এশিয়ার সেরা ৩শর তালিকায় দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই কেন?
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। গত বুধবার (১ মে) প্রকাশিত তালিকায় এশিয়ার সেরা ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম আসেনি। আর এ খবর প্রকাশের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়ে যাচ্ছে সমালোচনার ঝড়। সংবাদমাধ্যমগুলোও গুরুত্ব দিয়ে খবরটি প্রকাশ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এশিয়ার সেরা ৩শর তালিকায় দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই কেন?
এর কারণ হিসেবে সবাই প্রশ্ন তুলছেন, ছাত্র-ছাত্রীদের কি পড়াশোনায় মনোযোগ নেই? শিক্ষকরা কি ভালো করে পড়াচ্ছেন না? শিক্ষা খাতে কি বাজেটের অভাব? নাকি গবেষণার অভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানহীন হয়ে পড়ছে? অনেকে এমনো প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতির কারণেই কি এমনটা হচ্ছে?
৪টি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশে মোট সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৩৭টি। একটি সংবাদ মাধ্যমের হিসাব মতে, দেশে বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১০টির ওপর। কয়েক মাস পর পরই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ায় তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণও কঠিন। সরকারি-বেসকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ সুনামও রয়েছে। বিশেষ করে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারলে ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন গর্ব বোধ করেন, তেমনি তাদের বাবা-মাও গৌরব বোধ করেন ছেলেমেয়েদের এসব নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারছেন বলে।
শিক্ষা সাময়িকীর প্রকাশিত তালিকা থেকে জানা যায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিও এশিয়ার ৩০০ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেই। বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৩০১-৩৫০-এর মধ্যে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৩৫১-৪০০-এর মধ্যে। অথচ সেরা ৩শর তালিকায় ভারতের ৪০টি, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে।
এ খবরে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন; কিন্তু এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কার্যকরী পদ্ধতি কি, তাও আমাদের ভাবতে হবে। সামগ্রিকভাবে এ দেশের ভঙ্গুর শিক্ষাব্যবস্থাই যে এ জন্য দায়ী এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ওপরের অভিযোগগুলোর প্রায় সবই সত্য। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে যেমন পর্যাপ্ত বাজেট নেই, তেমনি গবেষণার বিষয়ও উৎসাহ নেই। অন্য দিকে নানা কারণে অদক্ষ শিককরাও ভালো করে পড়াতে পারছেন না। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় তেমন আগ্রহ নেই। বহু চাকরিপ্রার্থীকে দেখা যায়, তারা ভালো করে ইংরেজিও জানেন না। সাধারণ জ্ঞানও তেমন নেই বললে চলে। দেশের অধিকাংশ মেধাবী তরুণ এখন বিদেশগামী। দেশেও যারা মোটামুটি মেধার সাক্ষর রাখেন, তারা জীবনবাজি রেখে তথ্য মুখস্ত করে কেবল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য পড়েন। জ্ঞানচর্চার প্রতি তেমন উৎসাহ নেই।
আধুনিক পৃথিবীতে জ্ঞানই শক্তি, জ্ঞানই সম্পদ। জ্ঞানচর্চায় উৎসাহ বাড়াতে না পারলে আমাদের জনশক্তি কেবল কায়িক শ্রমনির্ভর হয়েই থাকবে। এসব তালিকা সতর্ক সংকেত হিসেবে নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। শিক্ষায় যদি আমরা পিছিয়ে পড়ি, তাহলে সব দিক দিয়েই পিছিয়ে পড়ব। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন থাকবে অধরা। কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়নে একটি দেশ বেশি দূর যেতে পারে না। আধুনিক পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার একমাত্র উপায় শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি। দেশের ছাত্র-শিক্ষক-নীতিনির্ধারকরা শিক্ষা খাতে আরও মনোযোগ দেবেন সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে