Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

তীব্র তাপপ্রবাহে শঙ্কায় চিকিৎসকরা

Kamrul  Hasan

কামরুল হাসান

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

নিজের আড়াই বছরের ছেলে তায়েফকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন মিরপুরের বাঘবাড়ির বাসিন্দা মিজানুর রহমান। কারণ শিশুটি গত চার দিন ধরে টানা জ্বরে ভুগছিল। এমতাবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাকে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এ এফ এম সাইদুর রহমানের কাছে আনা হয়। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে তিনি এ ধরনের অসংখ্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক রোগীর চিকিৎসা করছেন। এমনকি এ কারণে ঈদের ছুটিও সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে তাকে।

ডা. এ এফ এম সাইদুর রহমান বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, হাঁপানি ও চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীরাও বর্তমান তাপপ্রবাহের কারণে অনেক বেশি ভুগছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে বয়সের দিক থেকে ৬০ বছরের বেশি ও ১০ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) বলছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ রোগী ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ৭০০’র বেশি হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ বলা যেতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।

এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ (শিশু হাসপাতাল) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি জ্বর, ডায়েরিয়া, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বর্তমান তাপপ্রবাহ বা গরম আবহাওয়া আগামী বেশ কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। যা তাপজনিত মৃত্যু বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বিপজ্জনক। তবে এটিকে সাধারণত খুব কমই গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ এর বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান হতে সময় লাগে।

শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে জ্বর, ডায়েরিয়া, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ও জন্ডিসের রোগীরাই হাসপাতালে বেশি ছুটছেন।

এ জন্য তাপজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধে এ সময় শিশুদের বেশি করে পানি ও তরল পানীয় পান করাতে এবং তাদের বেশিরভাগ সময় বাড়ির ভেতরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে তাপপ্রবাহের সময় নিরাপদ থাকার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বসবাসের স্থান যতটা সম্ভব শীতল রাখা এবং দিনের বেলা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও রাতে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশু বা ৬০ বছরের বেশি বয়সী বা ক্রনিক রোগে আক্রান্ত মানুষদের জন্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো- এই সময় ঠান্ডা পানিতে গোসল করা, হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা। এর পাশাপাশি বিছানায় হালকা সুতি বা লিনেনের চাদর ব্যবহার করা এবং কোনো কুশন ব্যবহার না করা।

ডব্লিউএইচও’র মতে, তাপপ্রবাহের সময় নিয়মিত তরল পানীয় পান করা উচিত। তবে অ্যালকোহল ও অত্যধিক ক্যাফিন ও চিনি এড়ানো এবং পরিমাণে কম খাবার ঘন ঘন খাওয়া উচিত। এ ছাড়া উচ্চ প্রোটিন বা আমিষযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।

এসব সুপারিশ পুনর্ব্যক্ত করে ডা. সাইদুর রহমান দৈনিক দুই থেকে আড়াই লিটার তরল পানীয় পান করা এবং ফুল হাতার জামা-কাপড় পরার পরামর্শ দিয়েছেন, যেন সরাসরি সূর্যের সংস্পর্শ রোধ করা যায়।

এ ব্যাপারে কক্ষের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা এবং কক্ষ ঠান্ডা রাখার ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম। সেইসঙ্গে তিনি বাবা-মাকে সরাসরি সূর্যের আলোতে শিশুদের না আনতে পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ঘাম থেকে ডিহাইড্রেশন রোধ করতে দিনের বেলা তাপ কমে যাওয়ার পর বাবা-মায়েদের তাদের শিশুকে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসতে হবে।

একইসঙ্গে খাওয়ার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়া, নিরাপদ পানি ব্যবহার ও পরিবেশ ঠান্ডা রাখার মতো বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও পরামর্শ দেন  এই চিকিৎসক।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ