জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। দেশের মানুষ প্রাথমিক যে স্বাস্থ্যসেবা পাবে, সেই সুযোগটা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে আমাদের জনসংখ্যা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় স্থবিরতা নেমে আসে। তবে বর্তমানে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৫ মে) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আইসিপিডি-৩০ গ্লোবাল ডায়লগ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে দীর্ঘ সংগ্রামের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে, নতুন জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করা হয়। বিশেষ করে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর জন্য সারা দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন কাজ শুরু করি। সেই সময় জাতীয় পুষ্টিনীতি কর্মসূচি নেয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ, নারী শিক্ষার বিস্তার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে ছিল আমাদের আন্তরিক প্রয়াস। এরপর আবার ক্ষমতার পালাবদলে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে। এরপর ক্ষমতায় এসেই কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। দেশের মানুষ যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাটা পাবে, সেই সুযোগটা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে জনসংখ্যা উন্নয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা নেমে আসে।’
এ সময় তার সরকারের টানা মেয়াদে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধান বলেন, ‘২০০৯ সালে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর আইসিপিডি প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনে ১৫টি মূলনীতি বাস্তবায়নে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি-২০১২ প্রণয়ন করি। মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যু হ্রাস, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক কর্মসূচি শুরু করা হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বন্ধ হওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আবার চালু করা হয়। বর্তমানে সারা দেশে সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এগুলোর মাধ্যমে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাসহ ৩০টি অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার ক্লিনিকে স্কিলড বার্থ অ্যাটেনডেন্স সেবা দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন ৩ হাজার ২৯০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র/পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক হতে মা, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২০০টি কেন্দ্র থেকে সার্বক্ষণিক স্বাভাবিক প্রসব সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রসূতিসেবা প্রদানের জন্য এসব কেন্দ্রে ৪ জন করে ধাত্রী নিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০১০ সালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমি ৩০ হাজার ধাত্রী নিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলাম। এর ধারাবাহিকতায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ২০ হাজার ধাত্রী নিয়োগ করা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, “মাতৃ স্বাস্থ্য সেবায় জরুরি প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করতে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা হয়েছে। ‘মা টেলিহেলথ সার্ভিস’-এর মাধ্যমে প্রসূতি মায়ের গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা প্রদানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মা ও শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৩ লাখ উপকারভোগীকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, শপিং মল, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র’ স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ বছরে এসব উদ্যোগের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২১ জন, যা ২০০৬ সালে ছিল হাজারে ৮৪ জন। একইভাবে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ২০০৬ সালের ৩৭০ জন থেকে ১৩৬ জনে হ্রাস পেয়েছে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে