জন্মনিবন্ধন জটিলতায় আটকে যাচ্ছে নতুন ভোটার
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম নতুন ভোটারের নিবন্ধন। সাভারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদের কার্যক্রম পুরোদমে চললেও জন্মনিবন্ধন নিয়ে জটিলতায় আটকে যাচ্ছে নতুনদের ভোটার হবার সুযোগ।
সাভার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, দেশের সর্বোচ্চ ভোটারসংখ্যা রয়েছে এই উপজেলায়। রয়েছে সর্বমোট ৯ লাখ ৯১৫ জন (সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন ভোটার তালিকা অনুযায়ী) ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৬৯ জন ও নারী ভোটার ৩ লাখ ৬৮ হাজর ৯৩৭ জন। বাকি ১৩ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার।
এর মধ্যে পৌরসভাতেই ভোটার প্রায় দেড় লাখ। ১২টি ইউনিয়নে চলছে মোট মাঠকর্মীদের বাড়ি বাড়ি ভোটার হালনাগাদের কার্যক্রম।
ভোটার হালনাগাদে অংশ নেওয়া মাঠকর্মীদের দাবি, এবারের ভোটার হালনাগাদে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক না থাকা, মা-বাবার ভোটার কার্ডের সঙ্গে নামের অমিল ছাড়াও স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা নিয়ে বিলম্বিত হচ্ছে হালনাগাদ কাজ। আগের তুলনায় অনেক নতুন ভোটার হতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
আশুলিয়ার শিমুলিয়ার একটি অস্থায়ী ক্যাম্প ঘুরে দেখা যাচ্ছে তরুণ, তরুণী ও শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে অংশ নিতে। সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে সঠিকভাবে ফর্ম পূরণের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তবে জন্মনিবন্ধনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা ও পিতা-মাতার নামের সঙ্গে অমিল থাকায় অনেকে ফর্ম পূরণ না করে ফিরে যাচ্ছেন।
রাকিব হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গত বছরগুলো কীভাবে ভোট হয়েছে আমরা দেখেছি। এবারের নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও নির্ভুল। এ ছাড়াও আমাদের পরিবারের অনেক সদস্যকে ভোটার তালিকায় অনেক ভুল দেখেছি। তাই নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে ভোটার হালনাগাদে যেন আরও সতর্ক থাকা হয়। যাতে পরবর্তীতে বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়।
ভোটার হালনাগাদের নিজের ফর্ম পূরণ করে কেমন লাগছে জানতে চাইলে সে বলেন, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম দীর্ঘদিন। সুযোগ এসেছে দেরি করেনি। কাগজপত্র কিছু কম ছিল সেগুলো আবার সংগ্রহ করে ফর্ম পূরণ করতে আসলাম। ভালোই লাগছে। আমাদের বন্ধুরা এসেছে ফর্ম পূরণ করতে।
শ্রাবণী সরকার নামের আরও এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা নতুন ভোটার হতে আগ্রহ নিয়ে এসেছিলাম। এখানে এসে জানতে পারি চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত পত্র লাগবে; কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ যেয়ে তাকে পাইনি। প্রায় এক সপ্তাহ লেগেছে সনদ সংগ্রহ করতে। সেখানে দেখেছি জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করতে অনেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের দেরি হচ্ছে।
মোফাজ্জল নামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও হালনাগাদ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ভিউজ বাংলাদেশ। তিনি বলেছেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু থেকে তরুণদের মধ্যে অনেক উৎসাহ হচ্ছেন। তাদের বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে ইউনিয়নের পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন দিতে একটু আন্তরিক হতে হবে। এ ছাড়া যারা এই এলাকার নয় তাদের ইউপি চেয়ারম্যানের একটি সনদ প্রয়োজন হচ্ছে। সেটা আসতেও বিলম্ব হচ্ছে। এতে করে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে।
সাভার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম ছাড়াও প্রতিদিন গড়ে ২০ জনের বেশি নতুন ভোটার হয়। তবে এবার বাড়ি বাড়ি ভোটার হালনাগাদের কার্যক্রমে প্রায় ৩ শতাংশ ভোটার বাড়বে বলে আশা করেন। এদিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলেই ভোটার হতে পারবেন। তবে জন্মনিবন্ধন জটিলতা নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেন জানান কর্মকর্তারা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে