Views Bangladesh Logo

অপারেশন সিঁদুর: আলোচনায় সোফিয়া কুরেশি ও ব্যোমিকা সিং

কাশ্মীরে হামলার পর নানার জল্পনা-কল্পনা শেষে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে চালানো এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতের দাবি, পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটককে হত্যার পর তাদের স্ত্রীদের সিঁদুর মুছে দেয়ার ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই এ অভিযান।

এই অভিযান ঘিরে যেমন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তেমনি নজর কেড়েছে সরকারি ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া দুই ভারতীয় নারী সেনা কর্মকর্তা— কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংয়ের উপস্থিতি।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রর সঙ্গে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে এই দুই নারী সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতিকে অনেকে ভারতের নারীশক্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছেন। তারা শুধু নারী বলেই নয়, বরং দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়েও এক ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে ভারতীয় অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা দিচ্ছেন বলেও মত কূটনীতিকদের। কীভাবে কখন পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’র ঘাঁটি ভারতীয় বাহিনী গুঁড়িয়ে দেয়, সোফিয়া ও ব্যোমিকা তার বিবরণ দেন। সেই থেকে সৃষ্টি কৌতূহলের। এই দুই নারীর পরিচয় জানতে আগ্রহ দেখা যায় সর্বত্র।

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বরাবরই পরিচিত সাহস ও নেতৃত্বের জন্য। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে বহুজাতিক সামরিক অনুশীলন ‘এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮’-এ (২০১৬ সালে পুণেতে আয়োজিত) নেতৃত্ব দেন। ১৮টি দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ মহড়ায় তিনি ভারতীয় ৪০ সদস্যের দলের কম্যান্ডিং অফিসার ছিলেন।

শান্তিরক্ষার কৌশল ও মানবিক মাইন অ্যাকশন বিষয়ক প্রশিক্ষণে তার নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়েছিল। ২০০৬ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে মিলিটারি অবজারভার হিসেবে কঙ্গোতে কাজ করেন তিনি এবং ২০১০ সাল থেকে তিনি নিয়মিত এই খাতে সক্রিয়। তার পরিবারও সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে— সোফিয়ার পিতামহ সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং তার স্বামীও একজন সেনা কর্মকর্তা।

উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা আরেক কর্মকর্তা উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন আকাশে ওড়ার। তার নাম 'ব্যোমিকা'-র অর্থই আকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর সেটিই যেন তার স্বপ্নকে দৃঢ়তর করেছিল। স্কুলে থাকাকালীনই তিনি এনসিসিতে (ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর) যোগ দেন, পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেন এবং নিজের পরিবারে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেন।

বর্তমানে তিনি ভারতীয় বায়ুসেনায় (বিমান বাহিনী) একজন হেলিকপ্টার চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং যুদ্ধাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

এই দুই নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি ও নেতৃত্ব কেবল একটি সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং বৃহত্তর অর্থে ভারতীয় সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছেন ভারতীয় বিশ্লেষকেরা।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ