সরকারি প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে সারাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায় বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মত আমার আর কোন ভাষা নেই।’
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আবেগাপ্লুত কন্ঠে এ কথা বলেন সরকার প্রধান। সেই সঙ্গে দেশবাসীর প্রতি যারা ১৭ জুলাই থেকে একাধিক দিন ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে এবং তাঁর সরকারের জনজীবনকে সহজ এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করতে গত ১৫ বছরে নির্মিত সরকারি স্থাপনায় কোটা আন্দেলনকে পুঁজি করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের প্রতিহত করারও আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই মেট্রোরেল করার সময়ও অনেক বাধা-বিঘ্ন আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছিল। সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে এই মেট্রোরেল আমরা করে দিয়েছি এবং সময়ের আগেই আমরা করতে পেরেছি। আজ মেট্রোরেল বন্ধ, কারণ এই ষ্টেশন সেভাবে ধ্বংস হয়েছে যেটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক সিষ্টেম, সম্পূর্ণ মডার্ণ। এটা তো কত দিনে ঠিক হবে আমি জানি না। কস্ট পাবে মানুষ।
সরকার প্রধান বলেন, এটা তাঁর সরকার করে দিয়েছে সকলে যাতে সময়মত স্কুল কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে পারেন এবং কর্মস্থল থেকে আবার ঘরে ফিরে অন্তত কিছুটা সময় পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারেন। আর্থিক দিকটাও সাশ্রয় হয়। সেসব কথা চিন্তা করেই তাঁর সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যম নির্মাণ করে দিয়েছে। অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
মেট্রোরেল ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে আপনারাই কস্ট পাবেন। দেশের মানুষই কস্ট পাবে। এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবেন। ঘন্টার পর ঘন্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। কর্মস্থলে সময়মত পৌঁছানো আবার ফেরত আসায় দীর্ঘ সময় লাগবে, বসে বসে সেই ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া থেকে আপনাদের এই কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘তাই আমি আপনাদেরকেই বলবো যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করলো তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এর বিচার তাদের করতে হবে। আমি তাদের কাছেই বিচার চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, যেসব স্থাপনা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করে বেছে বেছে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। যারা উন্নয়নবিরোধী এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের মানসিকতা কোন ধরনের সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যারা আজ বিদেশে যাচ্ছে, তারা সেই সম্মান পাচ্ছে। আগে সেটা পেত না। ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে আমাদেরকে একটা বঞ্চনার স্বীকার হতে হয়েছে। আজকে সেটা ছিল না। কিন্তু আমি জানি না এই যে প্রতিটি স্থাপনা তৈরি করেছি, যেগুলো মানুষকে সেবা দেয় এবং তাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে। ঠিক সেইগুলো ভেঙে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়া কী ধরনের মানসিকতা।
সরকার প্রধান বলেন, এই মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে মানুষ যাতায়াত করছে। এই মেট্রোরেলের ওপর কেন এতো আক্রমণ? এটাই আমার প্রশ্ন। এই মেট্রোরেল এবং এর ষ্টেশনগুলো যে আমরা তৈরি করেছি এর সার্ভিসসহ সবকিছুই ছিল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। অন্যান্য বহু দেশের তুলনায় একটি আধুনিক দৃশ্যমান সুন্দর একটা মেট্রোরেল আমরা করেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধ্বংসের চিহ্ন দেখলাম এটা বিশ্বাস হতে চায় না যে এদেশের মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু সেই কাজই করেছে। আর আমার দুঃখ লাগে ২০১৮ সালে যখন ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন করলো আমি সাথে সাথে সেটা মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করে দিলাম। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে মামলা করা হলো সরকারের জারি করা পরিপত্র হাইকোর্টে বাতিল হলো। সেটার কিরুদ্ধে সরকার আপিল করলো। সেই সময়ে হাইকোর্টের রায়কে স্থিতাবস্থা দিয়ে তারা একটা সময় (সুপ্রিম কোর্ট) দিলেন। এই সময়ের মধ্যে সকলের বক্তব্য শুনে তারা একটা সিদ্ধান্ত দেবেন।
তিনি বলেন, ‘আমি কোটা আন্দোরনকারী থেকে শুরু করে দেশবাসীকে বললাম একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এটা তো সরকার আপিল করেছে, তাদের হতাশ হতে হবে না। সেই আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে বললাম বিরত থাকতে। একটু তো ধৈর্য ধরতে হবে। যেকোনো নগারিককেই তো আইন আদালত মেনে চলতে হবে। আর এই এর সুযোগ নিয়ে সেই ১৭ জুলাই থেকে যেভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো।’
তিনি বলেন, ’৭৫ এর পর ২৯টি বছর এদেশের মানুষ বঞ্চিত ছিল। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রীজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে গত ১৫ বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
তিনি প্রশ্ন করেন এগুলো কাদের জন্য? এই মেট্রোরেলে কি আমি চড়বো? আমাদের সরকার ও মন্ত্রীরা শুধু চড়বে না জনগণ চড়বে, এটা আমার প্রশ্ন। এর উপরকারিতা আপনারা পাচ্ছেন। এদেশের সাধারণ জনগণ পাচ্ছেন। তাহলে এটার ওপর এতো ক্ষোভ কেন? আমরা বার বার অনুরোধ সত্বেও কোটাবিরোধী আন্দোলন। আদালতের রায় নিয়েও আমরা বারবার কথা বলেছি, বোঝাতে চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মন্ত্রণালয়ের যারা এবং এই মেট্রো রেল নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত প্রত্যেকেরই চোখের পানি পড়ছে। এটা দেখে যে কীভাবে এই দানবীয় কর্মকান্ড হলো, আর কীভাবে করলো?
শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতেই কাজ করে যাচ্ছি এবং করেছিও। যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কী অবস্থা ছিল? আর আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের একধাপ উচ্চধাপে উঠে গেছে। সেখান থেকে নামাতে হবে কেন? আমার প্রশ্ন সেটাই।
বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। এই অ্যালাইনমেন্টে (মেট্রোরেলের) আমি পরিবর্তন এমনভাবে করে দিয়েছি যাতে দ্রুত সময়ে হয়।
এরআগে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তিনি। তিনি পুরো স্টেশন ঘুরে দেখেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত শুক্রবার মেট্রোরেল স্টেশনে তান্ডবলীলা চালানো হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে