রমজান মাসকে টার্গেট করে সক্রিয় তেল সিন্ডিকেট
আসন্ন রমজান মাসকে টার্গেট করেই তেলের বাজার অস্থিতিশীল করছে একাধিক সিন্ডিকেট চক্র। বাজারে সয়াবিন তেলের (বোতলজাত) সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিক সংকট তৈরি করছে চক্রটি। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতি বছরই এই চক্রটি রমজান মাসকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে সক্রিয় হয়ে ওঠে; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ চক্রের সঙ্গে সরকার পক্ষের কারও না কারও যোগসূত্র পাওয়া যায়।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এই তেল সংকটের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপরও বাজারে সয়াবিন তেলের (বোতলজাত) সংকট রয়েছে। চাহিদামতো সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে চার দিনের ব্যবধানে এসেছে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের চারটি জাহাজ। চারটি জাহাজের মাধ্যমে ৫২ হাজার টন সয়াবিন তেল আনা হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে।
জানা গেছে, চারটি জাহাজই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বন্দরগুলো থেকে এক মাস আগেই রওনা হয় চট্টগ্রামের উদ্দেশে। ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের যে সাময়িক সংকট চলছে, তা কেটে যাবে। সোমবার সয়াবিনের দাম সমন্বয় করায় রোজার আগে আমদানি আরও বাড়বে।
জাহাজ কোম্পানি সূত্র জানায়, এই চার জাহাজে সয়াবিন তেল আমদানি করেছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই ও টিকে গ্রুপ। এর মধ্যে টিকে গ্রুপের ২৫ হাজার টন, সিটি গ্রুপের ২০ হাজার টন ও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ হাজার টন সয়াবিন তেল রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, শনিবার এমটি আরডমোর শায়ানি ও এমটি ডাম্বলডোর নামে দুই জাহাজে বন্দরে আনা হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন তেল। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বন্দর জলসীমায় পৌঁছেছে এমটি সানি ভিক্টরি ও এমটি জিঙ্গা থ্রেশার নামের আরও দুটি জাহাজ। এই দুই জাহাজে রয়েছে ৩০ হাজার ৬০০ টন সয়াবিন তেল। এর মধ্যে এমটি আরডমোর শায়ানি জাহাজ থেকে তেল খালাস শেষ হয়েছে।
সোমবারই জাহাজটি বন্দর ছেড়েছে। জাহাজগুলোর মধ্যে সানি ভিক্টরি এসেছে ব্রাজিল থেকে, বাকি তিনটি আর্জেন্টিনা। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, এই তেল আমদানি মূলত রমজানে সয়াবিন তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে।
খাতুনগঞ্জের একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী গণমাধ্যমকে জানান, রোজা এলেই অসাধু সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে যায়। এবারও রমজান আসার আগেই বাজার ধরতে এমন পন্থা। এখন সংকট দেখালে রোজায় বাড়তি দামেই তেল বিক্রি করা যাবে। কারণ তখন তো ভোক্তারা কিনতে বাধ্য।
রাজধানীর কারওয়ান বাজরের সোহেল হোসেন নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে এখন সয়াবিন তেলের সংকট। পাঁচ কার্টন চাইলে এক কার্টন মিলে। সেইসঙ্গে রয়েছে শর্ত; আর শর্ত না মানলে তেলই সাপ্লাই দিচ্ছে না। তারা তেলের জন্য যে শর্ত দিচ্ছে, সেসব পণ্য আবার গ্রাহকরা নিতে চান না। তারা না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার একাধিক গণমাধ্যমকে বলেন, সয়াবিন তেলের দাম সমন্বয়ে সরকারের আশ্বাসে এসব সয়াবিন আমদানির জন্য অনেক আগেই ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। এখন মূল্য সমন্বয়ের কারণে আমদানি সামনে বাড়বে। রোজার সময় সয়াবিনের সংকট হবে না। যদিও এখন যেসব জাহাজ আসছে সেগুলোতে টনপ্রতি সয়াবিনের দর ১ হাজার ২১৭ ডলার পড়েছে।
এদিকে, নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন থেকে বিক্রি হবে ১৭৫ টাকায়, যা এত দিন ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৫৭ টাকা। দাম পুনর্নির্ধারণের কারণে বন্দরে আসা চার জাহাজের সয়াবিন তেলের বাজারমূল্যও বেড়ে গেছে। যেমন বন্দরে আসা ৫২ হাজার টন তেল পরিশোধন করে বাজারজাত হলে বোতলজাত সয়াবিন হিসেবে বাজারমূল্য দাঁড়াবে ৯৯৬ কোটি টাকা। দাম বাড়ানোর আগে যা ছিল ৯৫০ কোটি টাকা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে