Views Bangladesh Logo

শিল্পাঞ্চলে ৬০ হাজার রোগীপ্রতি একটি বেড

সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ৩০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার বেশিরভাগই পোশাককর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্য। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত এসব মানুষের চিকিৎসাসেবার মূল ভরসাস্থল সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল।

১৯৮২ সালে ৩১টি বেড নিয়ে চালু হওয়া সরকারি হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা এখন ৫০টি। এ হিসেবে প্রতি ৬০ হাজার রোগীর বিপরীতে একটি বেড নিয়ে শিল্পাঞ্চলের মাত্রাতিরিক্ত রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালটিকে। এর অধীন দুটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকও দিতে পারছে না পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা।

দীর্ঘদিন ধরেই পোশাকশ্রমিকদের জন্য বিশেষ হাসপাতাল তৈরির দাবি জানিয়ে আসছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। এজন্য পরিত্যক্ত তাজরীন ফ্যাশন ভবন ব্যবহারের অনুরোধ তাদের। শ্রমিকনেতারা বলছেন, স্বল্প বেতনে কর্মরত পোশাককর্মীদের আয়ের উৎস কম থাকায় চিকিৎসার জন্য এখনকার মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের ক্ষমতা খুবই কম।

তাদের দাবি, ২৮০ বর্গকিলোমিটারের সাভার উপজেলায় তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এনজিও পরিচালিত পক্ষঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশাপাশি দুই শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক থাকলেও মাত্রাতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়ে সেগুলোতে যাওয়ার সামর্থ্য নেই পোশাকশ্রমিক পরিবারগুলোর।

সরেজমিন জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল ও দুটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র মিলে ডাক্তার রয়েছেন মাত্র ২৯ জন। কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ কর্মচারী ২২০ জন এবং সিএইচপি ৩৭ জন। এ সুযোগে দুই শতাধিক বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল স্বল্প আয়ের মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নিচ্ছে। সব ধরনের রোগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।

উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পোশাকশ্রমিক রফিক ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, তিন দিন আগে দুর্ঘটনায় পড়ায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কিন্তু এখানে ভর্তি না হয়ে অন্য একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন তিনি। এখন শুধু মেডিকেল সনদপত্র ও বিনামূল্যের কিছু ওষুধ নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

কেন ভর্তি হননি, জানতে চাইলে রফিক বলেন, ‘এটি সরকারি হাসপাতাল হলেও আসলে তেমন চিকিৎসা নেই। আমাকে নিয়ে আসার পর প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দিয়েছেন ডাক্তাররা। বাকি সবকিছু বাইরের ক্লিনিকে করেছি। এখানে প্রায় সময়ই বেড খালি পাওয়া যায় না। বেডগুলোও ঠিক নেই, ভাঙা।’

‘পর্যাপ্ত বেড না থাকায় বাধ্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন রোগীরা’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, বেড সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসাসেবার মান উন্নত করা হলে আস্থাও ফিরে আসবে।

পোশাকশ্রমিক শাহিনও বলেন, ‘এখানে বেড খালি থাকে না বললেই চলে। বাধ্য হয়েই বাইরের কোনো ক্লিনিকে ভর্তি হতে হয়। সেখানকার চিকিৎসা ব্যয় এ হাসপাতালের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ হয়ে এতো টাকা খরচ বহন করা অসম্ভব।’

‘ডাক্তাররা আরও একটু আন্তরিক হলে অনেক গরিব রোগীকে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাতে হয় না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শিল্পাঞ্চল হলেও শ্রমিকদের জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকাকে এখানকার স্বাস্থ্য সমস্যার মূল কারণ বলে মনে করছেন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করা স্বদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. ইব্রাহীম।

ভিউজ বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘সাভার-আশুলিয়ার বাসিন্দাদের অধিকাংশই সাধারণ শ্রমিক, যাদের আয়-ব্যয় খুবই সীমিত। পরিবারের ভরণপোষণ ও সন্তানদের পড়াশোনার পাশাপাশি চিকিৎসার অতিরিক্ত ব্যয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শ্রমিকদের জন্য বিশেষ কোনো হাসপাতাল হলে এই ব্যয় সাশ্রয়ে সচ্ছল হতে পারতেন তারা।’

‘যে সরকারি হাসপাতালটি রয়েছে, সেটির সেবা ও চিকিৎসার মান নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। এখানে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়ে চিকিৎসার মান উন্নত করা হলেও উপকৃত হবেন তারা’- বলেন তিনি।

ইব্রাহীম বলেন, প্রতিটি কারখানাই নিজস্ব চিকিৎসাসেবা দেয়। তবে সেটি পর্যাপ্ত নয়। আবার কারখানাগুলোর বিশেষজ্ঞ বা অন্য চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেও বাইরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় শ্রমিকদের অতিরিক্ত খরচ করতে হয়। পরিবারের খরচ বহনের পর চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ঋণও করতে হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদ আল হাসান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ার জন্য এই বেড সংখ্যা খুব কম। বেড ও সেবার পরিধি বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’

মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘সবার জন্য স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা চালু আছে। কারও পক্ষে সে খরচ বহন সম্ভব না হলে সেটিও বিবেচনা করা হয়। তবে শ্রমিকদের জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হবে কি না, সরকার সেটি পর্যবেক্ষণ করে দেখবে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ