জনগণের কাছে যান, তাদের জন্য কাজ করুন: সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তাদের জনগণের কাছে গিয়ে তাদের জন্য কাজ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকারের সব কর্মকাণ্ড দেশের মানুষের কল্যাণে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের সকলকে এই আহ্বান জানাব যে, মানুষের পাশে যান, মানুষের জন্য কাজ করেন।’
বুধবার (৬ মার্চ) রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলন-২০২৪’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত নৈশভোজ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা অতিমারীসহ সকল দুর্যোগেই আপনারা কাজ করে যাচ্ছেন, দায়িত্ব কিন্তু এখনও রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে ততক্ষণ আপনাদের কাজগুলো করে যেতে হবে। সেজন্য আমি আপনাদের সকলকে এই আহ্বান জানাব যে, মানুষের পাশে যান, মানুষের জন্য কাজ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় যেভাবে গণহত্যা চলছে তার প্রভাবটা অর্থনীতির ওপর পড়েছে। আমরা কিন্তু সেখান থেকে দূরে নই। কাজেই যে মূল্যস্ফীতির চাপটা আমাদের ওপর পড়ে গেছে তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্বব্যাপী মন্দার এ প্রভাবে ডলারের মূল্য বেড়ে গেছে। ফলে আমদানি মূল্য বেড়ে গেছে। পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। কাজেই আমাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে।
‘আমরা চাই আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি হবে জনগণকে কেন্দ্র করে। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, জ্ঞানভিত্তিক ও কল্যাণমুখী দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন আমরা গড়ে তুলতে চাই। যাতে জনগণ উন্নত এবং মানসম্মত সেবা পায়।’
‘সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই কাজটা আপনাদেরই করতে হবে। এবারে আমরা ঘোষণা দিয়েছি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম সেটা আমরা করেছি। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। কারণ সময় ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী জনগোষ্ঠী আমাদের গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য যে, আমাদের স্মার্ট সিটিজেন হবে, স্মার্ট ইকনোমি হবে, স্মার্ট গভমেন্ট হবে এবং স্মার্ট সোসাইটি হবে। দেশকে আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সাল থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। এই যাত্রাকে সফল করেই ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব এবং নিজের দেশকে গড়ে তুলব। প্রতিটি মানুষের জীবন আমরা পরিবর্তন করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা খুব স্পষ্ট। আমরা ইশতেহার দিয়েছি। আমরা কিন্তু এই নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে অঙ্গীকার করে আসি। আর সেই ইশতেহার বাস্তবায়নের মধ্যদিয়েই আজকের দেশটা কিন্তু বদলে গেছে। প্রতিটি বাজেটে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারটা অনুসরণ করতাম বলেই এই পরিবর্তনটা করতে পেরেছি। পাশাপাশি বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময় মতো এর সংযোজন পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করতে হয়, যেটা আমরা করি।’
উন্নয়ন সহযোগিদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নেই ঋণ হিসেবে এবং তার সুদসহ তা আমরা ফেরত দেই। কিন্তু আমাদের দেশের উন্নয়নের কাজ আমরা যতোটুকু বুঝবো বাইরের কেউ এসে তা বুঝবে না। আমার দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা, তাদের মানসিকতা, আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করেই আমরা পরিকল্পনা নেব এবং তা বাস্তবায়ন করব। সেখানে আমরা খবরদারি শুনতে রাজি নই বরং আমরা যেভাবে চাই সেভাবেই উন্নয়নের পরিকল্পনাটা করতে হবে। সেটাই আমার কথা।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে