চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ২০২৪
অনেকেই আমাকে বলত, ‘তুমি হয়তো নোবেল পাবে দেখো’
নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিকে নোবেল কমিটি থেকে ফোন করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায় পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রথম প্রতিক্রিয়া। নোবেল কমিটির ওয়েব সাইট থেকে এই সাক্ষাৎকারগুলো বাংলা ভাষান্তরসহ প্রকাশিত হচ্ছে ভিউজ বাংলাদেশ-এর পাঠকদের উদ্দেশ্যে। ২০২৪ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুন। মাইক্রো-আরএনএ আবিষ্কার এবং পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন তারা। আজ প্রকাশিত হলো ভিক্টোর অ্যামব্রোসের প্রথম প্রতিক্রিয়া।
এই সাক্ষাৎকারে ভিক্টোর অ্যামব্রোস কথা বলেছেন আরএনএ নিয়ে তার গবেষণার আনন্দ নিয়ে। তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এ খবর জানার পর পরই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়। আমরা এটাও আবিষ্কার করি কীভাবে তিনি তার ছেলের মারফত খবরটি পান। ছেলে তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘সুইডেন থেকে তুমি কোনো ফোন পেয়েছ?’
ভিক্টর অ্যামব্রোস: হ্যালো?
এডাম স্মিথ: হ্যালো, আমি কি ভিক্টর অ্যামব্রোসের সঙ্গে কথা বলছি?
ভিক্টর অ্যামব্রোস: হ্যাঁ, বলছেন। সুপ্রভাত।
এডাম স্মিথ: শুভ সকাল। আমি জানি ওখানে এখনো ভোর। সুখবরের জন্য অভিনন্দন!
ভিক্টর অ্যামব্রোস: ধন্যবাদ। দুঃখিত, আমার ফোনটি অন্য ঘরে ছিল। তাই আগের ফোনকল শুনতে পারিনি।
এডাম স্মিথ: না, না, ঠিক আছে। আমার মনে হচ্ছে নোবেল কমিটির টমাস পার্লম্যানের সঙ্গে আপনার এখনো কথা হয়নি।
ভিক্টর অ্যামব্রোস: না, বলা হয়নি।
এডাম স্মিথ: আপনি আসলে খবরটি প্রথম শুনেছেন এক সাংবাদিকের ফোন পেয়ে?
ভিক্টর অ্যামব্রোস: আমি আমার ছেলের কাছ থেকে শুনেছি প্রথম! হ্যাঁ, একজন সাংবাদিক আমার ছেলেকে ফোন করেছিলেন। ঠিক, সাংবাদিকের কাছ থেকে শুনেই আমার ছেলে আমাকে ডেকেছিল।
এডাম স্মিথ: পিতাকে পুত্রের ডাকার জন্য সুন্দর মুহূর্ত নিশ্চয়।
ভিক্টর অ্যামব্রোস: হ্যাঁ, অবশ্যই।
এডাম স্মিথ: এখন এটা জিজ্ঞেস করা কেমন হবে জানি না, খবরটি পাওয়ার পর আপনার সব কিছু তো নিশ্চয়ই আর আগের মতো নেই, কিন্তু আমি যদি জিজ্ঞেস করিই, খবরটি শোনার পর আমার প্রথম অনুভূতি কী ছিল?
ভিক্টর অ্যামব্রোস: প্রথম অনুভূতি ছিল বিরাট বিস্ময়। আমার বন্ধু গ্রেগ মেলো ও অ্যান্ডি ফায়ারও আরএনএ নিয়ে গবেষণার জন্য নোবলে পুরস্কার পেয়েছিল। মাইক্রোআরএনএ নিয়ে গবেষনার জন্য কেউ নোবেলে পাবে আমি ভাবতাম। অনেকেই আমাকে বলত, ‘তুমি হয়তো নোবেল পাবে দেখো।’
এডাম স্মিথ: সুতাকৃমির জন্য চারজন নোবেল পুরস্কার পেলেন এ পর্যন্ত।
ভিক্টর অ্যামব্রোস: হ্যাঁ, এর জন্য আমি অবিশ্বাস্যরকমের গর্বিত। আর গ্যারি রুভকুনও আমার সঙ্গে পুরস্কার পেয়েছেন। গ্যারি আমার খুবই ভালো একজন বন্ধু। আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া কী ছিল, প্রথমে এটা একটা বড় চমক ছিল বটে, তারপর এটা এক নিঃশব্দ আনন্দ। আপনি জানেন মৌলিক বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে এটা যখন ঘটে, বিশেষ করে সূতাকৃমি নিয়ে যারা কাজ করেন, আমার মনে হয় এটা ভালোই, কারণ, তাতে সবাই এসব কাজে উৎসাহ পায়। আমরা এটাকে একটা উপায় হিসেবে দেখি, উদযাপন হিসেবে নয়। বিজ্ঞানের কোনো বিশেষ শাখার জন্যও নয়, সমগ্র বিজ্ঞানচর্চার জন্যই। জটিল জিন তত্ত্বে মানুষের আগ্রহ বাড়বে, এই জটিল জিনের জটিল কার্যকলাপ কীভাবে চলে তা অল্প অল্প জানতে জানতেই আরো ব্যাপকভাবে জানার আগ্রহ জন্মাবে।
এডাম স্মিথ: নতুন প্রপঞ্চের সন্ধান এবং সেগুলো নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করা একটা বিশেষ আর্ট। ডেভিড বাল্টিমোরের কাছে আপনি পিএচডি করেছেন, পোস্টডক্টরাল গবেষণা বব হরভিজের কাছে। তাদের প্রশিক্ষণ কি আপনার এই প্রত্যাশিত আর্ট অর্জনে সহযোগিতা করেছে?
ভিক্টর অ্যামব্রোস: হ্যাঁ, হ্যাঁ, খুবই হেল্প করেছে। কয়েকজন চমৎকার বিজ্ঞানীর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। যেমন বব আর ডেভিডের সঙ্গে। এর আগে পোস্টডক্টরাল গবেষণা করেছি এডওয়ার্ড গ্রুবার্গের সঙ্গে। পরামর্শক হিসেবে গ্রুবার্গ ছিলেন অসামান্য। তিনি আমাকে সব সময় বলতেন নিয়মিত কাজের মাধ্যমেই তুমি নতুন কিছু খুঁজে পাবে। তিনি আমাকে শেখাতেন কীভাবে সাহিত্য পড়তে হয়। তিনি বলতেন নতুন কিছু খুঁজে পাবার প্রাথমিক শর্ত এই তালিকা করা যে কী জানা গেছে আর কী জানা যায়নি।
এডাম স্মিথ: এই পুরস্কারটি শুধু আরএনএ-এর বহুমুখিতার জন্য না, আমি বলতে চাচ্ছি, আবারও অপ্রত্যাশিত কিছু।
ভিক্টর অ্যামব্রোস: হ্যাঁ, আপনি সত্যিই একটা ভালো পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। ওভাবে ভাবলে আমরা রোমাঞ্চকর ব্যাপার। আমি মাত্র অটোয়া থেকে একটা মিটিং করে ফিরলাম। রিবোক্লাবে হয়েছিল মিটিংটা। ৫০০ জনের ওপর মানুষ ছিলেন সেখানে। তারা আরএনএ কানাডা গঠন করেছেন, এবং সেটা উদযাপন করছেন। এটা দেশব্যাপী গড়ে তোলা বিজ্ঞানীদের একটা নেটওয়ার্ক। আরএনএসহ কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও এখানে নিজেদের মধ্যে মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। আমরা সবাই জানি যে আরএনএ আকর্ষণীয়, এবং অবিশ্বাস্যভাবে বহুমুখী। পুরো মিটিংটি ছিল এক ধরনের আরএনএ উদযাপনের মতো, বিশেষ করে যখন আমি পোস্টার সেশনে গিয়েছিলাম, তরুণরা অবিশ্বাস্য রকমের বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজ হাজির করেছে পোস্টার সেশনে।
এডাম স্মিথ: আমি মনে করি আজকের এই খবরটি এ ক্ষেত্রে আরও উৎসাহ জন্মাতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে প্রথম খরবটি দেয়ার সময় আপনার ছেলে আপনাকে ঠিক কী বলেছে?
ভিক্টর অ্যামব্রোস: (ফোনের পাশে কাউকে ডেকে) হেই ক্যান্ডি, গ্রে কী বলেছিল? সে বলেছিল, ‘তুমি সুইডেন থেকে কল পেয়েছ? তোমাকে ফোনে কথা বলতে হবে।’
এডাম স্মিথ: দারুণ! আচ্ছা, অনেক ধন্যবাদ। আবারও অভিনন্দন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে