শিক্ষাব্যয় বাড়ছে, শিক্ষার্থী কমছে
জাতির সম্মুখে অশনিসংকেত
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আমরা কথায় কথায় বলি, আজ সেই মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যেতে বসেছে। মেরুদণ্ড বাঁকা হলে মানুষ যেমন কুঁজো হয়, শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়লে জাতিও ভঙ্গুরদশায় পড়বে। গতকাল (৩১ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এডুকেশন ওয়াচের গবেষণা থেকে জানা গেছে, করোনা মহামারির প্রভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই কন্যা শিশু। তাদের অধিকাংশই শিকার হচ্ছে বাল্যবিবাহের।
এ খবর ভয়ের, উদ্বেগের ও আতঙ্কের। মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হলে পরবর্তীতে নারী নির্যাতনেরও শিকার হবে। বলা হয়, শিক্ষিত মা মানেই শিক্ষিত জাতি। মেয়েরা শিক্ষায় পিছিয়ে পড়লে একে তো তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারবে না, তাদের সন্তানদেরও নিজের পায়ে দাঁড় করাতে পারবে না।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, দেশে শিক্ষা ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরেই ব্যয় বেড়েছে বেশি। প্রাথমিকে শিক্ষার্থীপিছু পরিবারে ব্যয় বেড়েছে ২৫ শতাংশ, মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ। এই ব্যয় বাড়ার বড় কারণ বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই স্কুলের শিক্ষকদের পড়া বোঝে না। ফলে তাদের বাসায় প্রাইভেট টিচার রাখতে হয়, বা কোচিংয়ে পড়তে হয়। পাশাপাশি খাতা-কলম, নোট, গাইড বই তো কিনতেই হয়।
এখানে একটা বিষয়ে জরুরি দৃষ্টি-আকর্ষণ প্রয়োজন, স্কুল শিক্ষকরা সব শিক্ষার্থীদের ঠিক মতো পড়া বুঝিয়ে দিতে পারেন না কেন? এর উত্তর আমরা জানি, আমাদের দেশে দক্ষ শিক্ষার্থীর অভাব। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষকদের। কিছুদিন আগেই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে জানা গিয়েছিল, গ্রাম অঞ্চলের প্রাথমিক স্তরের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ঠিক মতো বাংলা রিডিং পড়তে পারে না। মাধ্যমিক স্তুরের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি রিডিং পড়তে পারে না। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিবাকদের আরেকটা অভিযোগও উঠেছে যে, নানা পরীক্ষার নামে, নোট দেয়ার নাম করে কিছুদিন পর পর স্কুল থেকে ফি নেয়া হয়। পাঠ্যপুস্তক থাকা সত্ত্বেও কী নোট দেন শিক্ষকরা?
আবার ঢালাওভাবে কেবল শিক্ষকদের দোষ দিলেও হবে না। বর্তমান বাজারের তুলনায় তাদের বেতন খুবই কম। অনেক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা ঠিক মতো বেতন পান না। বেসরকারি স্কুলগুলো জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মাসাধিকাল তারা অবস্থান ধর্মঘট করেছেন গত বছর।
সামগ্রিকভাবেই দেশর শিক্ষা ক্ষেত্রের পরিস্থিতি ভালো বলা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা অরাজতা ঘটছে। গতকালই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, দেশের প্রধান সারির বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে। পরীক্ষাও বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা।
এভাবে চলতে থাকলে জাতির সামনে অশনিসংকেত ছাড়া কিছু নেই। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি আমাদের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বর্তমান সরকার দেশকে একটি উন্নত, আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে তা কী করে সম্ভব? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ-ক্ষেত্রে জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণ প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যয় কমিয়ে, শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত করে, দক্ষ শিক্ষক সৃষ্টি করে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নতি জরুরি প্রয়োজন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে