Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বন্যার পর গাছপালার যত্ন নিন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রলয়ংকরী বন্যায় দেশের ১১টি জেলা সম্পূর্ণ ও আংশিক ডুবে গিয়েছিল। কোথাও কোথাও পানির উচ্চতা ছিল ২০ থেকে ২২ ফুট। ফলে গাছপালাও নিমজ্জিত হয়েছিল। তৃণলতা ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে গবাদি পশুর আহারেরও সংকট দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছ ও তৃণলতার যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা।

গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বন্যার পানি সরে যাচ্ছে দ্রুত। বেরিয়ে আসছে প্রাণ ও প্রকৃতির ক্ষত। তৃণলতা, গুল্ম ও বীরুৎজাতীয় উদ্ভিদের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে। মাটির নিচে থাকা মোথা বা শিকড় থেকে কিছু উদ্ভিদ মাথা তুলে দাঁড়াবে। বড় অনেক গাছ পানিতে ডুবে নির্জীব হয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেক গাছই শুকিয়ে মারা যাবে। কিছু গাছ হেলে পড়েছে, ভেঙে গেছে। সেগুলোরও ক্ষতি হবে।

বন্যায় বৃক্ষের দুই ধরনের ক্ষতি হয়েছে- শারীরিক ও শরীরবৃত্তীয়। বৃক্ষের প্রজাতি, গাছের স্বাস্থ্য, বছরের বন্যার সময়, বন্যার ঘটনার দৈর্ঘ্য, জলের গভীরতা এবং গাছের শিকড় থেকে সরে যাওয়া মাটি বা জমা হওয়া পলির পরিমাণ ইত্যাদি নির্ণয়ের মাধ্যমে গাছের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।

ছোটবেলায় আমরা দেখতাম, বন্যার পর পরই গ্রামের মুরব্বিরা গাছগাছালি, ফসল ও উদ্ভিদের যত্ন নেয়ার জন্য তোরজোর শুরু করে দিতেন। কোনো উদ্ভিদবিজ্ঞানীর পরামর্শ তাদের প্রয়োজন হতো না। হাজার বছরের কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা থেকেই তারা এই প্রাকৃতিক জ্ঞান আহরণ করেছিলেন। প্রথমে তারা ধান রোপণের বীজতলা তৈরি করতেন। বাড়ির আশপাশের গাছপালাগুলো ঠিকঠাক আছে কি না, খোঁজ নিতেন। হেলে পড়া, গোঁড়াভাঙা গাছগুলো লাঠি বা বাঁশের মাধ্যমে ঠেক দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতেন।

যেসব গাছ একেবারেই আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়, প্রয়োজনে সেগুলোর শিকড়সহ তুলে নতুন গাছের চারা লাগাতেন। বৃক্ষের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান চিরকালই বন্ধুর মতো, পরম আত্মীয়র মতো। তৃণলতা, পথের পাশের ঘাসগুলোরও আলাদা যত্ন নেয়া হতো। তখনকার মানুষ গৃহপালিত পশুপাখির খাবারের জন্য প্রকৃতির ওপরই নির্ভর ছিল বেশি। ফলে বন্যার পর পুরো প্রকৃতিকে তারা আবার ঢেলে সাজিয়ে নিতেন।

কৃষিভিত্তিক সমাজ ভেঙে পড়ার কারণে বর্তমান সময়ের মানুষ অনেকটাই প্রকৃতির কাছ থেকে সরে এসেছে। তাই তাদের জন্য প্রয়োজন বাড়তি দিক-নির্দেশনা। তা ছাড়া, ফেনী, কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ এবার এমন কিছু অঞ্চলে বন্যা হয়েছে, যেসব অঞ্চলে মানুষ এরকম বন্যা আগে কখনো দেখেননি। তাই তাদের জন্য উদ্ভিতবিজ্ঞানীদের পরামর্শ হচ্ছে, বন্যার পরে গাছের মূলতন্ত্রের ওপর কয়েক ফুট বালি, পলি বা কাদামাটি জমা হয়, মূল চলে যায় মাটির গভীরে। এর ফলে মূলে দীর্ঘমেয়াদি অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয়।

কিছু গাছে জমে থাকা মাটির ওপরের স্তরগুলোতে নতুন শিকড় তৈরি হতে পারে, তবে অন্য গাছগুলো অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর গাছের নিচে জমে থাকা মাটি যতটা সম্ভব সরিয়ে আসল মাটির মতো পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। মাটি সরে বেরিয়ে যাওয়া শিকড়ের ওপর পলিমাটি জমলে তা এমনভাবে সরাতে হবে, যাতে শিকড়ের কোনো ক্ষতি না হয়। এই কাজ করতে হবে দ্রুত ও সাবধানে। গাছ যে মানুষের কত বড় বন্ধু, তা এবারের বন্যায়ও বোঝা গেছে।

গাছের ডাল আঁকড়ে ধরে মানুষ ভেসে যাওয়া ঠেকিয়েছে। পাখি, সাপ, বেজি, গুঁইসাপ ইত্যাদি প্রাণী আশ্রয় পেয়েছে গাছে। তাই পরিবেশবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলে প্রচুর মাটি ও জলবায়ু উপযোগী বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। বন্যাপ্রবণ স্থানে গাছ লাগানো বা প্রতিস্থাপন করার সময় এমন গাছের প্রজাতি বেছে নিতে হবে, যেগুলো জলমগ্নতা সহনশীল, শক্ত ও দীর্ঘজীবী। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও বর্তমান সরকার বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষের যত্নের বিষয়ে আরও সচেষ্ট হবে। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা ও গাছগাছালির যত্নের বিষয়ে প্রচুর প্রচার চালিয়ে সরকার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ