Views Bangladesh Logo

পিকেকে বিলুপ্তির ঘোষণায় কুর্দিদের ৪০ বছরের সশস্ত্র সংগ্রামের অবসান

সংগঠন বিলুপ্ত ও চার দশকের সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে তুরস্কের কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। এ সিদ্ধান্ত ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের সঙ্গে দলটির চলমান সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

৫ থেকে ৭ মে উত্তর ইরাকের অজ্ঞাত স্থানে ১২তম কংগ্রেসে নেয়া এই সিদ্ধান্ত সোমবার (১২ মে) কার্যকর করেছে কুর্দিদের পৃথক ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠার লড়াইরত পিকেকে। এই লড়াই তুরস্ক ছাড়াও ছড়িয়ে পড়েছিল প্রতিবেশি সিরিয়া ও ইরাকের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতেও, যা ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে।

তুরস্ক ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন পিকেকে’র কার্যকলাপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে গত কয়েক বছরে তুরস্কে দলটির সশস্ত্র হামলা অনেকটাই কমে এসেছিল। কারণ, তুর্কি সেনাবাহিনীর প্রতিরোধে পেছাতে পেছাতে পাহাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে ইরাকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল কুর্দিরা।

চূড়ান্ত ঘোষণায় পিকেকে’র কংগ্রেস বোর্ড জানায়, তাদের সশস্ত্র লড়াই কুর্দিদের অধিকার আদায়ের লড়াই। যারা কুর্দিদের অধিকার খর্ব করছিল, তাদের বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে পিকেকে। কিন্তু এখন তারা মনে করে, তাদের সেই ঐতিহাসিক লক্ষ্য পূরণ ও দায়িত্ব শেষ করেছে। কুর্দি সমস্যাটিকে গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাধানের পর্যায়ে নিয়ে যেতেও পেরেছে পিকেকে।

বিবৃতিতে কংগ্রেসের প্রস্তাবে নিজ নামে সব কার্যক্রম ও সশস্ত্র লড়াই বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পিকেকে। নিরস্ত্রীকরণ ও রূপান্তর প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করবেন গ্রুপটির কারাবন্দি নেতা ও আদর্শিক ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ ওকালান। ১৯৯৯ সালে ধরা পড়ার পর থেকে ইমরালি দ্বীপে নির্জন কারাগারে বন্দি ওকালান চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দলটিকে বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তুরস্ক সরকারের ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপ ও আঙ্কারায় নতুন রাজনৈতিক উন্মোচনের উত্থানের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত এলো। একে স্বাগতও জানিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)।

একেপি’র মুখপাত্র ওমর চেলিক এটিকে তুরস্কের রাজনীতিতে ‘নতুন যুগের সূচনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এক্স-এ দেয়া পোস্টে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক’- এর দিকে এই পদক্ষেপ পুনরুজ্জীবিত রাজনৈতিক সংলাপ, গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণ এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করতে পারে।

চেলিক জোর দিয়ে বলেন, বৈধ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিরই এখন দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে প্রাথমিক ফোরাম হিসেবে কাজ করা উচিত। সব নাগরিককে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের সাধারণ পরিচয় গ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি।

‘যদি এই সিদ্ধান্তের পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং পিকেকের সব শাখা ও অবকাঠামো যদি একেবারে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়, তাহলে তুরস্কের ভবিষ্যৎ ও রাজনীতিতে এটি হবে বড় বাঁকবদল’- বলেন তিনি।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ