদ্যমী উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান বিহাইভ ই-বাজার।
বিহাইভ ই-বাজার নামের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নাজাম এম তানভীর হোসেন বলেন, “প্রথমত, beehive বা ‘মৌচাক’ যা আমাদের প্ল্যাটফর্মে স্থানীয় ব্যবসায়িক ব্র্যান্ডগুলোকে একত্রিত করার লক্ষ্যের প্রতীক; এবং দ্বিতীয়ত, স্বভাব অর্থে 'behavior,' যা আমাদের ব্যবসায়ীর বাজারজাতকরণের ও ক্রেতার কেনাকাটার আচরণকে প্রভাবিত এবং উন্নত করার লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করে। আমাদের লোগোর B বাংলাদেশকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করে এবং মুদ্রার আকার আমাদের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক প্রযুক্তি সেবায় প্রবেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দেয়।”
বিহাইভ বর্তমানে অল্পকিছু বাংলাদেশি বুটিক ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান, জীবনযাত্রা ব্র্যান্ড, ঘর সাজানর ব্র্যান্ড এবং বিনোদনের সঙ্গে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। ‘আমরা দেখে শুনে এমন অংশীদারদের সঙ্গে নিচ্ছি যাদের সাথে আমাদের মূল্যবোধ মিলে এবং দেশি নকশার বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য নিয়েই মূলত কাজ করেন, বলেন ফ্রিডা খান, সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক। আমাদের অংশীদারদের কেউ ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসা (fCommerce) হিসেবে সুপরিচিত, বা পরিচিত ডিজাইনার/শিল্পী, আবার কেউ ছোট শহরভিত্তিক তুলনামূলকভাবে অপরিচিত ক্ষুদ্র-ব্যবসায়ী। আমরা তাদের একটি সুযোগ করে দিচ্ছি যেন তারা তাদের তাদের বিপণন, বিক্রয় কার্যক্রম এবং গ্রাহকসেবার সময় এবং খরচ সাশ্রয় করে তাদের পণ্য ও সেবা সহজেই বাজারজাত করতে পারেন।
ব্যবহারকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে করা নকশাকে বিহাইভের একটি মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে তুলে ধরেন ফারাহ শারমিন, সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রযুক্তিবিষয়ক পরিচালক। “আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আমাদের সহ-ব্যবসায়ী এবং তাদের ভোক্তাদের জীবনকে সহজ করা। আমরা সময়ের সাথে এগুলোকে আরও সহজ করতে থাকব।”
অর্থনৈতিক মন্দা এবং অনেক ই-বাজারের জনবল কমানোর এই বছরে bHive-এর সূচনা স্রোতের বিপরীতমুখী মনে হতে পারে। তবে তানভীর তাদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। যদিও ই-কমার্সের বাজারটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং অনেকেই টিকে থাকা নিয়ে সংগ্রাম করছেন, আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি অনন্য পরিকল্পনা কেবল আমাদেরই নয় বরং ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগগুলোকেও এই কঠিন সময়ে সমর্থন করে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
মূল্যহ্রাস-যুদ্ধ এবং ভর্তুকিভিত্তিক অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা এড়িয়ে নিজেদের আলাদা অবস্থান তৈরি করতে চায় বিহাইভ। বরং, প্রতিটি অংশীদার ব্র্যান্ডের মূল্যবোধ ও বক্তব্যের প্রচারের জন্য বিহাইভে থাকছে নির্ধারিত কস্তার। শিল্পী এবং সীমিত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীদের জন্য, প্ল্যাটফর্মটি প্রি-অর্ডার এবং ফরমায়েশি কাজের বাজার, ছবি তোলা এবং ই-দোকান পরিচালনার সহায়তা দিয়ে থাকে।
“আমরা এখনো ফরমায়েসি পোশাক ও শিল্পকর্ম, উপহারের মোড়কের সেবা, এবং হাতেলেখা চিরকুট সেবার মতো পরিষেবাগুলো চালু করার প্রাথমিক পর্যায়ে আছি” বলেন, সাহির হোসেন বিহাইভের সর্বকনিষ্ঠ সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক। তিনি আরও বলেন, “আমরা খুব ছোট করে শুরু করেছি যেন বাজারে টিকে থাকতে পারি। আমরা প্রতিদিন শিখছি এবং বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছি।”
ভিন্ন খাতের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কয়েকজনকে নিয়ে ২০২৩ সালের আগস্টে গঠিত হয় বিহাইভ। একটি অভিযোজনশীল ব্যবসায়িক পরিকল্পনার গল্প নিয়ে একদল প্রতিভাবান উদ্যোক্তাদের একত্রিত করেন দীর্ঘদিন প্রযুক্তি খাতের নীতিমালা নিয়ে কাজ করা তানভীর। "প্রথম দর্শনে আমাদের 'নতুন মোড়কের পুরোনো পণ্য” বলে মনে হবে কিন্তু আমাদের গল্পটার গাঁথুনিটা একটু গভীর," বলেন তানভীর।
এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতাদের স্ব-অর্থায়িত বিহাইভ এখনই প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল খুঁজছে না। “আমরা আমাদের লক্ষ্যে বিশ্বাসী এবং নিজেরাই প্রাথমিক বিনিয়োগ করছি এবং সমমনা ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগ নিতে আগ্রহী যাদের অর্থের পাশাপাশি অন্য কোনোভাবে উপায়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে,” বলেন সহ-প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সালমান মাহমুদ। “আমাদের স্বপ্নটি বাস্তব রূপ নিচ্ছে এটি দেখার চেয়ে বড় পাওয়া হয়তো আর কিছু নেই। আমরা বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে বিশ্বব্যাপী প্রসার করাতে আগ্রহী, আর এ কারণেই আমরা গর্বের সঙ্গে আমাদের #withlovefromBangladesh,” হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করি।” যোগ করেন তিনি।
বিহাইভ সময়ের সঙ্গে একটা ই-বাজারের চেয়ে বেশি কিছু হয়ে উঠতে চায়। শুধুমাত্র শিল্পকর্মই নয়, সেবা, ভ্রমণ, বিনোদন এবং আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে চায়, যেন জীবিকার প্রয়োজনে সদা-অভিবাসী বাংলাদেশিরা দেশের ভেতরে ও বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, তাদের আপনজনদের পাশে থাকতে পারেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে