ঈদের আগে কারখানা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করুন
ঈদের আগে অনেক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয় না। বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস আদায়ের দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন, গত কয়েক বছর ধরেই এটা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের একটা নিয়মিত করুণ চিত্র। যেসব শ্রমিক সারা বছর ধরে পরের পোশাক সেলাই করেন, ঈদের আগে তারা নিজের নতুন জামা কিনতে পারেন না। গত এক সপ্তাহ ধরেই বেতন-ভাতা ও বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভের চিত্র দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পোশাক কারখানায়। সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পের সব কারখানা শ্রমিকের ঈদ বোনাস দেয়নি। চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধেও পিছিয়ে আছে অনেক কারখানা। এর বাইরে বন্ধ থাকা কয়েকটি কারখানার বেতন-ভাতা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধ নিয়ে আগে থেকেই সমস্যা চলছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, তিন মাসের বকেয়া মজুরি, ঈদ বোনাসসহ অন্যান্য দাবিতে ঢাকায় শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন টিএনজেড গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা৷ তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ কয়েকটি জেলার অন্তত ৪৩ তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নির্বিঘ্ন করতে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ সভায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। চলতি সপ্তাহে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান, সড়ক অবরোধ ও বিজিএমইএ ভবন অবরুদ্ধ করার মতো ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করায় গত মঙ্গলবার বন্ধ থাকা ১২টি তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এগুলো হলো রোর ফ্যাশন, স্টাইলক্রাফট ও ইয়াং ওয়ান্স, ডার্ড গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান, মাহমুদ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান, টিএনজেড গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান।
শ্রমিক নেতারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকারের আগে থেকে কঠোর হওয়া উচিত ছিল। তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এতটা জটিল হতো না। বর্তমানে কারখানার মালিকের সম্পত্তি বিক্রি বা বন্ধক কিংবা বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর তহবিল থেকে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা প্রয়োজন। সেটি সম্ভব না হলে বেক্সিমকোর শ্রমিকদের যেভাবে টাকা দেয়া হয়েছে সেভাবেই সমস্যাযুক্ত কারখানার শ্রমিকদের পাওনা মেটানো উচিত।
ঈদের আগে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনভাতা ও বোনাস পরিশোধ না করা অত্যন্ত দুঃখজনক। পরিবার-পরিজন ও ছোট সন্তানদের নিয়ে তারা ঈদের ছুটি কীভাবে কাটাবে এটা কারখানা মালিকদের অবশ্যই আগে থেকে ভেবে দেখা উচিত। সরকারের উচিত এসবের বিরুদ্ধে আগে থেকেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। ঈদের আগে আগে এসব যদি প্রতি বছরই চলতে থাকে তাহলে তা দেশের পোশাকশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা চাই যে করেই হোক ঈদের আগে যেন প্রতিটি কারখানার শ্রমিকদের বেতনভাতা ও বোনাস পরিশোধ করা হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে