২৭ বছরের পুরোনো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নবম আসর শুরু বুধবার
বেজে গেছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দামামা। উত্তেজনা আর উত্তাপ ছড়িয়ে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে মাঠের লড়াইয়ে নামছে টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া ৮টি দল। দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শিরোপার জন্য দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ক্রিকেট-যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে দলগুলো। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ‘বি’ গ্রুপে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড। করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে স্বাগতিক পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির। একদিন পর অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের মিশন শুরু হবে। ৯ মার্চ হবে টুর্নামেন্টের ফাইনাল।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ধারণাটি প্রথম এসেছিল আইসিসির এক সময়ের সভাপতি জগমোহন ডালমিয়ার মাথায়। টেস্ট খেলে না, এমন দেশগুলো ক্রিকেট উন্নয়নের লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহের জন্য এই টুর্নামেন্টের আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে আইসিসি। ১৯৯৮ সালে আইসিসি নক-আউট ট্রফি নামে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল টুর্নামেন্টটি। জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়োজিত টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল পাকিস্তান। আইসিসি পরিচালিত পুরুষদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আসলে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। মর্যাদার দিক থেকে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরই এই টুর্নামেন্টের অবস্থান।
এক সময় টুর্নামেন্টটিকে মিনি বিশ্বকাপও বলা হতো। ২০০২ সালে টুর্নামেন্টের নাম বদলে রাখা হয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এই টুর্নামেন্টের আয়োজক দেশ হিসেবে অগ্রাধিকার পেতে থাকে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলো।
অতীতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নেয়া দলের সংখ্যা কম-বেশি হলেও বর্তমানে সেটি কমিয়ে ৮ দলে আনা হয়েছে। ২০০৯ থেকে টুর্নামেন্টের ছয় মাস আগে আইসিসি র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা শুধু ৮টি দল খেলার সুযোগ পাচ্ছে।
২০১৩ ও ২০১৭ সালে টুর্নামেন্ট বাতিল করে দেয়ার চিন্তা করেছিল আইসিসি। পরে সেই ভাবনা থেকে সরে এসেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন সম্ভব হয়নি। সেটি ফিরেছে এ বছর। শুরুর দিকে দুই বছর পরপর এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হতো; কিন্তু ২০০৮ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণে পাকিস্তানে টুর্নামেন্ট হয়নি। এক বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এরপর থেকেই বিশ্বকাপের মতো চার বছর পরপর আয়োজন হয়ে আসছে টুর্নামেন্ট। তবে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির অষ্টম আসর বসেছিল ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে, ২০১৭ সালে।
৭ বছর পর টুর্নামেন্টটির নবম আসর আয়োজন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। মূল কারণ ছিল- দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় বৈরী সম্পর্ক। এজন্য কম জল ঘোলা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ‘হাইব্রিড মডেল’ এ টুর্নামেন্টটি আয়োজন করছে পাকিস্তান। এই মডেলের অধীনে ভারত ক্রিকেট দল পাকিস্তানে গিয়ে খেলবে না। তাদের ম্যাচগুলো হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মাঠে। এমনকি ভারত ফাইনালে উঠলেও ম্যাচ খেলবে আমিরাতে। ভারত-পাকিস্তান ফাইনালে হলে স্বাগতিক হয়েও আমিরাতে মাঠে গিয়ে খেলতে হবে পাকিস্তানিদের। এরপরও টুর্নামেন্টটিকে ঘিরে বেশ উচ্ছ্বসিত পাকিস্তান। কেননা ২৯ বছর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজক হয়েছে তারা। কোনো কিছুরই ঘাটতি রাখেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। স্টেডিয়াম সংস্কার থেকে শুরু তাদের সব অবকাঠামোতে পরিবর্তন এনেছে। টুর্নামেন্ট সফল আয়োজনের জন্য প্রস্তুত আয়োজক দেশটি।
এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অনেকে স্বাগতিক পাকিস্তান ও ভারতকে ফাইনালে দেখছেন। দুটিই উপমহাদেশের দেশ হওয়ায় মাঠ, কন্ডিশন, দর্শক- সবই তাদের হাতের তালুর মতো চেনা। মাঠের লড়াইয়ে কীভাবে সফল হতে হবে, সেটি তাদের চেয়ে বেশি কারো জানা নেই। অতীত ইতিহাস, শক্তি ও সামর্থ্যরে বিচারেও দেশ দুটিকে এগিয়ে রাখছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা।
আবার অনেকে নিউজিল্যান্ডকেও শিরোপাজয়ী দল হিসেবে দেখছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে পাকিস্তানের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি। দলটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ্য এবং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দলই।
আবার ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াও ভালো করতে পারে। উপমহাদেশের মাঠে সম্প্রতি তারা বেশ কিছু ম্যাচ খেলে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করতে পারে তারাও। টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত দুইবার করে শিরোপা জিতেছে।
এরপর আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান দল। র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা দলকে হতাশ করে দিতে পারে তারা। সব মিলিয়ে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের সেরা ৮টি দলের রোমাঞ্চকর লড়াই দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে