গুলিবিদ্ধ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন, বিসিএস পরীক্ষার্থী আহাদের খোঁজ রাখেনি কেউ
ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন মন্ডল ও বিসিএস পরীক্ষার্থী আহাদ হোসেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যন্ত্রণায় কাতর হলেও তাদের খোঁজ কেউ রাখেনি। চিকিৎসা-সুস্থতা নিয়েও তাদের রয়েছে সংশয়।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন মন্ডল যশোরের মণিরামপুর পৌর এলাকার বিজয়রামপুর গ্রামের শিক্ষক দম্পতি পশুপতি মন্ডল ও রমা রানী মন্ডলের ছেলে এবং বিসিএস পরীক্ষার্থী আহাদ হোসেন একই উপজেলার বলিয়ানপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে।
জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে সেখানে অনার্স শেষ করেন সৌমেন। এরপর চলতি বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। এখনো ফল প্রকাশিত হয়নি। এরই মধ্যে ফাস্ট আইটি ফার্মে চাকরিতে যোগদানের চারদিন পরেই কোমরে গুলিবিদ্ধ হন সৌমেন মন্ডল। ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলায় ঘটনার দিন সন্ধ্যার একটু আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যান তিনি।
সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সৌমেন মন্ডল বলেন, তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরেই ছাত্রজনতার মিছিলে এলাকা উত্তাল হয়ে পড়ে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মোহাম্মদপুরের বসিলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা মিছিল বের করে। তিনি ওই মিছিলে যেতেই পুলিশের আক্রমণের শিকার হন।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই উরুতে কিছু একটা লেগেছে বলে অনুভূত হয়। কিছুক্ষণ পর দেখতে পান তার পরিহিত প্যান্ট রক্তে লাল হয়ে গেছে। পরে ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে দেখতে পান উরুতে গুলি লেগে নাভির নিচ দিয়ে বের হয়ে গেছে গুলি। উরুর হাড় ভেঙ্গে গেছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যেহেতু গুলি বের হয়ে গেছে তাই হাড় এমনিতে জোড়া লেগে যাবে।
সৌমেনের শিক্ষক দম্পতি বাবা-মা বলেন, ছেলেকে নিয়ে তাদের চোখে-মুখে এখনো আতংকের ছাপ তাদের। ছেলেটা ভাল হয়ে আর দশজনের মত স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারে-এজন্য দেশবাসীর কাছে আশির্বাদ কামনা করেছেন তারা।
এদিকে ফিকে হতে চলেছে চোখে গুলিবিদ্ধ আহাদ হোসেনের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আহাদ হোসেন গত ৫ আগস্ট মিছিলে সামিল হলে চোখে বুলেট বিদ্ধ হন। এখন বাড়িতে চোখের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নে একটি ঢাকার একটি কোচিং-এ ভর্তি হন তিনি। থাকতেন মালিবাগ এলাকায়।
সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, মিছিল রামপুরা এলাকায় পৌঁছাতেই পুলিশ তাদের শান্ত থাকতে বলেন। তারা শান্ত হয়ে বসে থাকতেই হঠাৎ রাবার বুলেট তার চোখে এসে লাগে। তিনি এরপর থেকে আর কিছুই দেখতে পান না।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। মা রাজিয়া বেগমসহ স্বজনরা আহাদ হোসেনের চিকিৎসা ও সুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
আহাদ হোসেনের বড় ভাই মুরাদ হোসেন জানান, ঢাকায় দুইবার চোখের অপারেশন হলেও গুলি বের হয়নি। যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে চোখের জটিলতা বাড়ার আশংকা করছেন চিকিৎসকরা।
এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে আহাদ হোসেন প্রশ্ন তোলেন, তাদের আন্দোলনে সরকারের পতন হলেও এখনো কেউ তার খোঁজ নেয়নি। সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। তিনি কি এই জন্য জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছিলেন?
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে