পোস্টারে লেখা 'বড় ধনীদের অন্তর্বর্তী সরকার'
গভীর রাতে চার থেকে পাঁচজন লোক প্রবেশ করেন বাজারে। তারা বৈদ্যুতিক পোল ও দেয়ালে পোস্টার সাঁটান। পরে তারা চলে যান। বাজারের নৈশ প্রহরী হারুনুর রশিদেরও অজানা নেই যে তারা কারা। সেকারণেই তিনি আতঙ্কে নীরব।
ঘটনাটি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর বাজারে। গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২ টার দিকে ওই বাজারে যে চার-পাঁচজন পুরুষ সদস্য প্রবেশ করে পোস্টার সাঁটান, স্থানীয়রা জানান, তারা সর্বহারা পার্টির লোক। খবর পেয়ে পরদিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। এমন ঘটনা ওই এলাকায় একদম নতুন নয়। ভবানীপুরের অনেক বাসিন্দার পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির সদস্যদের সঙ্গে চলাচলও রয়েছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে সর্বহারা পার্টির এলাকা হিসেবে পরিচিত ভবানীপুর গ্রামের বাজারে গিয়ে দেখা যায় নিত্যদিনের মতই বাজারে বেচাকেনা চলছে। সেইসাথে চায়ের দোকানে আড্ডাও থেমে নেই। তবে কেউ মুখ খুলছেন না সেই পোস্টারের বিষয়ে।
বাজারে অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পে প্রবেশ করার গেট ভিতর থেকে তালা দেওয়া। কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়াতেই এক পুলিশ সদস্য গেট খুলে পরিচয় জেনে ভিতরে আসতে বললেন। তবে পোস্টারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। পরে তিনি ফাঁড়ির ইনচার্জ এর দায়িত্বে থাকা এসআই আব্দুল মালেককে ডেকে নিয়ে আসলেন।
এসআই আব্দুল মালেক জানান, সর্বহারা পার্টির সদস্যরা বাজার এলাকায় চার-পাঁচটি পোস্টার সাঁটিয়েছেন। ওই সময় বাজারের নৈশ প্রহরী সেখানে ছিলেন। তার মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনেছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ভবানীপুরের পুরো বাজার সিসি ক্যামেরার আওতায়, যা পুলিশ ক্যাম্প থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এখনো দেখা হয়নি বলে জানান আব্দুল মালেক।
এসআই আব্দুল মালেকের ভাষ্য অনুযায়ী, ভিডিও ফুটেজ দেখতেও এ বিষয়ে অভিজ্ঞ একজনকে ডেকে নিয়ে আসতে হবে। কাজ শেষে তার বিল আমাদেরই দিতে হবে। কিন্তু আমার কাছে এখন সেই টাকা নেই।
এ সময় আব্দুল মালেকসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের আচরণ দেখে স্পষ্ট হয় যে, এ বিষয়ে খুব একটা সামনে এগোতে চান না তারা। তারাও আতঙ্কে রয়েছেন।
এসআই আব্দুল মালেকসহ পুলিশ ক্যাম্পে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানান, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক সতর্ক থেকে এখানে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এই ক্যাম্পের এক পুলিশ সদস্য বলেন, আমরা খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া ক্যাম্প থেকে বের হইনা। আর বের হলেও সর্বহারা পার্টি নিয়ে কোনো কথা বলি না। কারণ এই বাজারে তাদের অনেক সোর্স রয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পের প্রধান গেট ভিতর থেকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।
ভবানীপুর বাজারে দেখা গেছে, সর্বহারা দলের নতুন করে সাঁটানো পোস্টারের শুরুতে লেখা আছে, ৫ম জাতীয় কংগ্রেস ২০২৪-এর ডাক। পরে লেখা রয়েছে, মার্কিন ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দালাল ও সেনা-এনজিও-বুদ্ধিজীবি-বড় ধনীদের অন্তর্বর্তী সরকার, শ্রমিক-কৃষক-সাধারণ জনগণের সরকার নয়। বিপ্লবী গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যাহত রাখুন। মাওবাদীগণ, ঐক্যবদ্ধ হন। পূর্ব বাংলার মাওবাদী আন্দোলনের ৫ দশক অভিজ্ঞতার সারসংকলন করুন। গ্রাম ভিত্তিক গণযুদ্ধ গড়ে তুলুন। মার্কিন-চীন-রাশিয়া ইইউসহ সকল সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ নিপাত যাক। মাওবাদ-জিন্দাবাদ, নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব-জিন্দাবাদ, গণযুদ্ধ জিন্দাবাদ। পোস্টারের শেষের দিকে লেখা রয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটি, পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি।
এর আগে, ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল (সোমবার) মধ্যরাতে ভবানীপুরবাজার এলাকায় টহল পুলিশের ওপর সর্বহারা দলের হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় সর্বহারা দলের লোকজন বাজার এলাকায় পোস্টারিং করছিলেন। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের টহল টিমের মুখোমুখি হন। তখন শেরপুর থানা পুলিশের তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নান্নু মিয়াকে গুলি করে চলে যান সর্বহারা দলের সদস্যরা। এসময় পুলিশও তাদেরকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। তবে পুলিশের গুলিতে সর্বহারা দলের কেউ হতাহত হননি। পরবর্তীতে সর্বহারা দলের সদস্যরা সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার দিকে চলে যান।
নতুন করে পোস্টারিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর থানা পুলিশের ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই। পুলিশ তৎপর রয়েছে। গতরাতে আমি নিজেই ভবানীপুর এলাকায় টহলে গিয়েছিলাম। সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। ভবানীপুর বাজারেও আমাদের পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে