Views Bangladesh Logo

‘৭ মার্চ প্রজ্বালিত হয়েছিল স্বাধীনতার মশাল’

Shams  Said

শামস সাইদ

৯৭১ সালের ৭ মার্চ পদ্মা-মেঘনা-যমুনাবিধৌত অঞ্চলের মানুষ শুনেছিল একটি ভাষণ। যে ভাষণে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে ১৯৭১ পর্যন্ত ধাপে ধাপে সেই মশাল প্রজ্বালিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু নিজেকে তৈরি করেছিলেন ইতিহাসের সমান্তরালে আর দেশের মানুষকে প্রস্তুত করেছিলেন, সেই মহাজাগরণে শামিল হয়ে ইতিহাসে বাঙালির শ্রেষ্ঠ সময় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে।

স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উদ্বেলিত মহাসমাবেশে বলিষ্ঠ কণ্ঠে যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, তা বাঙালি জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। বঙ্গবন্ধুর সেই তেজোদীপ্ত উচ্চারণ- ‘এবারের সংগ্রাম আমদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধে নয়, সেই ভাষণ আজও বাঙালি জাতিকে উদ্দীপ্ত করে, অনুপ্রাণিত করে। তাই ১৯৭১ সালের এপ্রিলে নিউজ উইক ম্যাগাজিনের একটি কভার স্টোরিতে বঙ্গবন্ধুকে Poet of Politics বলে আখ্যায়িত করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল একটি মশাল, যা প্রজ্বালিত করেছিল মুক্তিযুদ্ধের সেই দাবানলের, যার সামনে টিকতে পারেনি শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ স্বাধীনতা বিরোধীরা। এই ভাষণ মাত্র ১৮ দিনে বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষকে প্রস্তুত করেছে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। রাশিয়ায় মহামতি লেলিনের নেতৃত্বে অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না বাঙালির কাছে ওই ১৮ দিন।

৭ মার্চ বাঙালি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে জেগে ওঠেছিল। ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল স্বাধীনতাসংগ্রামের। তাতে ছিল নির্দেশনা আর সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতির কথা। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এ তেজোদীপ্ত মুক্তির বাণী শোনার জন্য ওইদিন সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ দলে দলে হেঁটে, বাস-ট্রাক-লঞ্চ-ট্রেনে চেপে রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষের স্রোতে সয়লাব হয়ে যায় তখনকার ঘোড়দৌড়ের এ বিশাল ময়দান। বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক। তিনি জনগণ ও শাসকশ্রেণির নাড়ি বুঝতেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি অসংখ্য ভাষণ, বক্তৃতা, সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে করেছেন। ফলে জনগণের সঙ্গে তার যোগাযোগের ক্ষমতা ছিল অনবদ্য। তিনি ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। তাই, তার ভাষণেও মাটি এবং মানুষের ভাষা লক্ষ্য করা যায়। প্রমিত বাংলায় প্রদত্ত সে ভাষণে তিনি তুলে ধরেন শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস, সমসাময়িক হত্যাকাণ্ডের কথা, রাজনৈতিক দোলাচল এবং বাংলার মানুষের স্বায়ত্তশাসন লাভের বাসনা। এই ভাষণটি অলিখিত হলেও তালপতন বা পুনরাবৃত্তির ঘটেনি। শব্দ চয়নের ব্যাপারে ছিলেন যথেষ্ট মার্জিত ও ধৈর্যশীল। ইয়াহিয়া ও ভুট্টোকে তিনি সংবোধন করেন ‘জনাব এহিয়া খান সাহেব’, ‘জনাব ভুট্টো সাহেব’ বলে।

ভাষণে এমনভাবে শব্দ প্রয়োগ করেননি, যাতে মনে হতে পারে সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রাম বা আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছেন। আবার বাঙালি সেদিন তার মাধ্যমে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল। তাই, তার প্রতিটি পদক্ষেপ ও বাণী ছিল বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার নিয়ন্ত্রক। আওয়ামী লীগের অনেক বর্ষীয়ান; কিন্তু অদূরদর্শী নেতা সেদিন বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সরাসরি স্বাধীনতা বা বিচ্ছিন্নতার ডাক দেয়ার। কেউ কেউ বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার ডাক না শুনে জনগণ ছাড়বে না’। বঙ্গবন্ধু জানতেন সেটা হবে আত্মঘাতী। কারণ, ইয়াহিয়া খান আগেই জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার কথা তুললে পরিণাম খারাপ হবে।

সামরিক আমলাদের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার বই উইটনেস টু সারেন্ডারে উল্লেখ করেছেন, ‘সেদিন (৭ মার্চ) ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জিওসি (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) রেসকোর্সের চারদিকে সশস্ত্র সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন এবং শাহবাগ হোটেলের মতো উঁচু জায়গাগুলোতে মেশিনগান ফিট করা হয়, যাতে শেখ মুজিবুর রহমান বিচ্ছিন্নতার ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে তার ও শ্রোতাদের ওপর সেই অজুহাতে অতর্কিত হামলা করা যায়।’ বঙ্গবন্ধু এসব কিছু আঁচ করতে পেরেছিলেন অনেক আগেই। তাই, তিনি অনেক ভেবে-চিন্তে ভাষণটি দেন। ভাষণে মূলত চারটি দাবি তোলা হয়, মার্শাল ল প্রত্যাহার, সেনাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। তিনি বলেন, ‘দাবি পূরণের পরে আমরা ভেবে দেখব অ্যাসেম্বলিতে বসব কি না’। এ ধরনের কথা উচ্চারণ করে একদিকে বঙ্গবন্ধু আলোচনার পথ খোলা রাখলেন এবং ভাষণ পরবর্তী সৃষ্ট স্বায়ত্তশাসন দাবির আন্দোলনের দায়ভার থেকে নিজেকে এবং দলকে বাঁচিয়ে নিলেন।

বঙ্গবন্ধু ভিয়েতনাম, তিব্বতসহ অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন। দেশের প্রধান নেতা হিসেবে সরাসরি বিচ্ছিন্নতার ডাক দিলে সেটি বিরোধীদের কাছে উপযুক্ত কারণ হয়ে দাঁড়াত আন্দোলন দমনের এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আইনগতভাবে গ্রেপ্তার ও শাস্তি প্রদানের। বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে বঙ্গবন্ধু পরিচিত হতেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে এবং জাতিসংঘের কাছ থেকে স্বাধীনতার পক্ষে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা পাওয়া মুশকিল হয়ে যেত। তাই একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করলেন ‘আমরা ভাতে মারব, পানিতে মারব।’ অর্থাৎ, দাবি মানার জন্য অপ্রত্যক্ষ চাপ তৈরি করলেন।

ভাষণের পর দিন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সদর দপ্তরে রিপোর্ট জমা হয়, ‘চতুর শেখ মুজিব, চতুরতার সঙ্গে বক্তৃতা করে গেলেন। একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেলেন অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হওয়ার দায়িত্বও নিলেন না। নীরব দর্শকের ভূমিকা ছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিল না।’

৭ মার্চ ভাষণের শেষের দিকে ছিল নির্দেশমালা। বঙ্গবন্ধু অসহযোগিতার ডাক দিলেন। কোর্ট-কাচারি, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলেও নিম্নবর্গীয় খেটে খাওয়া মানুষের যাতে কোনোপ্রকার অসুবিধা না হয়, সে কারণে রিকশা-ভ্যান, গরুর গাড়ি, রেল, লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিলেন। ২৮ মার্চ সব সরকারি চাকরিজীবীর বেতন নিয়ে আসতে বললেন। গণযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি পাকিস্তানিরা আধিপত্য বিস্তার করে, তাহলে সেখানে চাকরিরত বাঙালিদের অফিস বয়কটের নির্দেশ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি মিডিয়াগুলো যাতে বাংলাদেশের সঠিক অবস্থা বুঝতে পারে সেজন্য তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ রাখারও হুকুম দিলেন। এভাবে, সবক্ষেত্রে কর্মরত বাঙালিদের সময়োপযোগী দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে তিনি সামরিক সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেন।

আওয়ামী লীগের নেতাদের রিলিফ কমিটি ও সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার নির্দেশ প্রদান করলেন। ভাষণের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে এই উক্তিতে, ‘এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান, বাঙালি অবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর।’

যুদ্ধে জেতার জন্য অপ্রত্যক্ষ সত্যের আশ্রয় নেয়ার প্রথা সুপ্রাচীনকালের। বঙ্গবন্ধুও ৭ মার্চের ভাষণে সেরকমই এক অপ্রত্যক্ষ সত্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেদিনের রেসকোর্সে সরাসরি সত্য বলাটা হতো আত্মঘাতীর শামিল। তাই বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে...। তোমরা আমার ভাই... আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো নাই। ৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দমায়ে রাখতে পারবে না। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’

বঙ্গবন্ধু শুধু একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন না; তিনি ছিলেন বিশ্বমাপের কূটনীতিবিদ। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি সবকিছুকে প্রকাশ করেছেন প্রাজ্ঞ কূটনীতিবিদের মতো। তিনি বলেছেন, বিগত ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর নির্বাচন, ১৯৫৮-এর সামরিক শাসন, ১৯৬৬-এর ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচনসহ তৎকালীন পাকিস্তানে বাঙালিদের বঞ্চনার কথা জানিয়েছেন; অন্যদিকে যুদ্ধকৌশলও বলে দিয়েছেন। বলছেন-যদি যুদ্ধ হয়, তবে বাঙালিরা যেন বর্ষাকালকে বেছে নেয় যুদ্ধের জন্য; কিন্তু পাকিস্তানিরা এ বক্তৃতার সারমর্ম বুঝতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধুর এ বক্তৃতা রোমান সম্রাট সিসেসোর বক্তৃতার সঙ্গে তুলনা করা যায়। এ বক্তৃতার তুলনা করা হয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড পিটস, মার্টিন লুথার কিংয়ের ভাষণের সঙ্গে। তুলনা করা চলে আব্রাহাম লিঙ্কনের বিখ্যাত গ্যাটিসবার্গ অ্যাড্রেসের সঙ্গে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পরে যখন জেনারেল লি আত্মসমর্পণ করেছেন এবং ইউনিয়ন আর্মির প্রধান জেনারেল গ্রান্ট বিজয়ী ও বিজিত উভয় বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে, তার চার মাস পর আব্রাহাম লিঙ্কন গ্যাটিসবার্গে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য সব মার্কিন জনসাধারণের কাছে একটি মানবিক আবেদন রেখেছিলেন এবং তিনি যখন এ ভাষণটি দিয়েছিলেন, তখন গ্যাটিসবার্গ ও তার আশপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের রেসকোর্সে ভাষণ দেওয়াটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

তিনি বলতে গেলে শত্রুর ঘাঁটির মাঝখানে বসে জনগণকে শত্রুর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার ঘোষণা দিলেন। কারণ, রেসকোর্স ময়দান থেকে ক্যান্টনমেন্ট মাত্র পাথর ছোড়ার দূরত্বে ছিল। বেখাপ্পা কিছু বললেই তার সঙ্গে সঙ্গে লাখো বাঙালিকে পাকিস্তানিরা নিঃশেষ করে দিতে পারে। তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে শত্রুর বিরুদ্ধে জনগণকে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিলেন আর বাঙালিদের তা বুঝে নিতে ভুল হয়নি। কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং যেমন বর্ণবাদমুক্ত ও বৈষম্যহীন একটি জাতির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য জাতিকে জাগ্রত হতে বলেছিলেন; বঙ্গবন্ধুও ৭ মার্চ ভাষণে ঠিক তেমনই বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতিকে জাগ্রত হতে বলেছিলেন, সংগ্রাম করতে বলেছিলেন। নেলসন ম্যান্ডেলা যেমন তার ভাষণের দ্বারা জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন; বঙ্গবন্ধুও ৭ মার্চের সেই অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণের দ্বারা জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণা মুক্তিকামী মানুষের কাছে লাল-সবুজ পতাকাকে মূর্তিমান করে তোলে। আর এরই মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। সাংবাদিক শেরিল ডান বলেছেন, ‘বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলেন একমাত্র নেতা; যিনি রক্তে, বর্ণে, ভাষায়, সংস্কৃতিতে এবং জন্মে একজন পূর্ণাঙ্গ বাঙালি। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অসীম। তার কণ্ঠ বজ্রকঠিন। তার মোহনীয় ব্যক্তিত্বে সহজেই আবিষ্ট হয় সাধারণ মানুষ। তার সাহস এবং অনুপ্রেরণা শক্তি তাকে এ সময়ের অনন্য সেরা মানবে পরিণত করেছে।’

ভাষণের শেষ মিনিট, শেষ কয়েক সেকেন্ড। হঠাৎ সিংহের মতো গর্জে উঠলেন বঙ্গবন্ধু, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কথাটি শোনার জন্যই শ্রোতারা যেন মুখিয়ে ছিলেন। তাদের মধ্যে তরঙ্গ উঠল। সঞ্চালনা হলো নতুন প্রাণম নতুন স্বপ্নের। সব শেষে ‘জয় বাংলা’ বলে ভাষণ শেষ করেলেন বঙ্গবন্ধু। যে স্লোগানটি পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের রণধ্বনিতে পরিণত হয়েছিল।

শামস সাইদ: কথাসাহিত্যিক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ