Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

জলবায়ু তহবিল

আর নয় অনুদানের নামে ঋণ প্রদান

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

লবায়ু ঝুঁকির কারণে বিশ্বে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার কারণে বাংলাদেশে বাড়ছে আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস, তাপপ্রবাহ ও খরা। গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ হলো শিল্পায়নের ফলে উন্নত দেশগুলোর দুই শতাব্দীর কার্বন নিঃসরণ। এর ক্ষতিস্বরূপ উন্নত দেশগুলো অনুন্নত ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার চুক্তি করেছিল। অথচ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই দেশগুলো অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে না। বরং দেখা যাচ্ছে অনুদান দেয়ার বদলে তারা বিভিন্ন শর্তে ঋণ দিচ্ছে।

গত ১৫ মে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান একে দুর্নীতি বলে অভিযুক্ত করেছেন। গত মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয় মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতিসংঘের গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড-জিসিএফের অদক্ষতা এবং দুর্নীতির কারণে সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে টিআইবি জানায়, জলবায়ু তহবিল থেকে ৪৫ শতাংশ অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫৫ শতাংশের মধ্যে ঋণ ৪১ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ১৪ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই সংস্থা নিজেদের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনুদানের নামে ঋণ প্রদান করছে। সবুজ জলবায়ু তহবিলের মধ্য দিয়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। জিসিএফ ফান্ডের কার্যক্রম হতাশাজনক। তাদের সুশাসনের ঘাটতি আছে। তারা নিজেদের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনুদানের নামে ঋণ প্রদান করছে। সবুজ জলবায়ু তহবিলের মধ্য দিয়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবিলায় ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার মিলিয়ন ডলার। অথচ তহবিল থেকে পাওয়া গেছে মাত্র ১ হাজার ১৮৯ মিলিয়ন ডলার। আর গেলো বছর ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ৮০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ এই তহবিল থেকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের ৩টি প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছে; কিন্তু খুবই কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রকল্পগুলো পেতে হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশ এমনিতেই নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে আছে। রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিও চরমে। এই অবস্থায় ঋণের বোঝাও বাড়ছে। উপকার করার বদলে বাংলাদেশকে নানা দিক দিয়েই বিপদে ফেলছে আন্তর্জাতিক তহবিল সংস্থাগুলো।

নিজেদের উন্নতির স্বার্থে দুশ বছর ধরে পশ্চিমা দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িয়েছে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর বদলে তারা এর ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রেখেছে। অন্যদিকে অনুন্নত দেশগুলোর ওপর তারা ক্রমাগত চাপিয়ে দিচ্ছে ঋণের বোঝা। এ যেন ডাকাতির ওপর ডাকাতি। তাদের কারণেই আজ আমাদের দুরাবস্থা, তারাই আবার আমাদের নতুন ফাঁদে ফেলছে।

তাই বাংলাদেশ সরকারকে জনগণের স্বার্থে জিসিএফের বিরুদ্ধে আরও দেনদরবারে যেতে হবে। বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, আইডিবি, এডিবি ও ইবিআরডির মতো বিত্তবান আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে লাভবান না করে জিসিএফ যেন বাংলাদেশের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকায় সে জন্য তাদের চাপ দিতে হবে। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে আরও সচেতনভাবে ভাবতে হবে। নিজের প্রাপ্য আদায় না করে বাংলাদেশ সরকার কেন ঋণ নেয়?

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ