মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা প্রণয়নে এবার যেন অবহেলা না হয়
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা, জাতির জন্য এ এক দুর্ভাগ্যজনক বিষয় বটেই। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এখনো রয়ে গেছে অজানা। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা এখনো নানারকম সরকারি ভাতা ও সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ভুয়া সনদধারীদের শনাক্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলের ১৫ বছরে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে সনদ দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটির অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এর পেছনে ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পার হলেও এখনো মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল ও বিতর্কমুক্ত তালিকা হয়নি। একাধিকবার বদলানো হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও। এ অবস্থাকে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অসম্মানজনক বলছেন তারা।
গতকাল সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বদলে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও। প্রস্তাবিত নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারীরাই হবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে বিশ্ব জনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী, শিল্পীসমাজসহ যারা মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন তাদের ‘যুদ্ধ সহায়ক’ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সর্বনিম্ন বয়সেও পরিবর্তন আসতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স হতে পারে ১৩ বছর।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড এখন পর্যন্ত ১১ বার বদলানো হয়েছে। অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে সাতবার। আমরা চাই এবারই এর শেষ হোক। ৫৩ বছর ধরে যদি আমরা মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও তালিকা চূড়ান্ত না করতে পারি, তা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হবে। পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধকে সর্বজনীন করা হোক। কোনো বিশেষ দল যেন মুক্তিযুদ্ধকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার না করতে পারে সে বিষয়ে কঠিন আইন করা হোক।
গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা উন্মুক্ত স্থানে টানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সরকারি অফিসের নোটিশ বোর্ডের পাশাপাশি উন্মুক্ত স্থানে (পাবলিক প্লেস) এই তালিকা টানিয়ে দেয়া হবে। যাচাই শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাতিল করা হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ, যাতে স্থানীয় জনগণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে অবগত হতে পারে; কারও বিরুদ্ধে ‘অমুক্তিযোদ্ধা’ বা ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’র অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে যে কোনো নাগরিক অভিযোগ জানাতে পারে।
এই উদ্যোগটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, রাজাকারের তালিকা করার কাজে এ সরকার হাত দেবে না। রাজাকারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না করা হলেও আমরা চাই চিহ্নিত রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হোক। তা নাহলে দেশদ্রোহী রাজাকারও রাষ্ট্রের নানা সুবিধা নেবে। রাজাকারদের তালিকা উন্মুক্ত স্থানে না টানালেও সরকারের কাছে চিহ্নিত রাজাকারদের একটি তালিকা অবশ্যই থাকা উচিত। এ কথা সত্য, এতদিন পর, নানা রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর সেটা অনেকখানি কষ্টকর হবে; কিন্তু এখনো তো বেঁচে আছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ সময়কালের অনেক মানুষ, রাজাকারদের একটা প্রাথমিক তালিকা তৈরি খুব কঠিন হওয়ারও কথা নয়।
সর্ব শেষ আমরা চাই, মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা প্রণয়নে এবার যেন অবহেলা না হয়। এবারও যদি মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা প্রণয়নে অবহেলা হয়, এই তালিকা হয়তো আর কোনোদিনই সংশোধন করা যাবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে