আর নয় ‘ভুল করে’ ভুল লোককে গ্রেপ্তার
মিথ্যা কিংবা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের দেশের বিদ্যমান বিচারব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে, আবার কখনো ভুলক্রমে হয়রানিমূলক মামলার শিকার হন। যদিও আইনানুযায়ী কাউকে ভুল করে মামলার পক্ষ করা হলে অথবা পক্ষ থেকে বাদ দেয়া হলে মামলার কোনো ক্ষতি হয় না। মামলা তার আপন গতিতেই চলে। তবে ‘ভুল করে’ ভুল লোককে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা খুবই দুঃখজনক।
গত ২৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বাগবাড়ীর বাসিন্দা মমতাজের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। অথচ পুলিশ পূর্ব চান্দঘাটের মমতাজ ডাক নামের শারমীনকে গ্রেপ্তার করে সন্তানসহ রাতভর থানায় আটকে রাখে। এমনকি অন্য একজনকে তার স্বামী বলেও দাবি করে পুলিশ। পরদিন আদালতে চালান দেয়া হয়। বিচারক অবশ্য তাকে জামিন দিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় শারমীনের সংসারে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্বামী সেকেন্দার আলী এখন তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। খরচ দেয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিশের ভুলে শারমীনের সংসার এখন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। দেশে ভুল করে ভুল লোককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। বারবার এমন ভুল দেশের জন্য যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকে যায়।
প্রসঙ্গক্রমে এমন একটি আলোচিত ঘটনা উল্লেখ করা যায়, ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুল করে ৩৩টি মামলা করে দুদক। নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিক জাহালম তখন দুদকে গিয়ে বলেন, তিনি আবু সালেক নন, সোনালী ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্টও নেই। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবু সালেকের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও তার নয়; কিন্তু দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেদিন জাহালমকেই আবু সালেক হিসেবে শনাক্ত করেন।
পরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোড়াশাল থেকে জাহালমকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে আদালতেও জাহালম দুদকের পরিচয় বিভ্রাটের বিষয়টি পরিষ্কার হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। সেই মামলার রায়ে ২০১৯ সালে উচ্চ আদালত বলেছিলেন, ‘যাচাই-বাছাই না করে কোনো নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। যাচাই-বাছাই না করে ভুল আসামি গ্রেপ্তার করা পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানাতে নির্দেশ দেন আদালত।’
কিন্তু আসামি না হয়েও নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা দণ্ডনীয় অপরাধ সত্ত্বেও আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কর্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। তাই আমরা আশা করব, ‘ভুল করে’ গ্রেপ্তার হওয়া শারমীন ন্যায় বিচার ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাক- তার ব্যবস্থা করা একান্ত কাম্য।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে