রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে নতুন অংশীদার খুঁজতে হবে: আইওএমকে প্রধানমন্ত্রী
নতুন অংশীদার খোঁজার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাকে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও তহবিল সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক যে অংশীদাররা রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিচ্ছিল তার পরিমাণ অনেকটা কমে গেছে।
মঙ্গলবার (মে ০৭) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।
এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ তার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে ক্যাম্পগুলো অত্যাধিক ঘণবসতিপূর্ণ। মিয়ানমারে সংঘাত চলছে, ক্যাম্পগুলোর ভেতরে নানা দল উপদল আছে, গ্রুপিং আছে-তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত আছে। সে কারণে অনেক সময় তাদের মধ্যে সংর্ঘষ হয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, কক্সবাজারে এখন স্থানীয় জনগণই সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। রোহিঙ্গারাই সংখ্যায় বেশি। সেখানে যে সীমিত সম্পদ আছে তা নিয়ে অনেক সময় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষাণচরে সব ধরনের সুবিধা সম্বলিত অবকাঠামো তৈরি করেছি। সেখানে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা, বাচ্চাদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে। ওখানে আরও মানুষের আবাসনের সুযোগ আছে। সেখানে ১ লাখ মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা আছে।
ভাষাণচরে আরও রোহিঙ্গা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতা চান তিনি।
দুই দেশের অর্থনীতি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে প্রবাসী শ্রমিকরা-এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা যেহেতু দুই দেশেরই অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, উভয়েরই দায়িত্ব তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থাসহ বাংলাদেশ সরকার অনেকগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপ অভিভাসী শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন, ভাষা-সংস্কৃতি শিক্ষা এবং যে দেশে যাবে সেই দেশের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বিদেশগামী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাদের দক্ষ করে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এ লক্ষ্যে সারা দেশে প্রায় ১১২টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে নানা ধরনের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। আমাদের নদী ভাঙন, বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে মাইগ্রেশন হয়। তবে আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, উপকূল অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধী বাড়িঘর, বন্যাপ্রবণ এলাকায় ভাসমান বাড়িঘর করে দেওয়া হচ্ছে।
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য খুরুশকুলে বহুতল ভবন নির্মাণ করে প্রায় ৪ হাজার ক্ষতিগ্রস্তকে আবাসন ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
এ ছাড়াও দারিদ্র কমাতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে দারিদ্র্যের হার উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমিয়ে এনেছে। এখন অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। যদি আমরা দারিদ্র্য কমাতে পারি তাহলে অভিবাসনের তীব্রতা কমে যাবে।
সৌজন্য সাক্ষাৎকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে