Views Bangladesh Logo

সংবিধান নিয়ে কাউকে ছেলেখেলা করতে দেয়া যাবে না

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। মূলত আন্দোলনকারী ছাত্ররাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। নতুন এই সরকারের স্বরূপ নিয়ে অনেকের মনেই দ্বিধা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাংবিধানিক সরকার নয় আবার বিপ্লবী সরকারও বলা যাবে না। কারণ আমাদের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো প্রভিশন রাখা হয়নি, যদিও উপদেষ্টারা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যমান সংবিধানকে বাতিল করেনি। অবশ্য সংবিধান বাতিল করার ক্ষমতাও তাদের নেই।


নির্বাচিত জাতীয় সংসদ অথবা গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান বাতিল হতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থায় সংবিধান বাতিলের আর কোনো পন্থা নেই। দেশে যদি সামরিক আইন জারি হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংবিধান বাতিল করতে পারে। কাজেই আগামীতে এই সরকার সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্নে সংকটে পড়তে পারে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের সহজ উপায় হচ্ছে বিদ্যমান সংবিধানকে সংশোধন করা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই পথেই অগ্রসর হবে বলে মনে হচ্ছে। সাংবিধানিক সংস্কার নয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে যথাসম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। সংবিধান সংশোধনের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হচ্ছে জাতীয় সংসদ; কিন্তু এতদসত্ত্বেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিদ্যমান সংবিধান যা ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত তা সংশোধন করা হবে নাকি পুনর্লিখন করা হবে। কেউ কেউ অতি আবেগপ্রবণ হয়ে প্রচলিত সংবিধানকে বাতিল করে সংবিধান পুনর্লিখনের প্রস্তাব করছেন। কাজেই বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন/পরিমার্জন করা হবে নাকি সম্পূর্ণ সংবিধানকে বাতিল করে নতুন করে সংবিধান প্রণয়ন করা হবে তা নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের বর্তমান সংবিধান কেউ পুনর্লিখন করতে চাইলে সেটা হবে একান্তই দুঃসাহস। এটা জনগণ কখনোই মানতে পারে না। আর বাংলাদেশে নতুন করে সংবিধান প্রণয়নের মতো যোগ্য মানুষ কি আছেন? স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বর্তমান সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ড. কামাল হোসেনের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অনেকেরই মতভেদ থাকতে পারে; কিন্তু বর্তমান সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভারতের সংবিধানের জনক বলা হয় ড. ভীম রাও আম্বেদকারককে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা ছিল অনেক আম্বেদকারকের মতোই। তাই যারা সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলছেন তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সংবিধান একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাষ্ট্র বা মানুষ সংবিধানের জন্য সৃষ্টি হয় না। বরং সংবিধানই মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য প্রণীত হয়। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সংবিধানের যে কোনো ধারা বা উপধারা পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন বা বিয়োজন হতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই বলে সংবিধান পুনর্লিখন করতে চাওয়াটা এক ধরনের দুঃসাহসই বটে।

বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান গণআকাঙ্ক্ষা পূরণে কতটা সক্ষম তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছিল। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল তা হয়তো সেই সময়ের চাহিদা পূরণে সক্ষম ছিল; কিন্তু এখন আর সেই সংবিধান হুবহু মেনে চলার কোনো সুযোগ নেই। শাসকচক্র মূল সংবিধানকে বারবার পরিবর্তন ও সংশোধনের মাধ্যমে একে বিকলাঙ্গ করে ফেলেছে। সংবিধানকে এমনভাবে পরিবর্তন ও সংশোধন করা হয়েছে যা শাসকচক্রকে স্বেচ্ছাচারী হতে সহায়তা করেছে। বর্তমান সংবিধান জনকল্যাণ নয় শাসকদের স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তাই বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে। সংবিধান এমনভাবে সংশোধন করতে হবে যাতে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। সংবিধান সংশোধনের জন্য যে কমিশন গঠন করা হয়েছে তাদের কার্য পরিধি বা টার্মস অব রেফারেন্স কী হবে সঠিকভাবে ব্যাখ্যায়িত হওয়া প্রয়োজন।

সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রথমেই দৃষ্টি দিতে হবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে। কী পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা থাকা দরকার। আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার কোনোটিই বিতর্কমুক্ত ছিল না। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে ৫টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলো মোটামুটি সুষ্ঠু এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। গত সরকার ২০১৩ সালে আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাদ দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে ৫টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে কোনো রাজনৈতিক দলই পরপর দু’বার ক্ষমতায় আসীন হতে পারেনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকেয়াভিলি প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, কোনো সরকারই গণপ্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ করতে পারে না। তাই পরবর্তী নির্বাচনে সাধারণ মানুষ নতুন কোনো দলকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন করতে চায়। যদি উপযুক্ত নতুন কোনো দল খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে ‘ইমিডিয়েট পাস্ট’ সরকারের পূর্বের রাজনৈতিক দলকেই আবারও ক্ষমতায় বসিয়ে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ম্যাকেয়াভিলি এই উক্তির বিস্ময়কর প্রতিফলন দেখতে পাই। সংবিধান সংশোধনপূর্বক এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে যেখানে নির্বাচনকালীন সময়ে কোনো দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকবে না।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই বিগত সরকারের প্রভাবমুক্ত সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য এবং যাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তি অথবা কর্মজীবনে দুর্নীতি বা পক্ষপাতিত্বের কোনো অভিযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে বিদায়ী সরকারের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা প্রভাব থাকতে পারবে না। জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা আছে ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনারদের মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে।

বিদ্যমান সংবিধানে এক ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী হতে পারবেন সে সম্পর্কে কিছু বলা নেই। আগামীতে যে সংবিধান সংশোধন করা হবে সেখানে সুস্পষ্ট বিধান যুক্ত করা যেতে পারে যে কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হতে পারবেন না। একই ব্যক্তি সরকার প্রধান এবং দলীয় প্রধান হতে বা থাকতে পারবেন না। কারণ কোনো ব্যক্তি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তখন তিনি সারা দেশের বা সব মানুষের প্রধানমন্ত্রী তিনি; কিন্তু কোনো বিশেষ দলের প্রধানমন্ত্রী নন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অনেকেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা বলছেন; কিন্তু এই বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ রাজনৈতিক দল একটি বিমূর্ত ধারণামাত্র। রাজনৈতিক দল কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে পারে না। মানবতাবিরোধী অপরাধ করে রাজনৈতিক নেতারা যারা দল পরিচালনা করেন। কাজেই মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজনৈতিক দল নয় দলের নেতাদের নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন থাকা অবস্থায় দৃশমান কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে তাকে চিরদিনের জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে। কেউ সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কোনো বড় ধরনের অপরাধ করলে তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণসহ কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে। নেতাকে নিষিদ্ধ না করে যদি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে সেই নেতা অন্য কোনো নামে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে পারেন অথবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত হয়ে রাজনীতি করতে পারেন। দলের কারণে কোনো নেতা বা নেত্রী কলুষিত হয় না। বরং নেতা বা নেত্রীর অপকর্মের কারণেই একটি দল কলুষিত হয়। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা তিনি ক্ষমতাসীন দলেরই হোন আর বিরোধী দলেরই হোন দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ অর্জন অথবা বিদেশে পাচার করে থাকেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে। পরবর্তীতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন তাহলেই শুধু বাজেয়াপ্তকৃত সম্পত্তি ফেরত দেয়া যেতে পারে।

কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে পরবর্তীতে সেই দল যদি ক্ষমতাসীন হয় তাহলে সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়। এটা কোনোভাবেই সঙ্গত নয়। মামলা দায়ের করা হলে সেই ব্যক্তিকে আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে আসতে হবে। আর যদি মামলা মিথ্যে প্রমাণিত হয় তার, যিনি মামলা দায়ের করেছিলেন তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া যেতে পারে।

বিভিন্ন বিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যের পরিবর্তে যোগত্যাকে প্রাধান্য দিতে হবে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন, নির্বাচন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনোভাবেই দলীয়করণ করা যাবে না। বিধিবদ্ধ কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এবং বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের প্রয়োজন হয়। এটা বাতিল করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো ব্যক্তিকে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদানের জন্য সুপারিশ করেন তিনি যোগ্যতার চেয়ে দলীয় আনুগত্যকেই প্রাধান্য দেবেন। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য এখানে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপকভিত্তিক দলীয়করণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়েন তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে চাকরিচ্যুত করে শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। এমনকি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি অবসরে গমন করেন তাহলেও তার স্থাবব-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধান রাখা যেতে পারে। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, দেশের মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটধারী ৫৫ হাজার ব্যক্তি আছেন যাদের জন্ম ১৯৭১ সালের পর। এদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করেছেন তাদের প্রাপ্ত বেতন-ভাতা রাষ্ট্রের অনুকূলে জব্দ করা যেতে পারে। কারণ তারা ব্যক্তিগত লাভের আশায় মহান মুক্তিযোদ্ধকে কলুষিত করেছেন।

সংবিধানের একটি ধারায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিজ দলের বাইরে গিয়ে কোনো ইস্যুতে ভোট প্রদানের সুযোগ রহিত করা হয়েছে। ফলে দলের পক্ষ থেকে কোনো ক্ষতিকর বা আপত্তিকর প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও দলীয় সংসদ সদস্যদের তা আবশ্যিকভাবে সমর্থন দিতে হয়। এতে একজন সংসদ সদস্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়। সংবিধানের এই ধারাটি বাতিল করা আবশ্যক। একই সঙ্গে কোনো ইস্যুতে ভোটাভুটির প্রয়োজন হলে সংসদে উপস্থিত সদস্যরা হাত তুলে সমর্থন দিয়ে থাকেন। কোনো ইস্যুতে ভোটগ্রহণের আবশ্যক হলে তা গোপন ভোটের মাধ্যমে হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। কারণ হাত তুলে সমর্থন জানানোর পদ্ধতির কারণে অনেকেই তাদের স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারেন না।

সংবিধানের আরও কোনো ধারা বা উপধারা যদি মানবতাবিরোধী এবং জনকল্যাণবহির্ভূত থাকে তা সংশোধন করা যেতে পারে। সংবিধান রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল যার যা অনুসরণ করে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা এবং জনকল্যাণ সাধন করে থাকেন। তাই সংবিধান নিয়ে কাউকে ছেলেখেলা করতে দেয়া যাবে না।

জেড আই খান পান্না: বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ আইনজীবী ও চেয়ারম্যান, আইন ও সালিশ কেন্দ্র

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ