Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

নভেম্বর ১৯৭৫: ধোঁয়াশাপূর্ণ অধ্যায়ের ইতিবৃত্ত ও খালেদ মোশাররফের প্রচেষ্টা

Rahat  Minhaz

রাহাত মিনহাজ

রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

১৯৭৫ সালের নভেম্বরের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে ২০২৪ সালের পালাবদলের একটি মিল রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাতে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর ৭ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো সরকার ছিল না। ২০২৪ সালেও শেখ হাসিনার পতনের পরও কয়েক দিন সরকারশূন্য ছিল। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন ১৯৭৫ সালের নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক আবছা, রক্তাক্ত অধ্যায়। ইতিহাসের এই ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে পরস্পরবিরোধী দাবি আর দোষারোপের শেষ নেই। প্রায় ৫০ বছর পর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে দিনটিকে পালন বা উদযাপন করে আসছে। কেউ করে অসমাপ্ত বিপ্লবের আক্ষেপ, কারও কাছে দিনটি বিপ্লব ও সংহতির আবার কারও কাছে দিনটি মুক্তিযোদ্ধা হত্যার শোকাবহ দিন। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় পর্যায় ও রাজনৈতিক পরিসরে দিনটি ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হয়েছে। এ সময় গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রযন্ত্রে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের শক্তিশালী বয়ান প্রতিষ্ঠিত ছিল। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ২০২৪ সালে ভিন্ন আঙ্গিকে দিনটি পালিত বা উদযাপিত হবে। সামনে আসবে নতুন আলোচনা নতুন তথ্য, নতুন সমীকরণ, নতুন ব্যাখ্যা। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে আসুন একটু নির্মোহভাবে জানার চেষ্টা করি ঠিক কী ঘটেছিল ওই কয়েকদিন।


খালেদ মোশাররফ, শাফায়াত জামিল, হুদা ও হায়দার:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক শূন্যতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল। দলাদলি, অস্থিরতা ও ক্ষোভ ছিল সেনাবাহিনীর ভেতরেও। এ ছাড়া ১৫ আগস্ট পালাবদলের কারিগর বিশেষ করে ঢাকা ব্রিগেডের ১ম, ২য় ও ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার মেজর ফারুক, রশিদ ও তাদের সহযোগিরা সেনা কর্তৃত্ব মেনে না চলায় অস্থিরতা তৈরি হয়। তাই সেনাবাহিনীর চেইন-অব-কমান্ড পুনঃস্থাপনের জন্য তৎকালীন ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়েত জামিলও উদগ্রিব ছিলেন। তিনি বঙ্গভবনে অবস্থানকারী ফারুক-রশিদের প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ ছিলেন। তার ক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিক কারণও ছিল। ১৫ আগস্ট ভোরবেলা তার অধীনস্থ অফিসার ও সেনা সদস্যরাই তার কমান্ড উপেক্ষা করেই রাষ্ট্রপতিকে সপরিবারে হত্যার অভিযানে অংশ নিয়েছিল। তাই শাফায়াত জামিল তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে ছিলেন। যে লক্ষ্যে তিনি তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু জেনারেল জিয়া আরও অপেক্ষা করার পক্ষে ছিলেন। এরপর তিনি যান তখনকার সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের কাছে। তিনি সম্মত হন। খন্দকার মোশতাক ও ১৫ আগস্টের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শাফায়াত জামিল পাশে পান রংপুরে দায়িত্বে থাকা কর্নেল হুদাকে। এ ছাড়া এই প্রচেষ্টায় ঢাকা ব্রিগেডের অফিসার ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ (বিএনপি নেতা মেজর হাফিজ) বড় ভূমিকা রাখেন। আর এই প্রচেষ্টায় অনেকটা কাকতালীয়ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন ১৯৭১ সালে ঢাকার গেরিলা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, গেরিলাযোদ্ধাদের গুরু মেজর হায়দার।


প্রথম বেঙ্গলের বঙ্গভবন ত্যাগ, আকাশে মিগ ফাইটার ও রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান:
৩ নভেম্বর প্রচেষ্টার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী কর্নেল শাফায়াত জামিলের বর্ণনা অনুযায়ী, তাদের এই অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল রাত ৩টায়। সে সময় বঙ্গভবনে ১৫ আগস্টের বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপতি মোশতাকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রথম বেঙ্গলের দুটি কোম্পানি ক্যান্টনমেন্টে ফিরে আসে। ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের বাসায় গিয়ে তাকে প্রোটেকটিভ কাস্টোডিতে নেন। বিচ্ছিন্ন করা হয় তার বাসার ফোন লাইন। খালেদ ও শাফায়াতদের এই অভ্যুত্থানের প্রাথমিক সাফল্যের মূল কারণ ছিল বিমানবাহিনীর অংশগ্রহণ। কাক ডাকা ভোরে বিমানবাহিনীর পাইলটরা সেদিন বঙ্গভবনের ওপর ফাইটার প্লেন ও হেলিকপ্টার উড়িয়েছিলেন। যাতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই মোশতাক ও ফারুক-রশিদরা ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হয়। এরআগে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় ঢাকার আকাশে ফাইটার জেট উড়তে দেখেছিলেন নগরবাসী।

৩ নভেম্বরের এই প্রচেষ্টাকে অনেকেই পার্শ্ববর্তী দেশের হস্তক্ষেপে পালাবদলের প্রচেষ্টা বলে দাবি করলেও অভ্যুত্থানে পরিকল্পনাকারী শাফায়াত জামিল এই প্রচেষ্টার কয়েকটি লক্ষ্যের কথা তুলে ধরেছিলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্য আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর গ্রন্থে তিনি দাবি করেন এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল:
ক: সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
খ: ১৫ আগস্টের বিদ্রোহ এবং হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করা।
গ: সংবিধানবহির্ভূত অবৈধ সরকারের অপসারণ এবং
ঘ: একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে গঠিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে ৬ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে হস্তান্তর।
যদিও এই ঘটনার বিভিন্ন পক্ষ বিশেষ করে জাসদ শাফায়াত জামিলের এই দাবির সঙ্গে একমত নয়।

কারা অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতার নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড:
অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর পরিস্থিতির পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে খালেদ মোশাররফ প্রচুর সময় নেন। এ ছাড়া তিনি ক্ষমতা সংহত করতে দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। বঙ্গভবনে চলে দেন-দরবার, দরকষাকষি। এক পর্যায়ে ফারুক-রশিদরা নিরাপদে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তা চায়। অন্যদিকে এর মধ্যে ৩ নভেম্বর রাতে কারা অভ্যন্তরে নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হন জাতীয় চার নেতা। যতদূর জানা যায়, মোশতাক ও খুনি মেজর চক্রের যোগসাজশেই নিহত হন মহান মুক্তিযুদ্ধের এই চার মূল সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান। সেই সময়ে আইজি প্রিজনস এন নুরুজ্জামানের ভাষ্য অনুযায়ী, ২ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে (৩ নভেম্বরের শুরু) তিনি বঙ্গভবন থেকে কয়েক দফা টেলিফোন পান। যাতে ক্যাপ্টেন মোসলেমের কথা উল্লেখ করা হয়। নির্দেশনা দেয়া হয় যাতে তাকে জেল অফিসে নেয়া হয় এবং জাতীয় চার নেতাকে দেখানো হয়। এরপর আইজি প্রিজনস এন নুরুজ্জামান রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আদেশ পালনের নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন মোসলেম ৪ জন সেনাসহ জেলগেটে পৌঁছান। এরপর বঙ্গভবন থেকে ক্রমাগত নির্দেশ ও চাপের মুখে জাতীয় চার নেতাকে এক কক্ষে আনা হয়। কিছুক্ষণ পরেই তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে নিষ্ঠুরভাবে বেয়োনেট চার্জ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় জাতীয় চার নেতার। এদিকে দিনভর দেন-দরবারের পর ৩ নভেম্বর রাতে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় ফারুক-রশিদদের দলটি। আর যতদূর জানা যায়, খালেদ মোশাররফ ও অন্যান্য অভ্যুত্থানকারী সেনা নেতৃত্ব এই হত্যাকাণ্ডের খবরটি জানতে পারেন ৪ নভেম্বর সকালে।

একটি শোক মিছিল ও অন্যান্য:

৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের পর ৪ নভেম্বর পূর্ব নির্ধারিত একটি শোক র্যালি বের হয়েছিল ঢাকা শহরে। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, ওই শোক মিছিলের আয়োজক ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতৃবৃন্দ। সে সময়ের ডাকসু নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও তার সহকর্মী, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এই শোক মিছিলটিতে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। যাতে যোগ দেন নগরীর অগণিত নারী-পুরুষ। এ ছাড়া এই শোক মিছিলে আরও ছিলেন ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানকারী খালেদ মোশাররফের মা ও ভাই। এই শোক মিছিলটিতে সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সাধারণ ছাত্রও যোগ দিয়েছিলেন। এ মিছিলটি সম্পর্কে কবি নির্মলেন্দু গুণ তার ‘রক্ত ঝরা নভেম্বর ১৯৭৫’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘জানলাম মিছিলটি বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ফুল দিয়ে এসেছে। এটি একটি মস্তবড় ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিছিলটির আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত সংগ্রামী ছাত্রসমাজ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি দিবস পালনের জন্য ওই মিছিলটির আয়োজন করেছিল।

ওই মিছিলে ছিলেন সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমদ, সংসদ সদস্য শামসুদ্দিন মোল্লা, সংসদ সদস্য রাশেদ মোশাররফ, মরহুম খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস, মোহাম্মদ মহসীন মন্টু, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ইসমত কাদির গামা, খালেদ মোশাররফের বৃদ্ধ মাতা প্রমুখ’। (পৃষ্ঠা ১৬) এই শোকযাত্রায় যোগ দিতে ধানমন্ডির বাসিন্দা কবি সুফিয়া কামাল, কবি জসীমউদদীন, বরেণ্য চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীনসহ আরও বেশ কয়েকজন বরেণ্য ব্যক্তিকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। অসুস্থতার কারণে কবি সুফিয়া কামাল শোকযাত্রায় যোগ দিতে পারেননি। আর অন্যরা ঠিক কি কারণে যোগ দেননি তা আজও অজানা। ঐতিহাসিক এই শোক র্যালির আয়োজনের নেপথ্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন ডাকসুর সভাপাতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। মিছিলটির আয়োজন ও সংশ্লিষ্ট নানা ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট সকালে লেখক তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জানান, এই শোক মিছিলটির প্রস্তুতি চলছিল অনেক আগে থেকেই। পরিকল্পনা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরপরই শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য একটি শোক মিছিল করা হবে। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল মিছিলটি হবে ২৮ অক্টোবর; কিন্তু প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকার কারণে পরবর্তী তারিখ ৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। এই তারিখের সঙ্গে ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান ঘটনাপ্রবাহের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এই শোক মিছিলের অনুমতি বা বিভিন্ন ব্যক্তিকে অবহিত করা নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরনের তথ্য তুলে ধরছেন। বিষয়টি উল্লেখ করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মঞ্জুরুল আহসান খান ও রাশেদ মোশাররফ (তৎকালীন সংসদ সদস্য ,খালেদ মোশাররফের ভাই) ছিলেন একই এলাকার বাসিন্দা। ৪ নভেম্বর ভোরে মঞ্জুরুল আহসান খান তার চামেলিবাগের বাসা থেকে ফোন করেছিলেন রাশেদ মোশাররফকে। মূলত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ জানতেই তিনি ফোনটি করেন। ওই সময় রাশেদ মোশাররফ জানান, ভাই (খালেদ মোশাররফ) এখানেই আছেন। তখন মঞ্জুরুল আহসান খানের সঙ্গে খালেদ মোশাররফের কথা হয়। ওই সময় মঞ্জুরুল আহসান খানের পাশে ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। খালেদ মোশাররফ ও মঞ্জুরুল আহসান খানের কথার মধ্যেই একপর্যায়ে খালেদের সঙ্গে কথা হয় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের। তিনি তখন খালেদকে ৪ নভেম্বরের পূর্ব নির্ধারিত শোক র্যালির কথা জানান। এ সময় খালেদ তাকে জানান ‘আমার ছেলেরা তোমাদের বাধা দেবে না’। এ সময় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তাকে (খালেদ মোশাররফ) এই মিছিলে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। হেসে জানান তিনি পারবেন না, তবে তার মা মিছিলে থাকবেন। এরপর মিছিলটি অনুষ্ঠিত হয়। এ মিছিলের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে বর্ষীয়ান রাজনীতিক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই লাইনে মিছিলটি বের হয়। নীলক্ষেতে এটি বাধার মুখে পড়ে। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে মিছিলটি এগিয়ে যায়। ৩২ নম্বরে পৌঁছার পর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। একজন হুজুর মোনাজাত করেন। এটি একটি খুব সামান্য শোক র্যালি হলেও এর প্রভাব ছিল ব্যাপক। কারণ এর মাধ্যমে খালেদ মোশাররফকে ভরাতপন্থি বা মুজিবপন্থি হিসেবে চিত্রিত করা সহজ হয়েছিল।


মোশতাকের পদত্যাগ ও বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি:
খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হওয়ার পরও রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে টালবাহানা করেন খন্দকার মোশতাক। যদিও তিনি ৫ নভেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে সম্মত হন। যদিও শর্ত দেন নতুন উত্তরসূরি নির্ধারণের। এরপর শাফায়াত জামিল বাংলাদেশের প্রথম বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমের কাছে যান রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে। যদিও তিনি প্রথমে এই পদ নিতে রাজি হননি। পরে দীর্ঘ আলাপ ও চাপাচাপির পর তিনি সম্মত হন। ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম। এ সময় তিনি একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। যার সদস্য ছিলেন সেনাপ্রধান জিয়উর রহমান, বিমানবাহনীর প্রধান মুহাম্মদ গোলাম তাওয়ব, নৌবাহিনীর প্রধান মোশাররফ হোসেন খান, শিক্ষাবিদ আবুল ফজল, কাজী আনোয়রাল হক, মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, মির্জা নূরুল হুদা, আবদুস সাত্তার, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বিনিতা রায়। যদিও রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন পালাবদল শুরু হয়। এই পালাবদলের পথপরিক্রমা ছিল রক্তাক্ত।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ