‘রিমল মোকাবিলায় যাবতীয় কার্যক্রম মনিটরিং করছেন প্রধানমন্ত্রী’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় রিমল মোকাবিলায় যাবতীয় কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
রোববার (২৭ মে) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় রিমল মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার হতে পারে। তবে তা আরও বেড়ে ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাগরের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তবে জোয়ারের সময় হলে তা আরও বাড়তে পারে।
মুহিববুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, বাগেরহাট ও ভোলাসহ উপকূলবর্তী জেলাসহ সারাদেশে রিমলের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে। সারাদেশে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে দেশের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে পারে। রাজধানীসহ আশপাশের শহরগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। এই জলাবদ্ধতার জন্য ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। আবার রাস্তাঘাটের ওপর গাছপালা ভেঙে পড়ে যাতায়াতের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সকল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টানেল বন্ধ থাকবে। সকল ধরনের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমল মোকাবিলায় সরকার সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে গেছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সকল লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সামরিক ও বেসামরিক সকল যানবাহনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মেডিকেল টিমসমূহ প্রস্তুত রয়েছে। সামরিক বাহিনী ও নৌবাহিনীসহ প্রয়োজনীয় সকল বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় সৃষ্ট ভূমিধস থেকে লোকজনকে রক্ষা করতে ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে-এ কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরও সক্ষমতার সঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের যে কোনো ধরনের ধ্বংসলীলা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করি, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে এই ঝড়কে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারব।
অতি দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উপকূলবর্তী এলাকার লোকজনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা এখনই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন। ৭ থেকে ৮ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাবারসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঝড়ের সময় রাস্তার ওপর গাছপালা পড়ে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। অতি দ্রুত গাছপালা সরিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সচল রাখা হবে।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় কোথাও কোনো ধরনের ঘাটতি রয়েছে কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভা করলাম। আমরা যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সামরিক, বেসামরিক, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুহিববুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৮ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করা হয়েছে সেহেতু আমাদের লক্ষ্য হলো সকল মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে আশ্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু থাকবে। এ ছাড়াও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়কবলিত এলাকায় যেন আনঅ্যাফেকটেড এলাকার সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করতে পারে, সে জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে