বন্যা-পরবর্তীতে কৃষি পুনর্বাসন হোক প্রধান অগ্রাধিকার
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো। আকস্মিক এই বন্যায় এরই মধ্যে ভেসেছে ১১টি জেলা। তার আশপাশের জেলাগুলোতেও রয়েছে বন্যার প্রভাব। তাতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৩ জন। দুর্বিসহ ক্ষুধা আর রোগ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আরও অসংখ্য মানুষ। যারা পেরেছে, তারা অপেক্ষাকৃত উঁচুস্থানে, হাটে, স্কুলে, বাঁধে, বড় সড়কে কিংবা রেল স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছে। যারা পারেনি, তাদের চোখের পানি বন্যার পানির সঙ্গে মিশে হয়েছে একাকার। তাদের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। পুকুর পরিণত হয়েছে অথৈ শায়রে। মাছ, হাঁস-মুরগি, গৃহপালিত পশু ভেসে গেছে সবই। তাদের খাদ্যের অভাব, সুপেয় পানির অভাব, ওষুধের অভাব, কাপড়ের অভাব বন্যাকবলিত এলাকায় তারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কেউ কেউ আকাশের পানে তাকিয়ে তাদের সৃষ্টি ও পালনকর্তাকে ডাকছে।
সাধারণত বন্যা হয় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। অতিরিক্ত বর্ষণই বন্যার প্রধান কারণ। এবার বন্যা হয়েছে বিলম্বে, ভাদ্র মাসে। স্বাভাবিক বর্ষাকাল পেরিয়ে শরতের শুরুতে বন্যা। তবে বাংলাদেশের মানুষ ঘন ঘন বন্যা মোকাবিলা করে অনেকটাই অভ্যস্ত। এর সঙ্গে অভিযোজনেও পারদর্শী। এর আগে উনিশ শতকে এদেশে প্রলয়ংকারী বন্যা হয়েছে মোট ৬ বার। বিশ ও একুশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভয়াবহ বন্যা হয়েছে ১৮ বার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আমরা বড় বন্যা দেখেছি ১৯৭৪, ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৭ এবং ২০১৬ সালে। প্রতিবারই বন্যা শেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। এগিয়ে গেছে অর্থনীতি। এবার ২০২৪ সালের বন্যা-পরবর্তী সময়েও তার ব্যতিক্রম হবে না।
এবার দুর্গত এলাকায় বন্যার ভয়াবহতা বেশি হলেও এর ব্যাপ্তি তেমন বেশি নয়। দেশের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ এলাকা বন্যাকবলিত। অন্যান্য এলাকায় বন্যার তেমন প্রাদুর্ভাব নেই। তবে যেখানে পানি উচ্চতা বেড়েছে, সেখানে গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের সহায় সম্বল সবই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট সঙ্গী করে সেখানে বেঁচে আছে অসংখ্য মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে আছে ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট। এসব অঞ্চলে নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে বাড়িঘরে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, সেতু-কালভার্ট ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যোগাযোগ। থেমে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি। কৃষি বহির্ভূত ক্ষুদ্র্র কারখানা ও কুটির শিল্পও থেমে গেছে। অনেক স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট নেই। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। বন্যায় কৃষি খাতে যে মহা ক্ষতি হয়েছে তা খুবই দৃশ্যমান। অনেকে এলাকায় পাকা আউশ ধান তলিয়ে গেছে। রোপা আমনের বীজতলা, নতুন রোপণ করা আমন ধানের ক্ষেত সবই ডুবে গেছে। বিভিন্ন সবজি যেমন মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, পটোল, ঢ্যাঁড়শ, করলা, ঝিঙ্গা, বেগুন এবং মসলা ফসল হলুদ, মরিচ তলিয়ে গেছে পানির নিচে।
তেলজাতীয় ফসল চিনাবাদাম, তিল, সূর্যমুখী পানির নিচে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল আম, কাঁঠাল, লেবু, আনারস, কলা, পেঁপে, সফেদা, লটকন, ড্রাগন ফল সবই নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া মাছের ঘের বিনষ্ট হয়েছে। বেরিয়ে গেছে পুকুরে চাষ করা মাছ। বাড়িতে পালিত হাঁস-মুরগিগুলো মরে গেছে। গবাদি পশুগুলো খুব কমই বেঁচে আছে। গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক লোকসান অনেক বড়। এর প্রকৃত পরিসংখ্যান ও ক্ষতির প্রকৃতি নির্ণয় করা প্রয়োজন। তাছাড়া স্থানীয় বাজারগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আকাল পড়েছে। সব পণ্যেরই সরবরাহ কম, দাম বেশি। এই দুঃসময়েও মুনাফা লুটছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এখনো কার্যকর রয়েছে তাদের সিন্ডিকেট। স্থানীয় চিড়ামুড়িসহ বিভিন্ন শুকনো খাবারের দাম হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। এমনকি নৌকা নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতেও মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে দ্বিগুণ, তিনগুণ। এক মহাকষ্টে দিনাতিপাত করছে বন্যাদুর্গত মানুষ। অনেকেই বন্যাকে সমর্থন করেন। তারা বলেন, বন্যায় জমির উপরিভাগে পলি মাটির স্তর পড়ে। তাতে বেড়ে যায় মাটির উর্বরতা শক্তি। তাই বন্যার পর ফসল ভালো হয়। এক্ষেত্রে বর্ষা ও বন্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকে। বর্ষা এদেশে প্রতি বছরই আসে।
স্বাভাবিক বর্ষায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমি তলিয়ে যায়। তাতে পলি জমা হয়; কিন্তু বন্যা হয় মাঝে মাঝে, কয়েক বছর পর একবার। অনেক ক্ষেত্রে এর প্রধান কারণ থাকে উজানের ঢল। তাতেও ঘোলা পানি আসে পলিমাটি সঙ্গে নিয়ে। এ সময় জনগণের ভোগান্তি বেশি হয়। অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমা ছাড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে পুনর্বাসন খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। তা খুবই কষ্টসাধ্য ও বড় ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। বন্যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি নির্ভর করে এর স্থায়িত্বের ওপর। ১৯৮৮ সালের বন্যা আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ১৯৯৮ সালের বন্যারও স্থায়িত্ব ছিল প্রায় দুই মাস। এবার অল্প সময়ের ব্যবধানেই পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এর গতি খুবই মন্থর। বন্যার পানি সাগরে নামার পথে প্রতিবন্ধকতা, চরার সৃষ্টি ও নদীর নাব্য হ্রাস এর প্রধান কারণ। দ্রুত এর সুরাহা প্রয়োজন। বন্যার পর কৃষির পুনর্বাসনই আমাদের বড় অগ্রাধিকার। বন্যার পানি সরে গেলে জমিতে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ শুরু করে গ্রামের কৃষক। কারণ তার খাদ্য নিরাপত্তা দরকার। তাতে সে বিনিয়োগ করে বেশি। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ সময় সরকারি সহায়তা পেলে চাষাবাদে উৎসাহ বেড়ে যায় কৃষকের। অধিক উৎপাদন থেকে বাজারজাত উদ্বৃত্ত বেশি হয়। পণ্যমূল্য হ্রাস পায়। তাতে লাভবান হয় ভোক্তারা।
এবারের বন্যায় রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নাবি জাতের রোপা ধান যেমন ব্রি-ধান ২২, ব্রি-ধান ২৩ এবং ব্রি-ধান ৪৬ চাষের সুযোগ এখনো রয়ে গেছে। এখন ভাদ্র মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ অতিবাহিত হচ্ছে দ্রুত পানি সরে গেলে ভাদ্র মাসের শেষ নাগাদ বিলম্বিত আমনের চারা রোপণ করা যাবে। তাছাড়া বন্যার পানির স্থায়িত্ব ২ সপ্তাহের কম হলে এর আগে রোপণ করা জলমগ্নতা সহনশীল ব্রি-ধান ৫১, ব্রি-ধান ৫২, ব্রি-ধান ৭৯ এবং বিনা-ধান ১১ ও বিনা-ধান ১২ জমিতে টিকে থাকবে। শাক-সবজির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে হবে আগাম রবি ফসল আবাদের মাধ্যমে। পানি সরে গেলে অতি দ্রুত স্বল্প জীবনকালীন শাকসবজি যেমন ডাঁটাশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি উৎপাদন সম্ভব হবে। তেল ফসল ও ডাল ফসলের মধ্যে মাসকলাই ও সারিষা বিনা চাষেও জমিতে উৎপাদন করা যাবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফসল হলো সামনের বোরো ধান। মোট চাল উৎপাদনের প্রায় ৫৪ শতাংশই আসে বোরো ধান থেকে। এর জন্যও এখন থেকেই উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো রাসায়নিক সারের সীমিত সরবরাহ। বর্তমানে সারের যে মজুদ আছে, তাতে বড়জোর আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলতে পারে। রবি ফসল ও বোরো ধান আবাদের জন্য ন্যূনপক্ষে আরও ৪০-৪৫ লাখ মেট্রিক টন সার সংগ্রহ করতে হবে। এর জন্য আমদানির এলসি খোলা সহজতর করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে স্থাপিত পাঁচটি সার কারখানার কাজ চালু করতে হবে পুরোদমে। গত দুবছরে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সারের দাম ২ বার বাড়ানো হয়েছে। কারণ ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্যবৃদ্ধি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম হ্রাস পেয়েছে। তাতে অভ্যন্তরীণ বাজারেও সারের দাম হ্রাস করা প্রয়োজন।
কৃষকের চাষাবাদের খরচ মেটানো এবং বিনিয়োগে সহায়তার জন্য সহজ শর্তে কৃষিঋণ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। এক্ষেত্রে পিকেএসএফ এবং বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। বর্তমানে বন্যার্ত মানুষের প্রধান সমস্যা হলো নগদ টাকার অভাব। অথচ যে কোনো কাজে প্রয়োজন হচ্ছে নগদ টাকা। এই জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য দিতে হবে নগদ আর্থিক সহায়তা। আমাদের দেশে বিভিন্ন ত্রাণ কমিটি বন্যার্তদের পাশে গিয়ে সাধারণত কিছু শুকনো খাবার, পানি ও কাপড় দিয়ে থাকে। নগদ সহায়তা দেয়ার কথা তেমন ভাবে না। সরকারিভাবে এ ক্ষেত্রে কিছু নগদ অনুদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রায়ই কৃষি বীমার কথা বলে থাকি। তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
বন্যার পর নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। সাধারণ ভোক্তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। বাংলাদেশ এখন একটি উচ্চ মূল্যস্ফীতিকাল অতিক্রম করছে। গত জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির মাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। বিগত দশকের মধ্যে এটাই ছিল বড় মূল্যস্ফীতি। বন্যার কারণে এর মাত্রা আরও বাড়তে পারে। তবে এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিরোধক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে আমাদের মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে। তাতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে অদূর ভবিষ্যতে। তবে এর সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে কৃষি ও শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর। বাজারে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধির ওপর। এক্ষেত্রে চাঁদাবাজি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা দরকার। সামাজিক সুস্থিরতা নিশ্চিত করা দরকার।
বাংলাদেশে ঘন ঘন বন্যায় মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ লাঘব করতে হলে পানি কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে চাই। বৈরিতা দিয়ে তা সম্ভব নয়। সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্যই ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে ন্যায্য হিস্যা আদায়ের এবং বর্ষাকালে উজানের পানির তোড় থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় গ্রহণযোগ্য সমঝোতার পথ করে দিতে পারে। এর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কীভাবে আমরা বন্যা সম্পর্কে ভারতের আগাম সতর্কবার্তা পেতে পারি তারও পথ খুঁজতে হবে। সবচেয়ে বেশি দরকার বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কতা বিষয়ে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরি করা। এ-সংক্রান্ত গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। বিভিন্ন সময় বন্যা ও ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়ে যেসব বার্তা প্রেরণ করা হয় তা যাতে সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত।
আবহাওয়া উষ্ণায়নের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি সেই প্রচণ্ড উত্তাপ আমরা অনুভব করেছি। তাছাড়া এল নিনো এবং লা নিনার প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের এক প্রান্তে বন্যা হচ্ছে আর অপর প্রান্তে ফসল পুড়ছে দারুণ খরায়। তাতে বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। জাতিসংঘের দুর্যোগ হ্রাসবিষয়ক দপ্তর (ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন-ইউএনডিআরআর) পূর্বাভাস দিয়েছে যে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। এ বিষয়ে ২০১৫ সালে জাপানের সেন্দাই শহরের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে দুর্যোগের ঝুঁকি প্রশমনে টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত ২২ আগস্ট ২০২৪ সালে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে সেন্দাই ফ্রেম ওয়ার্কের লক্ষ্য থেকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো সরে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা এবং আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলা ও ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম জোরদার করার জন্য তাগিদ অনুভব করা উচিত।
বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এদেশে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন ও পাহাড় ধসের মতো বড় দুর্যোগ প্রায়ই আঘাত হানছে। তাতে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। অনেক প্রাণহানি ঘটছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে বিস্তর। এর পরিসংখ্যান হালনাগাদ সংরক্ষণ, দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস ও অভিযোজনের পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের জন্য বাজেট প্রণয়ন, অর্থায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন ইত্যাদি এখন সময়ের দাবি। এ সকল লক্ষ্য অর্জনে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করা উচিত।
ড. জাহাঙ্গীর আলম: পরিচালক, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস এবং সাবেক উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে