আর নয় ভোটার তালিকা হালনাগাদে অবহেলা
একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাথমিক শর্ত হলো যথাযথ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা; কিন্তু বিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় বাংলাদেশের ভোটার তালিকা হালনাগাদে যথারীতি অবহেলা হয়ে আসছে। নাম-ঠিকানা-পদবিসহ অনেক কিছুতেই সমস্যা থাকে। পরে সেসব সংশোধন করতে গেলেও অনেক জটিলতা পোহাতে হয়। তা ছাড়া ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এখনো অনেকের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
এর মধ্যে আগামী বছরের ২ মার্চের পর থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাধারণত আইন অনুযায়ী, ভোটার তালিকার খসড়া প্রতি বছর ২ জানুয়ারি মধ্যে হালনাগাদ প্রকাশ করা হয়। ২ মার্চ প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত তালিকা। তবে এ বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।
নতুন ভোটার হিসেবে যুক্ত হওয়ার জন্য ইসির কাছে ১৭ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহে রয়েছে। এসব নাগরিক ২০২৫ সালে যে তালিকা প্রকাশ করা হবে, সেখানে তারা যুক্ত হবেন। এই ১৭ লাখ নাগরিকের মধ্যে ১৩ লাখের তথ্য নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালে সংগ্রহ করেছিল। বাকি নাগরিকরা নিজেরা ইসির কার্যালয়ে গিয়ে নিবন্ধিত হয়েছেন। তবে তাদের ধারণা, পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর ৪৫ লাখের মতো নাগরিকের নতুন ভোটার হিসেবে যুক্ত হওয়ার কথা। সে হিসাবে ২৭ থেকে ২৮ লাখ ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিক এ বছর এখনো ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হননি।
নিঃসন্দেহে কাজটি বিশাল ও সময় সাপেক্ষ; কিন্তু এর মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী চাপের মধ্যেও আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ এখন পর্যন্ত ঘোষণা করেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তবে সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এবং কোনো কোনো উপদেষ্টা ২০২৬ এর জুন-জুলাই নাগাদ নির্বাচন হতে পারে বলে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন। দলগুলোর চাওয়া অনুযায়ী, এরই মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছে সরকার। এটিকে সরকারের নির্বাচনী যাত্রা হিসেবে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। আর এ কমিশনের প্রথম বৈঠকেই ভোটার তালিকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়াকে নির্বাচনের আরেক ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত সবই খাতা-কলমে, আলাপ-আলোচনায়, মাঠ পর্যায়ে কোনো কাজই শুরু হয়নি। যে ২৭-২৮ লাখ নাগরিক ভোটার হওয়ার যোগ্য তারা ভোটার হিসেবে কবে নাগাদ নিবন্ধিত হবে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হওয়ার জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ দরকার; কিন্তু অনেক জায়গায় চেয়ারম্যান, কমিশনার নেই এখন। সেই ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ কীভাবে যোগাড় হবে তাও একটা বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীরসহ দলিত মানুষের নাম-পদবিসহ বিভিন্ন তথ্যে অনেক সমস্যা আছে। সেগুলোও সময় নিয়ে সমাধান জরুরি।
কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার এখন ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন; আর নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৯৩২ জন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন।
তারপরও ভোটার তালিকা হালনাগাদের ঘোষণা দেয়ায় ইসিকে অভিনন্দন। সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই কেবল ২০২৫ সালেই জাতীয় নির্বাচন করার সুযোগ আছে। এখন নির্বাচন কবে হবে এটাই বড় প্রশ্ন। এর ওপরই সব নির্ভর করে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে