Views Bangladesh Logo

মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র সংগ্রহে কোনো সরকারই আগ্রহী নয়

Mir Shamsul Alam Babu

মীর শামছুল আলম বাবু এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার


বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের তথ্যভাণ্ডার ও সংগ্রহের জন্য বেশ পরিচিত মীর শামছুল আলম বাবু। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে প্রকাশিত তার চলচ্চিত্রবিষয়ক দুটি বই ‘কুশলী চিত্রগ্রাহক বেবী ইসলাম’ এবং ‘চিত্রসম্পাদক বশীর হোসেন’ বেশ আলোচিত। এছাড়া ১৯৭১ সালের প্রবাসী বিপ্লবী চলচ্চিত্রকর্মীদের করা কিন্তু ১৯৭২ সালেই হারিয়ে যাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র জাতীয়করণ নীতিমালার পাণ্ডুলিপি তার সম্পাদনাতেই নেপথ্যকথা, টিকা-টিপ্পনিসহ মূল প্রতিলিপিতেই প্রকাশিত হয়েছে।

সম্প্রতি কবি রফিক আজাদের বাড়ি ভাঙচুর, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে ভিউজ বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভিউজ বাংলাদেশের অ্যাডিটরিয়াল অ্যাসিসট্যান্ট শাহাদাত হোসেন তৌহিদ

ভিউজ বাংলাদেশ: সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও খ্যাতিমান কবি রফিক আজাদের ধানমন্ডির বাড়ি ভাঙচুর নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মীর শামছুল আলম বাবু: কবি রফিক আজাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাই তাকে নিয়ে আমরা আবেগ দেখাচ্ছি। তিনিই তো সেই ব্যক্তি, ১৯৭৪ সালে যখন ‘ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো’ কবিতাটি লেখায় নানাভাবে তাকে অনেক বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছিল। এখানে ব্যাপারটা হলো যিনিই হোক, লোকটা কে, কি সেটা দরকার নাই, দরকার হলো আমার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কথা বলছে কী না? যদি তিনি আমার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কথা বলে তাহলে তিনি আমাদের বন্ধু। আমরা তাকে গ্রহণ করব। এখন, কবি রফিক আজাদকে বাড়িটা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। উনি ৯ বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন- এরপর উনার স্ত্রী কবি ও অধ্যাপক দিলারা হাফিজ বসবাস করতেন। এখন সরকার উনার বাড়ির বরাদ্দ বাতিল করেছে এবং অংশবিশেষ ভেঙে ফেলছে- যদিও কবির বাড়ি ভাঙা পড়েনি। এখানে আইনগত কোনো ব্যত্যয় নেই। সরকারি বাড়ি সরকার বরাদ্দ বাতিলের পর সেখানে অন্যকিছু বানাতেই পারে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর যেমন গুলিস্তান সিনেমা হলও পাকিস্তানিদের সম্পত্তি হিসেবে ‘মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট’কে বরাদ্দ দেয়, পরে এটা ভেঙে বিল্ডিং বানানো হয়েছে, সেটা নিয়ে তো কোনো প্রতিবাদ দেখাইনি আমরা। তাই না? অন্য অনেক স্মৃতিবিজড়িত ভবন ভাঙা হয়েছে- সুস্পষ্ট আইন থাকার পরও অনেক প্রত্নতত্ত্ব ভেঙে ফেলা হয়েছে, কই আমরা তো তেমন প্রতিবাদ করছি না।

অন্যরূপ একটা উদাহরণ দেই- কর্নেল তাহের ও খালেদ মোশারফ এই দুজন কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের সমর্থক না; কিন্তু এই দুজনকে তাদের ইন্তেকালের পর আওয়ামী লীগ ব্যবহার করছে। কারণ তারা আওয়ামী লীগের পারপাস সার্ভ (উদ্দেশ্য সাধন) করে। যেহেতু তারা জিয়াউর রহমানের বিরোধী, যে কোনোভাবেই হোক জিয়াউর রহমানের সময় তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। আইন বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই কারণে আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। যেমন ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীতে প্রচুর ক্যু হয়েছে। প্রচুর লোককে বিচার করে মারা হয়েছে। খেয়াল করুন, যখন সেনাবাহিনীতে কেউ যোগদান করে, সেনাবাহিনীর কিছু নিয়মকানুন আছে। সেই নিয়ম মেনেই বাহিনীতে যোগ দিতে হয়; কিন্তু যখন বাহিনীর কেউ সেই নিয়মকানুন ভাঙে, তখন কিন্তু অথরিটি তাদের শাস্তি দিতেই পারে। মানবিক দিক দিয়ে না হলেও আইনগতভাগে এটা কিন্তু সঠিক। যেমন ১৯৭১ সালে আমাদের যেসব সেনা অফিসার, যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল- তারা কি করেছে? তারা তো আসলে চাকরির নিয়মের বিদ্রোহ করেছে। কারণ তারা তো পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তাদের আইনকানুন মেনে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার শপথ নিয়েছিল; কিন্তু তারা একপর্যায়ে এসে ক্ষমতাসীন সরকারের বিপক্ষে বিদ্রোহ করেছে। বিদ্রোহ করে তারা জয়লাভ করেছে। যদি জয়লাভ না করতো তাহলে কী হতো? পাকিস্তান অথরিটি তাদের কোর্ট মার্শাল দিত। ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে বিচার করতো- তাই না?

এখন, ১৯৭৭-৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে সেনা কর্মকর্তারা বিদ্রোহ করেছিল যে কোনোভাবেই হোক, যে কোনো কারণেই হোক সে কারণগুলো যৌক্তিক বা অযৌক্তিক যাই হোক - তারা জয়লাভ করতে পারেনি। যেহেতু তারা জয়লাভ করতে পারেনি সেহেতু সেনা নিয়ম অনুযায়ী সরকারের ক্ষমতাসীনরা কোর্ট মার্শাল করেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মুক্তিযোদ্ধা সেনা। এসব বিচারের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়; কিন্তু দেখবেন কখনই এসব বিচারের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। কারণ ঘটনাগুলো আইনের মোড়কে ঘটনো হয়েছিল।

ভিউজ বাংলাদেশ: কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতো ধ্বংস করা হচ্ছে, তাই না?

মীর শামছুল আলম বাবু: বলা হচ্ছে কবি রফিক আজাদের বাড়ির অংশ ভাঙার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। কারণ রফিক আজাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত প্রচুর স্মৃতিচিহ্ন, ভবন, স্থাপনাতো সব সরকারের আমলেই সরকারি আদেশেই ভাঙা হয়েছে। যে রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিযুদ্ধের আইকনিক কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে- ৭ মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ভাষণ - সেই রেসকোর্সের ময়দানেতো বঙ্গবন্ধুই নিজ হাতে গাছ লাগিয়ে পরিবর্তনের সূচনা করেছেন। গত আওয়ামী লীগ সরকারও সেখানে শিখা চিরন্তন, গ্লাস টাওয়ার, ভুগর্ভস্থ জাদুঘর, ওয়াটার বডি, মঞ্চ, টয়লেট, রেস্টুরেন্ট, ওয়াক-ওয়ে এসব বানাচ্ছিল - সেটাওতো একপ্রকার স্মৃতি ধ্বংস- তাই না?

মুক্তিযোদ্ধা কবি রফিক আজাদকে বাড়িটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এখন তার বাড়ি ভাঙা মানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধ্বংস করে দেওয়া? এটা তো না। বরং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়ি ভেঙে ফেলাটা হলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধ্বংস করে দেওয়া। এটা মহাঅন্যায়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি যদি এতই আবেগের বিষয় হয়, তবে দুইটা ঘটনা বলি- ১৯৯৬ সালের একটা ঘটনা। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ভারতীয় বাহিনীর ইস্ট্রার্ন কমান্ডে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সমস্ত সামরিক দলিলপত্র ছিল। সামরিক দলিলগুলোই আসল দলিল। যে কোনো দলিলের যখন ২৫ বছর হয়ে যায় তখন বিশ্বস্বীকৃত একটা নিয়ম হলো রিসাইকেল করে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিলগুলো সংরক্ষণ করে বাকিগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়। অধিকাংশ দেশ সেগুলোকে আর্কাইভে রাখে, কিছু পাবলিকের জন্য অবমুক্ত করে দেয়। তো ফোর্ট ইউলিয়াম কমান্ড যখন দলিলগুলোর ২৫ বছর বয়স হয়ে যায় তখন বাংলাদেশ সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানায়- তখন শেখ হাসিনার সরকার। সরকারকে তখন জানানো হয় যে, তারা দলিলগুলো ফেলে দিবে, এগুলো রাখবে না। বাংলাদেশ যদি নিতে চায় তো যেন নিয়ে যায়। তখন বাংলাদেশ সরকার এটার জন্য একটা কমিটি করে। কমিটিতে ড. মুনতাসীর মামুনসহ সবসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা কাজ করে এ ধরনের লোকজন ছিল। সরকার কমিটিকে বললো, দেখো কি করা যায়। কমিটি রিপোর্ট দিল এসব দলিলপত্র আমাদের দরকার নাই, তারা চাইলে ধ্বংস করে দিতে পারে। তখন ফোর্ট উইলিয়াম দলিল নষ্ট করে ফেলেছে।

দ্বিতীয় ঘটনা- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিল সংরক্ষণের জন্য ১৯৭৮ সালের জানুয়ারিতে সরকারের পক্ষ থেকে অধ্যাপক মফিজুল্লাহ কবীরকে চেয়ারম্যান ও হাসান হাফিজুর রহমানকে সদস্য সচিব করে একটা প্রকল্প ও কমিটি করা হয়েছিল। এ কমিটিতে আরও অনেক গুণী সদস্য ছিলেন। এই প্রকল্পের অধীনে প্রচুর দলিল সংগৃহীত হয় ও ১৯৮২ সাল থেকে দলিলগুলো ছাপানো শুরু হয়। কমিটির কাছে সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠার দলিল জমা পড়েছিল। সেই দলিলগুলো থেকে মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার পৃষ্ঠার দলিল ছাপানো হয়েছিল ১৬ খণ্ডে- যেটা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে স্বীকৃত দলিল। বাকি পৌনে দুই লাখ পাতার দলিল কোথায় গেল? প্রশ্নটা ওই জায়গায়। পরে যখন প্রকল্প বাতিল করা হয় তখন দলিলগুলো চলে আসলো বাংলাদেশে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের হাতে। তারপর সেটা আসলো জাতীয় জাদুঘরে; কিন্তু এগুলোর কোনোটা আর প্রকাশিত বা প্রদর্শিত হয়নি। সবগুলো বস্তাবন্দি করে গোডাউনে ফেলে রাখা হয়েছিল। এক সময় তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ দলিলগুলোর আর কোনো খোঁজ নেই। এখন বলুন, আমাদের কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ- একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বরাদ্দ দেওয়া একটি সরকারি বাড়ি নাকি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের অরজিনাল দলিল? কোনটা বেশি জরুরি?

ভিউজ বাংলাদেশ: অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের দলিলগুলোই বেশি জরুরি, বেশি প্রয়োজনীয়, বেশি আবেগের?

মীর শামছুল আলম বাবু: তাহলে? আরেকটা কথা বলি, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ যখন ভারতে গিয়েছিলেন, তখন তাকে দুটো ডিভিডি দেওয়া হয়েছিল, সেই ডিভিডিতে একাত্তর সালে ভারতীয় টেলিভিশন-রেডিওতে যত অনুষ্ঠানে হয়েছিল সেগুলোর কপি ছিল। সেই কপি রাষ্ট্রীয় তোষাখানায় রাখার কথা কিন্তু সেগুলোর কোনো হদিস নাই।

১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যতগুলো নাটিকা-কবিতা-জাগরণমূলক গান ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার হয়েছে সবগুলোর মূল পাণ্ডুলিপি ও টেপ দুইটা সুটকেস ভর্তি করে ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেগুলোও ১৯৭৪ সালের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে গেছে।

অপরদিকে, জহির রায়হান ১৯৭১ সালে একটা কমিটি করেছিল বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত নিয়ে। সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম। হাসান ইমাম তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ১৯৭২-এর জানুয়ারিতে জহির রায়হানের নিখোঁজের পর ট্রাঙ্কভর্তি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দলিলপত্রগুলো কী করবেন তা বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, এটা তুই মিহিরকে দিয়ে রাখ। নুরুল মোমেন চৌধুরী মিহির একজন পুলিশ অফিসার- ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, স্বাধীনের পর এনএসআইয়ের প্রধান হয়েছেন। হাসান ইমাম বঙ্গবন্ধুর কথা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সমস্ত ডকুমেন্ট মিহিরকে দিয়েছিলেন। কিছুদিন পর সেই মিহিরকে লন্ডনের দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল সরকারি কাজেই। উনি এরপর লন্ডনেই ছিলেন। গাফফার চৌধুরী, এম আর আকতার মুকুলদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তারপর থেকে সেই দলিলের কোনো খোঁজ নেই।

ভিউজ বাংলাদেশ: তার মানে আপনি বলছেন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক দলিলপত্র সংগ্রহে কোনো সরকারই আগ্রহী নয়?

মীর শামছুল আলম বাবু: না, করে না তো। আমাদের আগে কারণটা খুঁজতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র সংগ্রহে কোনো সরকার সেই অর্থে আগ্রহ দেখায়নি। এ বিষয়ে আরেকটি কথা বলি, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঁচটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানানো হয়েছিল। যার একটার নাম ‘স্টপ জেনোসাইড, আমরা জানি। বাকি চারটার নাম আমরা অধিকাংশ মানুষ জানি না। পাঁচটার মধ্যে একটা ওই সময়ই হারিয়ে গেছে। বাকি চারটা - জহির রায়হানের ‘স্টপ জোনোসাইড’ ও ‘এ স্টেট ইজ বর্ন’, আলমগীর কবিরের ‘লিবারেশন ফাইটারস’, বাবুল চৌধুলীর ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’। এখানে প্রথম তিনটি হলো বিশ মিনিটের পরেরটা হলো ১৪ মিনিটের। এ ডকুমেন্টারিগুলোর মূল নেগেটিভ ১৯৭২ সালেই নিয়ে আসা হয়েছিল- এর মধ্যে স্টপ জেনোসাইডের মূল নেগেটিভ বিমানেই হারিয়ে গিয়েছে। বাকি তিনটি দেশে আসার পর সরকারের কাছেই ছিল- দুই এক বছরের মধ্যেই মূল নেগেটিভগুলোর হদিস হারিয়ে যায়- এখন সবগুলোর নেগেটিভতো দূরের কথা - প্রিন্টও পাওয়া যায় না - সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে এই চারটি ডকুমেন্টারি শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রথম ফেস্টিভালে দেখানো হয়েছিল। তারপর এগুলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কাছের লোকদের কাছেই ছিল। আলমগীর কবির, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী প্রমুখসহ বহু চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে ছিল, সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফিল্ম অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের কাছেও ছিল। এখন কেউ চাইলে সবগুলো ডকুমেন্টারি দেখতে পারবে না- যে দুই একটা দেখা যাবে সেগুলোও মূল প্রিন্ট নয়। এগুলো তো সুশীল বলে পরিচিত লোকদের কাছেই ছিল। তাদের কাছ থেকেই হারিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তো এগুলোর মধ্যে বেশি নিহিত।

অপরদিকে, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের মূল ভাষণটি ১৮ মিনিটি ৩৬ সেকেন্ডের; কিন্তু আমরা যেটা পাই সেটা ১৩ মিনিটের মতো। বাকিটা কই? সরকার চাইলেই বের করতে পারে। গত ১৬ বছর যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় ছিল তারা চাইলেই বের করতে পারতো, করেনি তো। আমরা যে বাংলাদেশের ৭ মার্চের ভাষণ দেখি এটার চেয়ে আরও ভালো কম্পোজিশনের, কোয়ালিটির এবং রঙিন সেলুলয়েডে চিত্রায়িত অন্য বিদেশি চ্যানেলগুলোর রেকর্ড করা ফিল্ম ফুটেজ আছে। কই সেটাতো কখনোই নিয়ে আসা হয়নি। সেটা না করে বাংলাদেশিটাকেই সাড়ে ৪ কোটি টাকা খরচ করে কালার করা হয়েছে। অথচ ওই টাকা দিয়ে বাইরের দেশেরগুলো আনা যেত- তাই না?

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ