বেকারত্বের হার না কমালে কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না
দেশে যে বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এটা জানতে আর গবেষণার প্রয়োজন নেই, প্রতিটি পরিবারেই এখন একজন-দুজন করে বেকার বসে আছে। কিছুদিন আগে এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, শিক্ষিত ৩ জন ব্যক্তির একজনই এখন বেকার।
গতকাল সোমবার (১৯ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশে বেকারত্ব আরও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ ৩০ হাজার। গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শ্রমশক্তি জরিপের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রান্তিকের তথ্য বলছে, ১৯তম আইসিএলএস অনুযায়ী দেশে বর্তমানে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ১৩তম আইসিএলএসে ডিসেম্বর শেষে দেশের বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে ১৯তম আইসিএলএস অনুযায়ী দেশের বেকার জনগোষ্ঠী বেড়ে ২৭ লাখ ৩০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৪ লাখ। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, ১৩তম আইসিএলএসে ডিসেম্বর শেষে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এই পুরোনো হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা বর্তমানে ২৬ লাখ ১০ হাজার। আগের বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার।
বেকারত্ব বাড়ার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকা ও ব্যাংক ঋণের সুদহার বেশি হওয়ায় বেকারত্ব বেড়েছে। বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই, যারা গত সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি; কিন্তু কাজ করার জন্য গত সাত দিন ও আগামী দুই সপ্তাহের জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন।
বর্তমানে আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে সমস্যার অন্ত নেই। বহু মত-পথে বিভাজিত আজ আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র। যে কোনো ইস্যুতেই দেখা যায় একটা মব সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রধান কারণটি আসলে ওই বেকারত্বেই। মানুষ অস্থির ও অনিশ্চিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পায়ের নিচেই এখন দাঁড়াবার মতো মাটি নেই। অর্থনৈতিক টানাপড়েনে জীবন জর্জড়িত। বেকারত্ব আজ এক ভয়াবহ মহামারির মতো, অভিশাপের মতো আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে ছেয়ে বসেছে।
বেকারত্ব কমানোর জন্য বিনিয়োগ সৃষ্টি ও কর্মসংস্থান জরুরি। সরকার নানা কথা বলছেন; কিন্তু কোনোটাই তেমন কার্যকর হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে বেকারত্বের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে-রাষ্ট্রে নানা ধরনের অপরাধও বাড়বে। তার নজিরও স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। তাই আর দেরি না করে যেভাবেই হোক বিনিয়োগ সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
এ কথাও সত্য যে, দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে না এলে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হবে না এবং বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে কর্মসংস্থানও হবে না। এই বিষয়গুলো পারস্পরিক সম্পর্কিত। সরকার যদি এখনই বেকারত্ব কমাতে উদ্যোগী না হয় তাহলে তার ফল হবে খুবই ভয়াবহ। তাই সরকার বেকারত্ব কমাতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে এটাই প্রত্যাশা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে