হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে: মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান
রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুল চিকিৎসা, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে রোগী মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে কমিশন। রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ১০ বছর বয়সী আহনাফ তাহমিদকে সুন্নতে খতনা করাতে গেলে নির্ধারিত স্থানে অ্যানেস্থেশিয়া না দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত জেনারেল অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয়। এতে শিশুটি মারা গেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। কিছুদিন আগেও রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে আরেক শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়েছে।’
ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১৬ জানুয়ারি বরগুনার বামনায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি নারী মেঘলাকে ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনভিজ্ঞ আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সবুজ কুমার দাসসহ পাঁচ-ছয় জন মিলে তার অস্ত্রোপচার শুরু করেন। সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে, সেখানে মেঘলার পেটে অস্ত্রোপচারের প্রায় দুই ঘণ্টা পর অবস্থা বেগতিক দেখে জীবিত নবজাতককে ফের মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দ্রুত বরিশালে নিতে বলেন চিকিৎসকরা। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে পথে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন। কমিশনের তদন্তে ওই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিহত মেঘলার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।’
তিনি বলেন, ‘রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর ছেলেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা চরম নির্যাতন করেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসকদের ফি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করানোর জন্য ফি দিতে রোগীদের প্রচুর অর্থ খরচ করতে হলেও আশানুরূপ চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না।’
এ ছাড়াও বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ঘটনা লক্ষ্য করছে মানবাধিকার কমিশন। এ প্রসঙ্গে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এসব ঘটনা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। এ কারণে স্বাস্থ্য খাত চরম নৈরাজ্য ও নিষ্ঠুরতার খাত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। দেশ যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্য খাতের চরম নৈরাজ্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের অভাবে যত্রতত্র অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং চিকিৎসক ও নার্সদের ন্যূনতম যোগ্যতা ছাড়াই লাগামহীনভাবে অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা কর্মকাণ্ড চলছে। অবিলম্বে এসব অনুমোদনহীন হাসপাতাল চিহ্নিত করে হঠকারিতামূলক চিকিৎসা বন্ধ করতে হবে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে