নির্ধারিত সময়ের দ্বারপ্রান্তেও জমা পড়েনি কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন
রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমায় ভোগান্তি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নাকাল দেশের সাধারণ মানুষ। তাই নির্ধারিত সময়ের দ্বারপ্রান্ত চলে এলেও জমা পড়েনি কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যক্তি ও কোম্পানি পর্যায়ের ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩৭ জন রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫২ জন। বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ৯ কোটি টাকা।
চলতি বছর এনবিআরের আশা ছিল, ৫০ লাখ রিটার্ন জমা পড়বে।
গত বছরের একই সময়ে এই রিটার্নের সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৩টি। রাজস্ব আদায় হয়েছিল চার হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রিটার্ন জমা ও আদায় বাড়লেও প্রত্যাশার তুলনায় কম। যদিও সফল ক্যাম্পেইন ও ব্যাপক প্রচারের ফলে অনলাইনে রিটার্ন জমা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
আয়কর আইনের ৩৩৪ ধারার (খ) উপধারা অনুসারে, মহামারি, অতিমারি, দৈব দুর্বিপাক ও যুদ্ধকালে সরকার আদেশ দিলে বোর্ড রিটার্ন জমার সময় বাড়াতে পারবে। বাড়ানোর সময়সীমা এক মাস পর্যন্ত।
তবে সারা বছরই রিটার্ন জমা দেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে করদাতা কোনো ধরনের করছাড় পাবেন না। মাসপ্রতি ২ শতাংশ হারে জরিমানাও আরোপ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানোর আদেশ জারি করা হলেও এর কারণ উল্লেখ করেনি এনবিআর।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি পাওয়া আশানুরূপ রিটার্ন না পড়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী অনেক করদাতা এখন দেশের বাইরে। অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অনেকে আবার প্রকাশ্যে নেই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতিও স্বাভাবিক গতি পায়নি। এর প্রভাব পড়েছে রিটার্ন দাখিলে।’
তিনি আরও বলেন, এ বছর অনেক নতুন করদাতা নিবন্ধন নিয়েছেন। তারা ৩০ জুন পর্যন্ত স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে তাদের রিটার্ন জমা করতে পারবেন। সব মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় এ বছর রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ বাড়বে বলেই আশা তাদের।
চলতি বছর বেশ কিছু ক্ষেত্রে ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা, সফল ক্যাম্পেইন ও ব্যাপক প্রচারের ফলে অনলাইনে রিটার্ন জমা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও মোট রিটার্নদাতার সংখ্যা সন্তোষজনক নয়। করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। সমাধানে আসছেন নির্দিষ্ট কর অঞ্চলে। বছরের শেষ প্রান্তে বাসাভাড়া বাড়ানোর নোটিশ, সন্তানের স্কুলের ফি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জেরেও বিপাকে পড়েছেন করদাতারা।
অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে গিয়েও নানা সমস্যায় পড়ছেন করদাতারা। সার্ভারে অতিরিক্ত চাপ, সংশোধনী রিটার্নের সুযোগ না থাকা, রেজিস্ট্রেশনে সমস্যা, রিটার্নের ফাইনাল প্রিভিউ ডাউনলোডে সমস্যা, স্বর্ণ বা ফার্নিচারের মূল্য অজানা অপশন না থাকায় শূন্য দেয়াসহ এফডিআরের ডেটা ইনপুটে জটিলতাসহ নানা সমস্যার চিত্র তুলে ধরছেন তারা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে