Views Bangladesh Logo

তেল নিয়ে তেলেসমাতি বন্ধে ব্যর্থ প্রশাসন, ভোক্তাদের নাভিঃশ্বাস

ন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে, দেশে বেড়েছে আমদানি ও সরবরাহ। তারপরও ভোজ্যতেলের হাহাকার চলছে বাজারে। বিশেষ করে সয়াবিন তেলের ‘সংকট’ দেখিয়ে বিক্রি না করা বা বেশি দাম নেয়ায় ক্ষুব্ধ ভোক্তারা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে চলা এ অরাজকতা বন্ধে ব্যর্থ সরকার। এ সুযোগে আসন্ন রমজানে আরেকদফা মূল্য বৃদ্ধির শঙ্কা থাকলেও তা রোধে কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।

কয়েকদিন আগে দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। বৈঠকে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই। বরং বাজারে আগের চেয়ে এখন সরবরাহ অনেক বেশি। বিশেষ করে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ও চাহিদার অতিরিক্ত আমদানি হয়েছে সয়াবিন তেল।

তারপরও বাজারে কেন সংকট, জবাবে ব্যবসায়ীরা নিজেদের পর্যবেক্ষণ থেকে জানান, মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুত করে থাকতে পারেন। পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশি লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেল হিসেবে বেশি দামে বিক্রিও করছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে পাশের দেশে মূল্য বেশি হওয়ায় পাচারের শঙ্কাও করছেন কোনো কোনো সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

ভোক্তাদের নাভিঃশ্বাস
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়েও সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন না অনেকে। ১-২ লিটারের বোতল যাও মিলছে, পাঁচ লিটারের বোতল প্রায় উধাও। ফলে বোতলজাতের পাশাপাশি খোলা তেলও কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। কিছু বাজারে আবার চাল-ডাল-আটা কেনার শর্তে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন মুদি দোকানিরা।

ভোক্তাদের অভিযোগ, অনেকদিন ধরেই ভোজ্যতেলের সমস্যা চলছে দেশের বাজারে; কিন্তু বাজার তদারকিতে তা ধরা পড়ছে না। পড়লেও সেটি হয়তো চেপে যাওয়া হচ্ছে। যারা এই ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরি করছেন, সরকারের বাজার তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতায় ধরাছোঁয়ার বাইরে বা আইনি ব্যবস্থার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন তারা।

সরবরাহ বাড়লেও প্রতিফলন নেই বাজারে
একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে ভোজ্যতেলের দাম। অন্যদিকে দেশের বাজারে সরবরাহও বাড়ানো হয়েছে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি- বলছে শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ বেশি।

আর কাস্টমস জানাচ্ছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দুমাসে ভোজ্যতেলের আমদানি বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। ঋণপত্রও (এলসি) বেড়েছে একই হারে। বিশ্ববাজারেও পণ্যটির মূল্য স্থিতিশীল।

সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, গত জানুয়ারি মাসে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাতসহ ৫০ হাজার ৭০০ টন সয়াবিন তেল সরবরাহ করেছেন তারা। গত বছরের একই সময়ে তাদের সরবরাহ করা বোতলজাত তেল ছিল ১৪ হাজার ২৬২ টন। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় এ বছর সাড়ে তিনগুণ বেশি বাজারজাত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

আরেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার জানান, জানুয়ারিতে ১৫ হাজার টন বোতলজাতসহ ৪৭ হাজার ৬৬৮ হাজার টন তেল সরবরাহ করেছে মেঘনা। আগের বছরে সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার টন, যার ১২ হাজার টন ছিল বোতলজাত। অর্থাৎ, এ প্রতিষ্ঠানটিও গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ সয়াবিন তেল বাজারে ছেড়েছে।

তেলের সরবরাহ বাড়ানোর তথ্য দিয়েছেন টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিমও। কোম্পানিটির সরবরাহ আগের বছরের জানুয়ারিতে ছিল সাড়ে নয় হাজার টন, যা এ বছরের জানুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮১০ টনে। ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, রমজান উপলক্ষে পাইপলাইনে বেশ কিছু ভোজ্যতেল ভর্তি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙরের অপেক্ষায় আছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলোও স্থানীয় সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্ত হবে। পাইপলাইনে থাকা এই ভোজ্যতেলের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ টন।

তবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে দূর হবে। এ ছাড়া রমজান সামনে রেখে ছোলা, বুট, খেজুর, ডাল, চিনির দাম অস্থিতিশীল হওয়ার সুযোগ নেই। এসব পণ্যের সংকটও নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ