বগুড়া কারাগারে এক মাসে চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু, শঙ্কায় পলাতক নেতারা
বগুড়ায় কারা হেফাজতে মারা গেছেন আওয়ামী লীগের চারজন নেতা। এক মাসের মধ্যে তাদের মৃত্যুর ঘটনায় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে কারাগার নিয়ে ভীতি কাজ করছে।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন- গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদাৎ আলম ঝুনু, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ এবং শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তারা সবাই জেলা কারাগারে ছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছেন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আওয়ামী লীগের ওই নেতারা। পরে অসুস্থ হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা।
কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় সর্বশেষ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে মারা যান ৬৫ বছরের আব্দুল মতিন মিঠু। ৩ নভেম্বর একটি হত্যা ও বিষ্ফোরক মামলায় মিঠুকে গ্রেপ্তার করে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
কারাগারের জেলার সৈয়দ শাহ শরীফ জানান, গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিঠু। পরে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মিঠুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় মারা যান অধ্যক্ষ শাহাদাৎ আলম ঝুনু। বেলা পৌনে ১২ টার দিকে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শজিমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে সিরাজগঞ্জে তার মৃত্যু হয়। ২৪ আগস্ট থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন ঝুনু।
২৩ নভেম্বর জেলা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আব্দুল লতিফকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ নভেম্বর সকালে তার মৃত্যু হয়। ১১ নভেম্বর একই কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান শহিদুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন পলাতক নেতা জানান, জেলা কারাগারে একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতা মারা যাচ্ছেন। কারা হেফাজতে এভাবে মৃত্যুর ঘটনা বাইরে থাকা নেতাদের মনেও ভীতি জাগিয়েছে। গ্রেপ্তার হলে কারাগারে তাদের সঙ্গে কী ঘটবে, এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারাও।
কারাগারে থাকা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে দেখা করলে তারা জানান, গ্রেপ্তার হওয়া মামলায় জামিন পাওয়ার পরও কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না তারা। জেল গেটেই তাদের বিরুদ্ধে আরও মামলা দিয়ে ফের কারাগারে ঢোকানো হচ্ছে। এসব চিন্তায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ‘সবদিক থেকে কারাগারেও ভালো নেই আমরা। জানি না ভাগ্যে কী আছে’- বলছিলেন কারাবন্দি এক নেতা।
বগুড়ার জেল সুপার ফারুক আহমেদ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতিরিক্ত টেনশন করছেন। আমরা তাদের এত চিন্তা করতে নিষেধ করি। এরপরও অতিরিক্ত চিন্তার কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা অবহেলা করি না, সর্বোচ্চটা দেয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এরপরও যদি কারও মৃত্যু হয়, তা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা’।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে