Views Bangladesh Logo

‘এক নেতার এক দেশ’ স্লোগানে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ এসেছে: সলিমুল্লাহ খান

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

‘এক নেতার এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ এসেছিল বলে মন্তব্য করেন লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) এর প্রধান কার্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পনের জন সমন্বয়কের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক বই ‘পনেরো সমন্বয়কের সাক্ষাৎকার’ এর প্রকাশনা উৎসব তিনি মন্তব্য করেন।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরে আমরা মনে করেছিলাম ফ্যাসিবাদ পৃথিবী থেকে উঠে চলে গেছে। ফ্যাসিবাদ নানা নামে পরিচিত ছিল। ইতালিতে ফ্যাসিবাদ জার্মানিতে নাৎসিবাদ এমনকি ভারতে আরএসস যে পদ্ধতি অনুসরণ করে ওটাই ফ্যাসিবাদের নানা ধরন।

এ অধ্যাপক আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের বছর পার না হতেই মানুষ কেন বলছে, জুলাইয়ের স্পিরিট হারাতে বসেছে, তা বোঝা জরুরি।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, জুলাই আন্দোলন নিয়ে আরও বই হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ছিল বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে, আর এবারের আন্দোলন হয়েছে দেশের শক্তির বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল মন্ত্র ছিল- তা হল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। সেই মূল মন্ত্রই আবার উচ্চারিত হয়েছে জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে।’

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে অনেক শিক্ষক দাঁড়িয়েছিলেন, তার চেয়েও বেশি শিক্ষক বিরোধিতা করেছিলেন।’

সলিমুল্লাহ খান ছাড়াও বইটি নিয়ে আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, ‘পনেরো সমন্বয়কের সাক্ষাৎকার’ বইয়ের সম্পাদক শিবলী আজাদ, ‘পনেরো সমন্বয়কের সাক্ষাৎকার’ বইয়ের সম্পাদক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফারহান হাসান বর্ণ।

অনুষ্ঠানে শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ইউপিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্‌রুখ মহিউদ্দীন বলেন, রাজনৈতিক সচেতনতার পথকে বাধাগ্রস্ত করে শেষপর্যন্ত নাগরিককে তার অধিকারের প্রশ্নে দমিয়ে করিয়ে রাখা যায় না। ২৪ এর আন্দোলন তার বড় উদাহরণ। ‘পনেরো সমন্বয়কের সাক্ষাৎকার’ বইটি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের পাঠ হয়ে থাকবে।

বইটির সম্পাদক শিবলী আজাদ বলেন, শিক্ষার্থীদের রক্তের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এই সংকলনের কাজ শুরু করেছি। বিগত ১৫ বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ২০২৪-এর অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে।

অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, লিঙ্গ ও শ্রমবৈচিত্রময় জনগোষ্ঠি ছিলো জুলাই আন্দোলনে। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে এখন জুলাইয়ের দলিল তৈরি হচ্ছে। বাদ দেয়ার রাজনীতির মনস্তত্ত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই ছিল জুলাইয়ের অন্যতম প্রধান স্পিরিট। জুলাইয়ের পরর্বতী সময়ে সকলের আলোচনা থাকলেও শ্রমিকের কেমন বাংলাদেশ চাই সেই আলোচনা কোথাও নেই। লোকবল দরকার হলে সবাইকে পাশে পাওয়া গিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের বিনির্মাণের সময় বিভিন্ন লিঙ্গ ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে দূরে ঠেলে একটি বিরাজনীতিকীকরণের পথ বেছে নেয়া হয়েছে।

জুলাইকে ব্রাহ্মবাদ অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে। একজাত হলো ব্রাহ্মণ যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন আর একজাত হলো শূদ্র যারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন এবং নারীকে বানানো হয়েছে নমঃশূদ্র অর্থাৎ যারা দলিত।

অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে যেনো বাইনারিতে ভাগ না করা হয় সেই দিকে মনোযোগ রাখতে হবে। ১৪ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা হল থেকে বের হয়ে থালা-বাটি নিয়ে মিছিল করেছে এবং ১৫ তারিখ ছাত্রলীগ ও তাদের গুন্ডাদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছে। নারীদের এই বের হওয়া জুলায়ের অন্যতম ভিত্তি তৈরি করেছে। ১৮ তারিখ ও পরবর্তীকালে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান কীভাবে বাদ দেয়া হয়েছে সেটা পনেরো সমন্বয়কের সাক্ষাৎকার বইয়ে উঠে এসেছে।

বইটি সম্পর্কে জানা যায়, জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলি শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা নয় বরং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে একটি অসাধারণ সংযোজন। ফ্যাসিবাদী সরকার ও তার সকল রাষ্ট্রীয় কলকব্জার বিরুদ্ধে কীভাবে এই আন্দোলনটি গড়ে উঠলো, কীভাবে মরিয়া প্রতিরোধ গড়ে উঠলো, সেই অনুসন্ধানের একটি প্রয়াস এই সাক্ষাৎকারের সংকলনটি। বৈষম্যবিরোধী সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পনেরোজন সমন্বয়কের নিজের মুখ থেকেই এমনি আরও অজস্র প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে বইতে।



মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ